রীনা
তালুকদার
বেদনার বহু বাহু
১।
ছুটির আনন্দ অসীম
তৃষিত বেদনারা একটা রাস্তা
খোঁজে প্রত্যহ
বৃহস্পতি সবার ভাল যায় না
শনির রাহু লেগে থাকে করুণ
ললাটে
যা আপন মনে হয় আবেগে আবেশে
পর মুহুর্তেই স্বনর্ণালী
স্বপ্ন ঘোলাটে হয়
ছোট ছোট আঘাতে
পুস্পিত হৃদয় ভাঙে একদিন
দুর্গম পাহাড় ভাঙার শব্দে।
২।
কখনো স্বপ্ন দেখতে ভুলি না
মাঝে মাঝে ভুল স্বপ্ন
বিচ্যুতি ঘটায়
জোয়ার ভাটার জীবন জলে
তবুও ছক আঁকতে আঁকতে
সময়কে ভালবেসে ফেলি
অলস থাকা পছন্দ হয় না
কচ্ছপ দেখতে দেখতে
কিছুটা শিখে ফেলা কচ্ছপ গতি
তাড়াহুড়ো বলে বাস্তব জীবনে
আর কিছু নেই
কেবল মিসেস হওয়া ছাড়া।
৩।
বিবর্তনবাদ নিয়ে ঘুরে ফিরে
সময়
যা কিছু ঘটমান তা সংক্রমিত
সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায়
ব্যস্ত অলক্ষ্যে
নীল বিষ জারক রস মেখে শিল্পিত
হয়
শব্দ শব্দ খেলায় ব্যতিব্যস্ত
প্রসূতির ঘর জুড়ে নরপাপ
সহজিয়া সাধু বলে
এই খানে ফের জন্ম নেবো
কবিতায়।
৪।
চলমান নদীতে উত্তাল ঢেউ দিলে
স্থির থাকার সামর্থ হারায়
কত কিউসেক পানিতে
উচ্চতার জোয়ার কত
জানে না বায়ুমন্ডলের ঘনীভূত
মেঘ
নটরাজের মুদ্রা লুকিয়ে থাকে
ওষ্ঠ, অধরে, গলা, ঘাড়, করতলে।
৫।
সবকিছু নিয়েইতো সমতায় থাকা
সমঝোতা সমঝোতা রেওয়ামিল
জীবন জাবেদা অসম ভিড়ে
কচু পাতায় টলমল
তারপরও প্রাচীন পাখির শিস
দূর পাহাড়ের বুকে পরশের ডাক
সর্ষে ফুলের রেণু মেখে দিতে
চায়।
৬।
যে জলে অতৃপ্ততার নি:শ্বাস বয়
তাকে পান করে শুধু তৃষ্ণা
বাড়ানো
তাজমহলের ভেতরে
হাজারো শীৎকার জমা হয়ে আছে
একজন নরসুন্দর ঢের ভাল বন্ধু
হতে পারে।
৭।
ভায়োলিন শুনতে শুনতে যোগসূত্র
একটা উচ্ছৃঙ্খল মেঘ সুখের কথা
বলেছিলো
সেই থেকে দু’হাতের দশ আঙ্গুল
কার্পণ্য করেনি কাজ কর্মে
করতল ছুঁয়ে আত্মীয়তার গলাগলি
বাক্য বদল হয়েছে বহুবার
কী জানি কোন দুর্বিপাকে
খোলা আঙ্গুল গুলো
মুষ্টিবদ্ধ হতে পারেনি
কোনোদিন !
স্বাধীনতা
এমন এক সময় ছিলো
মনে হয়েছিলো কাউকে ভালোবাসা
পাপ
চেতনায় ভালোবাসার নিউক্লিয়াস
ছিল নিশ্চুপ
অনাকাঙ্খিত ভালোবাসার
তড়িৎ ঝড়ে ঝড়োসড়ো
এখন ভালোবাসার চেতন চোখে
বর্ণালী বসন্ত কৃষ্ণচূড়া
ফুটায়
অথচ কাঙ্খিত ঝড় চন্দ্রনাথ
পাহাড়ের
ভাঁজে আচড়ে পড়ে
হায় ! চন্দ্রাবতী অতল জলে
ডুবে অন্তর্হিত হবার
স্বাধীনতা শুধু তোমারই ছিলো
ঘাত প্রতিঘাতে দৌঁড়
প্রতিযোগিতায়
এই শতাব্দীর নারী এখন মাউন্ট
এভারেষ্ট
ছুঁয়ে পৃথিবী জয়ের স্বপ্নে বিভোর।
পাতা কুড়ানি
সেই পাতা কুড়ানি মেয়ে
জঠরের জ্বালায় ভুলে সব আদুরী
আহলাদ
বসন্ত তার উঁকি দেয় ছেঁড়া
জামার ফাঁকে
মনে করেই কী লাভ কত কত দাতা
চোখ
ঠিকানা বিহীন হাজারো স্বপ্ন
পোষ্ট হয়ে যায়
নিত্য স্নায়ুর
মনিটরে-সার্কিটে
কে দেখে তা মনে রাখে কে
ঝরা পাতার মূল্য কেবল
জ্বলন্ত আগুনে পোড়া
সেই পাতা কুড়ানী মেয়ে ভেসে
যায়
শ্রাবণ ধারার অথৈ জলের
বিজ্ঞাপনে
স্বপ্ন দীপ্ত স্বাধীনতা মুখ
ঢেকে কাঁদে নীরবে যথা তথা।
ভয়ংকর সংগ্রামের নাম
তসলিমা
নারী উন্নয়ন
দুটি নামই আসে ঘুরে ফিরে
একজন বেগম রোকেয়া
আর অন্যজন
তসলিমা নাসরিন
আর হয়েছে যা
এ দুজনের মুখের খড় বিচালি
নিয়ে
কেবলই জাবর কাটা
এরা দুজনের একেকজন
পৃথিবীর নারীকূলকে পাঁচশো
পাঁচশো
একহাজার বছর এগিয়ে রেখেছেন
সশরীরে তসলিমাকে
জন রাস্তায় আক্রমণ যারা করেছে
সাদা কালো নারী এরাও
কী বাহাদুরি হাততালি, হাসাহাসি
এই নারীরা জানে না
নিজেরাই করছে নিজেদের বস্ত্র
হরণ
তসলিমাকে আক্রমণ না করলে কী
হটকারীদের রাজনীতি থাকে !
তসলিমা আছে বলেইতো
বোবা নারীদের কথা বলা,
রাজপথে নেমে তসলিমাকে
আক্রমণ করার শক্তি হয়েছে
তসলিমার সংগ্রাম আর কিছু না
হোক
ঘর থেকে বেরিয়ে নারীরা
পিচঢালা রাস্তায় তাকে
এবড়ো থেবড়ো আক্রমণ করা তো
শিখেছে
মুখরা তসলিমা আছে বলেইতো
টিকে আছে নারীবাদীবৃক্ষ
আর সব ব্যানারভিত্তিক
নারীবাদী
এনজিও’র পকেটে আশ্রয়ে
তসলিমা না থাকলে তো পৃথক
ধর্মগ্রন্থ
পৃথক অভিধান, পৃথক দেশ
তৈরী হতো এতদিনে
নারীদের জন্য তসলিমা না থাকলে
পরকালের একটা স্বর্গও তৈরী হয়ে
যেতে পারে!
তসলিমা মানেইতো
ভয়ংকর এক সংগ্রামের নাম
তসলিমা আছে বলেইতো
রাজনীতিকের মনের মঞ্জিল হয়
পূরণ
তসলিমাকে আক্রমণ করাতেই
বিশ্ব দেখলো নারীবাদীর শিকড়
টিকে আছে
আগামী পাঁচশো বছরে
যত নারী জন্মাবে তাদের মধ্যেও
হয়তো
একটি নামই সবাই বলবে
তসলিমা নাসরিন
যেমন বেগম রোকেয়ার কথা বলে
একবিংশ শতাব্দীতে একটা মানুষই
শব্দ বিজ্ঞানের সঠিক ব্যবহার
করেছে
সে শুধুই তসলিমা নাসরিন
কেউ কেউ একটু আলোর ঝলকানি দেয়
সে আলোর কণা আর এগোয় না বেশী
সেদিন নয় বেশী দূরে
নারীরা বুঝতে শিখলেই
পরম যতেœ পড়বে
তসলিমার ‘ক’, নারীর কোনো
দেশ নেই,
লজ্জা, আমার মেয়ে বেলা
ঘাত প্রতিঘাত সয়ে আক্রমণের
পেট থেকে বেরিয়ে
তসলিমা জানান দেয় সে শক্তি
সামর্থ্যে এখনো বেঁচে আছে।
মৌরাশি
ছিট ভূমির হাহাকারে কাঁদে সিল
জমি
খাসমোমা থেকেও নোনাবাড়ী -
চক্ নিয়ে হাসফাঁস অস্থির
নিউক্লিয়াস
জোতদার পায়না প্রাপ্য তৌজি; সব মহাশূন্য
ফেরারী ভূমি মনে করার কোনো
কারণ নেই
হাওয়ালার চৌহদ্দীতে পাট্টা
বানিয়ে রাখার দিন খতম
মৌরাশি ভেবে চালা ভূমিতে
চর্চা জরিপ চালাও
হাওর-বাওড়-নয়নজুলির দুঃখ
বুঝবে কি
নাবালক মন তোমার কাছে মৌরসী
পাট্টা
দরপত্তনী কত দেখাবে
একমালিকানার আইন ?
মানুষ হতে পারিনি
মাঝে মাঝে নিজেকে মানুষ মনে
হয় না
নিরীহ গৃহপালিতদের সবংসহা
মেজাজে
থাকাটাই চতুর্দিকের পরিবেশের
ইঙ্গিত
যখন নিজেকে কিছুটা মানুষ
ভাবতে শুরু করি;
দুরন্ত ষাঁড়ের গোঁ কখনো কখনো
আমাকেও উন্মাতাল করে যায়
তবুও হামেশা চুপ থাকি
কার্তিক সময়ের কাছে সম্মান
বাঁচানোর দায়
ঘরে বাইরে শোভিত উদ্যানের
শোভা বর্ধনে
পুরনো ঐতিহ্যকে মায়ার আঁচলে
বেঁধে রাখার তাগিদে থাকা আরকি
মানুষ হতে না পারার ব্যর্থতা
মাথায় থাক
ক্ষোভের আগুনে রোপন করেছি
জলদবৃক্ষ
যার যা খুশি বলে যাও
নিশ্চিন্তে
হয়ত আদতেই ছিলাম না মানুষ
মানুষ হলে রাগ ক্ষোভ অভিমানের
অর্থ হতো যথার্থ ।
অজুহাতের রঙফিতা
পুরাতন নিয়ে ভাববার এখন সময়
কোথায়
ব্যস্ততর রুটিনে যোগ হয়েছে
নানান রকম
অজুহাতের রঙফিতা
এ ডালের পাখি ও ডালে ঘুরে
ঘুরে
বাহারী অনুভূতি খোঁজে
কচি শক্ত কি মাঝামাঝি
সব স্বাদের নুন চাখাচাখি
বা! বা! কেমন নাচ জানো পুতুল
রঙিন পুতুলের প্রেম নিয়ে
পুতুল পুতুল দুরন্ত খেলা
আয়ত্ব করেছ বেশ ভালোই
দুষ্ট বুদ্ধিও মাথায় তোমার
তাড়–য়া
টোপর লাগায় কে ?
পুরো সোনালী ধানক্ষেত যার
দখলে !