তন্ময় ধর
সবুজ রঙের একটা শব্দ
সবুজ
রঙের একটা কান্না আমাদের শব্দের দিকে ছুটে আসে। আমরা চুপ করে থাকি। তোমার আঙুলে
ভিজে ওঠে অন্ধকার। কাদামাটি থেকে আস্তে আস্তে শুকিয়ে উঠছে এত প্রাণস্পন্দন,
বালিহাঁস ও প্রতিশ্রুত জল।
জলের
ছবি আমার চোখে লাগছে বারবার। মাতৃতান্ত্রিক এক বুদবুদ থেকে ঘুমের ভেতর সন্তানের
মতো সরস্বতী খুঁজছেন অরেলস্টাইন। তুমি মৃত্যুর মতো আমার সভ্যতাকে মিষ্টান্ন
দিচ্ছো। নোনতা মাটির আলোয় সময়হীন হেঁটে চলেছি আমরা
কৃষ্ণসার
এক যৌনতা ও জাতিস্মরতার দিকে বেড়াতে এসে আমরা ফ্রুট জ্যুস খাচ্ছি। স্বাদের খুব
হালকা ফারমেন্টেশনে ঝুঁকি নিতে পারছে না আমাদের সন্তান। অর্ধেক মিউজিয়ম থেকে আমরা
আবার হাসাহাসি শিখে ফেলছি।
নীল রঙের একটা শব্দ
আমাদের
প্রেমের বহু আগেই সেই নীল রঙটার খবর রাখতে শুরু করেছি আমরা। স্মৃতিভ্রংশ গুগল
ম্যাপ খুলে বারবার অসাড় হয়ে যাচ্ছে আমাদের আত্মপরিচয় ও বৃষ্টি। আয়নার লেখাগুলো
কাঁপা কাঁপা হাতে মুছে ফেলি আমরা
ওই
দেহবোধ পর্যন্ত তোমার দেশ ও জীবাশ্মের গল্প শুনছে মৃত সন্তানের দেয়ালা। অল্প হাসির
দুধ থেকে ল্যাক্টোমিটারে আমি প্রেমের চিত্রনাট্য লিখছি। তোমার মুখে চড়া মেক-আপ
দরকার। বিউটিশিয়ান ঘাম মুছছেন
ভ্রুণহত্যার
একটা খেলা লুকিয়ে পড়ছে ওষুধ ও খাদ্যতালিকায়। ড্রাইফ্রুট খেতে খেতে আমরা বাণিজ্যিক
প্রেমের সেলফি তুলে হেসে উঠছি। পরে সেই ছবি দেখে নীল নৈঃশব্দ্য খুবলে তুলে নিতে
এসেছেন রাষ্ট্রদূত। সে রাষ্ট্রদূতের কথায় গুলিবর্ষণ শুরু হয়েছে দূরে, অচেনা
সীমান্তে।
লাল রঙের একটা শব্দ
আমাদের
রাজনৈতিক স্বীকারোক্তির আইসক্রিম গলে পড়ছে ইতিহাসে। শক্তিতন্ত্রের শীর্ণ মন্দিরে
অশথের শিকড় এলোমেলো করে দিচ্ছে সব হিসেব। মহাপ্রসাদের মাংস চুরি করে দৌড়তে লাগল
অন্ধ দেবশিশু
রূপ
থেকে প্রতিরূপে আমরাও ওর পেছনে ছুটলাম। অনেক পরে লাল রঙের একটা শব্দে আমাদের ঘুম
ভেঙে গেল। অন্য ভাষায় কথা বলছে গর্ভজাত অঙ্কুর। ঘুমের দিকে স্থির চোখে চেয়ে আছে
শাদা বক
আমরা
ওষুধের অর্থ পালটাচ্ছি। রক্তপরীক্ষার পর আস্তে আস্তে ভেঙে দিচ্ছি মৃত্যুর আঙুল। একটা
শূন্যস্থানে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের কান্না ও পরবর্তী আকর্ষণ।
বাদামী রঙের একটা শব্দ
মাংসের
স্বাদ থেকে আমরা আস্তে আস্তে আত্মগোপন করছি। শিশুর মতো স্কেচে ঘুম-ঘুম একটা শব্দকে
রেখে আসছি জনশূন্য পথে। রান্নাঘরেও কিছু নেই, শুধু বাদামী একটা শব্দ ছাড়া। আমাদের
প্রেমপত্র অনেক আগেই ফাঁস হয়ে গিয়েছে।
তবু
আমি ট্যিউশন নিই। মৃত শিশুর মতো এক একটা অক্ষর সাজিয়ে তীব্র একটা প্রবন্ধ লিখে
ফেলি। আর একটা গাণিতিক ধাঁধায় তোমার কাদামাটির পিরিয়ড শেষ হয়। গ্র্যানাইট,
মার্বেল, ল্যাটেরাইট- তীব্র শব্দে ভেঙে যায় আমাদের দিনমজুরি
আমরা ইতিহাস।
প্রেমের গল্পটা আবার বলতে বলতে অবেলার পান্তাভাত-পেঁয়াজ-কাসুন্দি দিয়ে ভরপেট খেয়ে
ফেলি। দূরের স্কুলে ছুটির ঘন্টা বাজে। মৃত শিশুর হাসি হৈ-হৈ করে বেরিয়ে আসে
রাস্তায়।
শাদা রঙের একটা শব্দ
বরফের
কথা শুনতে শুনতে একদিন আমাদের মধ্যে ঢুকে পড়ল শব্দটা। শব্দোত্তর একটা যন্ত্রণার
মধ্যে তুমি কান্না জমাতে শুরু করলে। সে কান্নার রঙে আমাদের গৃহস্থালিতে দেবশিশুর
মতো একটা দাগ পড়ল
রঙের
ভিতর অন্যরকম আঁচড় লাগল। দেবশিশু আমাদের ভেঙে দিল। দীর্ঘ প্রাচীরের মতো
আমাদের না-থাকা অস্তিত্বের গুনগুনানি ভেঙে দিল। সৃষ্টি ও দুগ্ধজাত সুর
নিয়ে আমরা ভ্রূণহত্যার ব্যাখ্যা করলাম।
তখন
বেশী রাত নয়। ধাত্রী-মাতা তবু আমাদের পথে আলো ধরলেন।