বুধবার, ২১ মার্চ, ২০১৮

ইন্দ্রাণী সরকার


ইন্দ্রাণী সরকার


আদি শঙ্করাচার্য্য

সমুদ্রের ওপারে মায়ের আঁচল উড়ে যায়

জলের উপর এক পা এক পা এগিয়ে যাই

পায়ের তলায় পদ্ম ভেসে ভেসে ওঠে

ভাবি মায়েরই কৃপা বোধ হয়



পাশে দেখি স্বয়ং আদি শঙ্করাচার্য্য

তাঁর ঐকান্তিক আশীর্বাদে

বৃদ্ধা যুবতী হয়,

বিগতযৌবনের যৌবনপ্রাপ্তি হয়

সমুদ্রে পদ্ম ভেসে ওঠে



আমি হতবিহ্বল জলের উপর

ভাসতে ভাসতে ভাবি কাকে ছুঁই

মা জননী না কি গুরুদেবের পাদপদ্ম ?







ছত্রপতি শিবাজী

ছত্রপতি শিবাজী কুয়োর ধারে অবিশ্রান্ত দাঁড়িয়ে থাকেন

গলা বাড়িয়ে চাঁদের ছায়া দেখার জন্য অপেক্ষা

শরীরটা ক্রমশ: ফটোগ্রাফির ফিল্মের মত পাকিয়ে যায়



ও জানালা থেকে টুকি মেরে দেখেন চাঁদ এল কি না

রাস্তার ওপর বাহিনী নেমে আসে

চাঁদের মগজ ধোলাই হবে



শুঁয়োপোকার মত চারিদিক থেকে কিলবিলিয়ে

শুঁড় বেরিয়ে আসে, ধোলাই দিতে দিতে দেখা হল

কিছুদিন পর চাঁদ মাথা ঘুরে পড়ে গেছে



ডাক্তারনী ছুটে আসেন, কবিতার ঝাঁটা মারতে মারতে

চাঁদের ভূত ঝাড়ানোর প্রচেষ্টায়

ভূত যায় না, চাঁদ অর্ধমৃত পথে গড়াগড়ি খায় ||








অচিন আকাশে

রামধনু আঁকা অচিন আকাশে

 নীলাভ মেঘের ছায়া

 রামধনু ভাসে ঢেউয়ের মাথায়

 এ কি অপরূপ মায়া ।

অচিনপুরের হাওয়ায় ভাসে

 মধুর সুরে বীণা

 মন হয়ে যায় লীনা ।

 অনুপম সেই সুরের আবেশে

তোমার জন্য দুহাতে ভরি

 চাঁদের নরম আলো

 শিশিরে শিশিরে কানাকানি কথা

 তোমায় বেসেছি ভালো ।

আলোর মালা আকাশ পরে

 ছুঁয়ে যায় প্রতি ক্ষণে

 বেলী যূথিকার সুবাস মেখে

 লুকোই তোমার মনে ।।








মনের কথা

আধো রাতে আধো জোছনায় তোমায় দেখি

তোমার কোমল মুখখানি আর

আবেশে বুজে আসা নরম চোখের পাতা |



ভালোবাসা না পেলে তুমি মুষড়ে পড়ো

 দেখে আমার কষ্ট হয় কিন্তু চেপে রাখি

 তারাদের আলো দিয়ে তোমায় পুনর্জীবন দিই

তোমার কথা তোমায় বলতে চাই

 কিন্তু তার কোনো উপায় নেই

 তাই খাতার পাতায় আমার মন এঁকে নিই 

যদি কখনো সময় পাও চুপিচুপি

 তোমার নিজের দুনিয়া থেকে বেরিয়ে এসে

 পড়ে নিও আমার হিজিবিজি মনের কথা ||






মনস্তাপ

সকালের আলো গায়ে মেখে সে ধীর পায়ে আসে

 চোখে ঘুম ঘুম ভাব মুখে মধুর হাসি

অগোছালো চুলগুলো সরিয়ে নীরব তাকিয়ে বলে

 জানি না কেন তোমায় এত ভালোবাসি

 সে বসে আনমনা চেয়ে থাকে কত ভাবনা

 আমি তাকে দাওয়ায় নকশাকাটা আসন পেতে দিই

 অবশেষে কোনো কথাই খুঁজে যেন পাই না

 আমি চেয়েই থাকি তার পানে কত কিছু বলতে চেয়ে

 বালিহাঁস ভেসে যেতে যেতে জলে ঢেউ তুলে দিয়ে যায়

 উঠোনে একরাশ বকুল ঝরে যায় হাওয়ায় দোলে পাতা

 দূরে পাখিদের কিচির মিচির জলে টুপটাপ  ||