বুধবার, ২১ মার্চ, ২০১৮

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য


সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য

~:এভাবেই ফিরবো বলে:~

কিছু কিছু সম্পর্কের কোনো ভূমিকা হয় ন।
হয় না কোনও বিবর্তিত সংজ্ঞা বা কাঙ্খিত হিসেবের চুলচেরা বিশ্লেষণ - - -
অযাচিত আগাছার মতো জড়িয়ে যায় সুখ-অসুখের মধ্যবর্তী শেষ অলিন্দে।
কংক্রিটের দেওয়াল বেয়ে ঠিক সে পৌঁছে যায় অন্তরমহলের মণিকোঠায় একান্ত অগোচরে।
প্রত্যাখ্যান করার অবশিষ্ট চেতনাটুকু লুপ্ত হয়ে যায়।
শুধু বিভ্রান্তির সহজ সরল সত্যিটা মুখ লুকায় জীবনবোধের আড়ালে।

উষ্ণতা চেয়েছিলাম তোমার কাছে।
মাধ্যাকর্ষণহীন মৃত্যুর আগে তপ্ত ঠোঁটের নোনা স্বাদ চেখে দেখতে চেয়েছিলাম।
কিন্তু শরীরের প্রতিটি বাঁকে ভরে দিয়েছো শীতলস্রোত।

সঙ্গম তো এখনও করি রোজ, নিয়ে মাফিক।
কারণ সঙ্গমের কোনও ইহকাল নেই...



                      

~:দৃষ্টির ওপারে:~

শেষবারের মতো তোমার চলে যাওয়ার দিকে চেয়েছিলাম।
বিগত এগারো মাসের বেহিসেবি স্মৃতিতে ঝাপসা সবুজ।
উপচে পড়া নোনা স্বাদ কূল ছাপিয়ে নীড় খোঁজে।
বিষন্ন সন্ধ্যার মরা আলোয় ক্লান্ত দু'চোখ আটকে যায় তোমার ধূসর কুর্তার আস্তিন।
প্রথম লিপস্টিকের ঠোঁটছবি মিথ্যে বলে না---

এখনও রোজ খোলা ছাদের আলসেতে হাত রেখে ভাবি---
মাত্র কিছু সময়ের ব্যবধান;
সেকেন্ড, মিনিট,ঘন্টা অথবা আলোকবর্ষ দূরত্ব।
যদি একবার আড়ালটুকু পার করতে পারতাম
তবে আতরগন্ধী রাতশরীরে নীল চুম্বন আবার নামতে।

রাস্তা জুড়ে উড়ে যাওয়া খইগুলো বড় বেশি সাদা লাগছে আজ...




                       

~:প্রজন্ম :~

ভাবছি লিখব না আর কোনও ইতিকথা।
তোমার জন্য লিখতে চাওয়া যা কিছু অগোচরে ছিল,
তা আজ অন্ধ করিডোরে দিকভ্রান্ত---
দিনের শেষে,যখনই ফিরেছি নিজ অলিন্দে
একটা কালো বিষাদ, হিংস্র শ্বাপদ মতো কুরে খেয়েছে আমার হাড়কাঁটা।
পোড়া শবের গন্ধ বয়ে গেছে বাতাসে।

ফিরব না আর কোনও হেমন্তের ডাকে।
পাতাঝরার নির্জনতায় রেখে যাব আমার সমস্ত অলিখিত চুক্তি,
লীন হব অসম সমান্তরালে---

হয়ত কোনও শীতার্ত বিকেলে খুঁজে পাবে এই জীর্ণ কলমের ছোঁয়াচ।
বর্ণহীন দোয়াতে ইতিহাস হবে জৈবিক তাড়না;সমাহিত হব বিষাক্ত নীল সুন্দরে।
যাবার বেলা সাজিয়ে দিও উপেক্ষার রঙিন ডালি।
আর তোমার জন্য দিয়ে যাব নিষিক্ত ভালোবাসায় জড়ানো আমারই অস্তিত্বের নিউক্লিয়াস।




                        

~:প্রতিচ্ছবি :~

শব্দগুলো এখন বড় বেশি শরীরী।
অভিযোজনের সংঘাত দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর।
দুটি চাওয়া, কাঙ্খিত সময়ের মেলবন্ধনে ভারাক্রান্ত - - -
তুলির আঁচড়ে ক্যানভাসে ধরা দেয় চিরায়ত অবয়ব।
অতীত ঢেকে যায় ভবিষ্যতের দায়বদ্ধতায়,
বিশ্বাসের চোখ জুড়ে তখন বৃষ্টি নামে...




                    

~:ঋণী :~

প্রতিটি মৃত্যুর কাছে আমি একটু একটু করে ঋণী হয়ে পড়ছি।
যে জন্মের সার্থকতা আমার আদপেই কখনও ছিল না, 
তার দায়বদ্ধতা নিয়ে ভাবতে বসলে চতুর্দশ পান্ডুলিপির অপূর্ণতা থেকেই যাবে।
বিষাক্ত সিরোসিসের মতো যে যন্ত্রণা কুরে কুরে খেয়েছে আমায়,
আর রঙ পরিবর্তিত হতে হতে আমি ঘন নীল থেকে গহীন কাটোয়া
পর্যবসিত হয়েছি তার ইতিহাসটুকু তবে অজানাই থাক---

বন্ধ চোখের পাতায় রাখলুম নামে চুপিসারে রোজই।
মৃত্যুর কাছে আমি এখনও ঋণী হয়ে আছি...