রাজশ্রী
ব্যানার্জী
আলোড়ন
মৃদু আলোড়ন -
পায়ের পাতা ছুঁয়ে,
কশেরুকা বেয়ে ছড়িয়ে যায়শরীর
জুড়ে |
প্রতিরোধ শ্লথ হয়ে আসে,
জলপাই রঙা প্রশ্রয়রা চন্ঞ্চল |
চিবুক বেয়ে নেমে যায় অনারম্বড়
আবেগ
নিঃশ্বাসের বাষ্প ছড়িয়ে যায়
মুহূর্ত ঘিরে
এক সমুদ্র ভালোবাসা হয়ে প্রবল
উচ্ছ্বাসে বাঁধ ভাঙ্গে |
বিষাক্ত সাপের স্খলিত চলন
উতপ্ত লাভা ঝরায় কামুক হৃদয়ে |
শব্দেরা দিশেহারা,
সরব শুধু টিক টিক ঘড়ির
মুহূর্তেরা |
অযাচিত আবদার সংক্রমিত লোহিত
কণিকায়
কখন অজান্তে অভ্যাস হয়ে ওঠে |
জীবনের চুইয়ে পরা অনুভূতি
ভিজিয়ে দেয় নিঃশব্দ রাত |
সংযমের উত্থিত তর্জনী
ক্রমে শিথিল, দুর্বল হয়
মোহময়ী সন্ধিক্ষণ ঢেলে দেয়
আতরের সুগন্ধী |
মুহূর্তের জঠরে সম্পর্কের
উত্তাপ বাড়ে
নিঃশ্বাস ঝর তোলে সময়ের স্রোত
বেয়ে |
প্রহর পরিচয় শেষে
ক্ষয়িষ্ঞু মোমের রেশ টুকু
রেখে
জিরোতে থাকে স্বপ্ন |
নীল রাত্রির তরঙ্গে ধীরে ধীরে
স্তিমিত হয়ে আসে
প্রবৃত্তির নিবৃত্তি,
স্বপ্নেরা ভাসমান আগামীর স্রোতে |
অন্য বসন্তের গল্প
সে এক অন্য বসন্তের গল্প
কুলুঙ্গিতে তুলে রাখা হলুদ স্বাক্ষীরা |
বেপরোয়া বয়ঃসন্ধি
বেহিসেবি প্রেম |
সযত্নে তুলে রাখা নীল জামাটা
আজও তোমার পুরুষালী গন্ধ মেখে
|
আচ্ছন্ন বিকেলগুলোর পলাশ রঙা
আবেশ,
ছুঁয়ে যেত আমার ওষ্ঠ ,নিতম্ব |
বসন্তের হাওয়া বড় বেয়ারা
উড়িয়ে নিয়ে যেত উত্তাল সমুদ্রের মাঝ বরাবর |
ফেনাগুলো আমার শরীর ছুঁয়ে
ভেঙ্গে যেত, ছড়িয়ে যেত |
অজান্তে তোমার ঠোঁট স্পর্শ
করত
আমার অঙ্গ, উপাঙ্গ |
ছোট ছোট পাহাড়ি ঝরনা
কখন যেন জলপ্রপাত হয়ে উঠত |
সময় যেন বয়ে চলা নদী
অসতিত্ব ভেসে যেত একাত্বতার
স্রোতে |
মুহূর্তেরা জলছবি হয়ে অপলক
চেয়ে থাকত |
তোমার আঙ্গুল ছুঁয়ে বেজে চলত
আমার শরীর জুড়ে ইমনকল্যাণ |
চাঁদের আলোয় মিশে যেত
সিডাকটিভ নেশা
জন্ম নিতো ভালোবাসার অনাড়ম্বর
গল্পেরা |
আজও সে পথ দিয়ে যেতে চোখ চলে
যায় তোমার ঝুল বারান্দায়,
রেলিং-এর গায়ে তেমনই বেরে
চলেছে মানিপ্ল্যান্ট,
কাঠের ঘোরানো সিড়িটা তেমনই
উঠে গেছে
তোমার দোতলার ঘড়ে |
হয়ত সেই মস্ত পিয়ানোটা এখনও
তোমার হাতের ছোঁয়ায় আবেশ ছড়ায় |
শুধু আমি নেই
তোমার গল্পের পাতায়,
পলাশের আবেশে,
বসন্তের হাওয়ায়,
কিংবা
ইমন -কল্যাণে ||
হিজল গাছ
প্রলয় ফিরে গেছে সময়ের পথে,
স্নিগ্ধ বৃষ্টিধারায় ভিজে
গেছে পৃথিবীর উঠোন|
সদ্য - স্নাতা গাছগুলোর
দেহবল্লরী জানান দেয়,
তারা আজ যৌবনের উন্মাদনায়
উচ্ছ্বল |
ভিজে যাওয়া বিহঙ্গের ডানা
থেকে,
ফোঁটা ফোঁটা ঝরে পড়া
বন্ধুত্বের আমন্ত্রণ |
বর্ষীয়ান গাছটা
অর্ধচন্দ্রাকারে বেঁকে,
ছুঁতে চায় পৃথিবী |
যেন বৃদ্ধ কলেবর,
বয়সের ভারে নুইয়ে পরেছে |
ঘাটের কাছে ত্রিকোণ জমাট
কালচে সবুজ জায়গাটা
বৃষ্টির সবুজ ফোঁটায় হরিৎ রঙ
পেয়েছে |
বসুমতীর রজঃস্বলার পর্ব
সমাপ্ত,
যেমন প্রদক্ষিণের পথে পৃথিবীর
বার্ষিক গতি |
আকাশের জলদ বারি সিন্ঞ্চন,
মেদিনীর কামুক তৃষ্ণা নিবারণ |
এখন আষাঢ়ী ধানে ভরা ক্ষেত,
প্রথম পোয়াতীর আঁতুর ঘর |
হিজল গাছে বসে থাকা চাতক-
ফিরেছে বাসায়, চাতকীর সঙ্গমের আশায় |
নৈঃশ্বদের গায়ে অত্যাশ্চর্য
অশ্লেষারা,
কামুক উন্মাদনা ছড়ায় রাত্রি
জুড়ে |
আবিষ্কার
অলিন্দ্য ছুঁয়ে রাত
স্বপ্ন-নীল
আঙুলে আঙুল জোড়িয়ে,
বহুদিন পরে বুঝে নেওয়া আঙুলের
ভাষা
বাতাসের কানাকানি,
খবর পৌঁছেছে অন্তর-মহলে
তোমার শরীরে আছড়ে পরেছে,
কোপাই নদীর চাঁদ ধোঁয়া জল
হয়ত হারিয়ে যাবো রূপালী টিলার
চোরা পথে
দূর্বা ঘাস ছুঁয়ে যাবে দুরন্ত
ইচ্ছেরা
ভিজেছে ডাহুকের ডানা, ঝরে পরছে সন্মোহন
নাভি গাছ জুড়ে জলকেলি-সন্তরণ
ছোট ছোট মুহূর্তেরা স্ফুলিঙ্গ
চন্ঞ্চল
দেহ জুড়ে বেজে ওঠা বাঁশরির
নিবিড় কম্পন
ভাসন্ত শিলায় ভেসে যাওয়া নোনা
জলে
নতুন করে আবিষ্কার পাহাড়, উপত্যকা,বদ্বীপ
আমি আজ কলোম্বাস, ভাস্কোডাগামা, এলভারেস্ ক্যাবরাল
দিশার খোঁজে হৃদয়-নন্দন, জোনাক- আলোয় উত্সব যাপন
উত্সব শেষে সিঁদুর খেলা, ভোরের আকাশ পলাশ রাঙা
তৃপ্তির সিন্ধু শীতল পরশ,
মন জুড়ে ফোঁটা হাসনোহানা
জমা-খরচের আস্ফোট থাক-
ভালোবাসা খোঁজে আলোর ঠিকানা |
অগ্নিকন্যা
এক বুক স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে
উঠছিল মেয়েটা
মধ্যবিত্ত স্বপ্নগুলো যেমন
সীমিত, মুষ্টিবদ্ধ
একদম তেমন কার্পণ্য ছিলনা তার
স্বপ্নে |
আকাশ ছিল তার সীমা
হরিণ শিশুর উচ্ছ্বলতায়
তার স্বভাব টগবগিয়ে বাঁধনহারা
|
বুকের ভিতর আগুনটা জ্বলছিল
ধিক ধিক করে
সেই আগুনটা জ্বালিয়ে দিয়ে
গেছে তার বাবা |
সাধ করে মেয়ের নাম রেখেছিলেন
জয়ী |
রূপং দেহী, জয়ং দেহী, জশো দেহী, দ্বিষো
জহি |
বাবা বলতেন -
"মাথা
উঁচু করে বাঁচবি মা -
নিজেকে বেচবি না,
নিজের মধ্যে আগুন জ্বালা
সেই আগুন ছরিয়ে দে সবার মধ্যে
আর নিজে পুড়ে খাঁটি সোনা হোস |"
সে যখন অষ্টম শ্রেণীতে পরে
বাবা তখন মৃত্যু শয্যায়
একদিন শেষবারের মত 'জয়ী' বলে ডাকলেন
শেষবারের মত ওর হাতদুটো
নিজের শীর্ণ হাতে চেপে ধরলেন
শেষ বারের মত বলে উঠলেন,
"আগুনটা
জ্বালিয়ে রাখিস মা,
আগুনটা জ্বালিয়ে রাখিস "
তারপর সব চুপচাপ
বাইরে বৃষ্টির শব্দ
ঝিল্লির ডাক
মায়ের কান্নায় চেতনা ফিরেছিল
জয়ীর
তবু সে কাঁদেনি,
সেদিন থেকেই ঐ আগুন তার সঙ্গী
দারিদ্রতা নিষ্ক্রীয় হয়েছে
অসাহায়তা হেরে গেছে, ঐ আগুনের কাছে
আগুন শুধু ধিকি ধিকি করে
বেড়েছে
স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি
একে একে পেরিয়েছে এক একটা
আগুনের পথ
জ্বলেছে, পুড়েছে
অবশেষে আজ সে খাঁটি সোনা
আজ সে অগ্নিকন্যা
তার আলোয় উদ্ভাসিত হচ্ছে
আরো কত জয়ীরা
বাবার দেওয়া আগুন বুকে করে
বাঁচবে জয়ী |
জয় করবে অক্ষমতাকে
কলুষতাকে
সংকীর্ণতাকে |
আজও সে একান্তে শুনতে পায়
আগুনটাকে জ্বালিয়ে রাখিস মা
আগুনটাকে জ্বালিয়ে রাখিস |
আর বাবার উচ্চারিত সেই
স্ত্রোত্র -
অজ্ঞান তিমিরান্ধ্স্য
জ্ঞানান্ঞ্জন শলাকয়া-চক্ষুস উন্মিলিতং
যেন তস্মৈই শ্রী গুরুবে নমঃ |