উদয় শংকর দুর্জয়
খোদাই শব্দের অবিনশ্বর
বিষাদ ভরা আকাশ রাঙা মুখ, ছলছল
যুবতী চোখে নিঃশব্দে নামে স্বচ্ছ ঢেউ
অনুরাগের বেহাগ,বাজে
অস্তরাগ-বীণা, চেপে রেখে শোক, ভাবছো এমন কেউ
রোজ খুলে দিয়ে স্লুইজ গেইটের ডোর, দমকা
ঠেলে ঢুকে পড়ে পূর্ণ আঁধার
সইতে সইতে দগ্ধা-বেদন বেনামী রাত্রি-ভোর, ডুবে যায় তাপ বিহ্বল সংসার
ভোরগুলো দাঁড়ালে বোতাম খুলে, ডানার
ওমেই জন্ম ন্যায় বিগলন সমীকরণ
রোদ্দুর এসে বারান্দায় দোল খেলে—দমকায় সরে যায় বুকের বহিরাবরন
ছয় তলার ছাদে- প্রাতে, মুগ্ধতা
ছড়াতে এসে বালিকা, ফেলে যায় প্রিয় নাকছাবি
এরপর শতদল ভেড়ালে ছায়া নৌকার পালে, জলরাশি
জমা রাখে যশোরের কবি
কেউ না জানুক, পড়ে ফেলুক
সে বাকলের গহনে খোদাই শব্দের অবিনশ্বর
গভীর হৃদয়াঙ্গমে বুঝবে, কতটা
আগুনে পোড়ালে হাত খাঁটি হয় কারিগর
ক্ষতচিহ্ন নিয়ে পাড়ি দেবে দিনান্তে কাঁটাতার
ধর্মীয় উন্মাদনায় ক্ষয়ে যাচ্ছে আমাদের জীবনের গতি।
অনুভূতির গরাদ ভেঙে ঢুকে পড়ছে প্রতিবেশীর রক্তচোখ,
লেলিহান শিখায় ছাই হয়ে যাচ্ছে সহমর্মিতার সব মর্মকথা।
বলতে পার!
কোথায় দাঁড়ালে, বড় ঘরের ঝলকানি আগুন আমার কপালে
লাগবে না?
কতদূরে ফেলে আসলে প্রাণের ঠাকুর! বৃদ্ধা মায়ের সাদা আঁচলে
লাগবে না
দাউদাউ অনল।
পুড়েছিল বাঁশখালির শিলপাড়া, পুড়ে গ্যালো
ঠাকুর পাড়া,
পুড়ে গ্যালো নাসির নগর,
পুড়ে গ্যালো সাঁওতাল পাড়া। আমার বুকের মধ্যে পুড়ে যাচ্ছে
সাতচল্লিশ,
একাত্তর,
একানব্বই, দুই হাজার ষোল, দুই
হাজার সতের। এই পোড়া ভিটেয় একদিন
উড়বে রঙিন ধুলো, উঠবে মাল্টিস্টোরেড বিল্ডিং জ্বলবে
লালা নীল বাতি।
পোড়া মনের দেয়াল, ক্ষতচিহ্ন নিয়ে পাড়ি দেবে দিনান্তে
কাঁটাতার।
একদিন ভিটেমাটি-তুলসীতলা–কলপাড়–রান্নাঘর–শখের উঠোন
সব মালিকানা বদলে নেবে। সৌহার্দের অস্ফুট শব্দ চাপা পড়ে
যাবে অতল অন্ধকারে।
মুক্তিযুদ্ধ, অসাম্প্রদায়িকতা, বাঙ্গালিত্ব, মমত্ববোধ, ভ্রাতৃতবোধের
এতটুকু অস্তিত্বও
থাকবে না টিকে। শুধু লোভ আর লালসায়, ভোগ আর দখলে
মগ্ন যে মস্তিষ্ক
সেখানে কোনোদিনও পৌছবে না সততার আর্তনাদ।
ধর্মীয় অনুভূতির জয়জয়কারে ছিঁড়ে যাবে সম্পর্কের
শেষ সুতোটুকুও। কফিনের শেষ পেরেকেই নিমজ্জিত হবে মিথ্যে
শপথের
সব অধ্যায়। নাম বদলে যাবে ঠাকুর গাঁও, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
কিংবা ময়মনসিংহের।
বদল হবে সব ঠিকানার। একদিন বদলে যাবে আদম শুমারীর গণনা
কৌশল।
বদলে যাবে রাস্তার নাম; রাম কিংবা
শ্যাম। একদিন অচেনা হয়ে যাবে আমার
অস্তিত্বের জন্মভুমি, একদিন
তোমাদের কাছে আমিও হয়ে যাব অচেনা, খুব অচেনা।
পূর্ণিমা বৃষ্টির প্রতীক্ষায়
ক্যাটেলিনা আইল্যান্ডের মত পূর্ণিমা ঝরুক
তোমার উঠোন জুড়ে, নামুক ফর্শা বৃষ্টি ধারার মত
জ্যোৎস্না কণা।
সে পূর্ণিমায় ভেসে যাবে দুরন্ত মেঘপুঞ্জ
কথার আয়োজনে আলিঙ্গন সেরে নেবে চারচক্ষু
দূরে আরও দূরে টেনে নেবে
যে
জ্যোৎস্নায় ভাসিনি কখনও
মাখিনি দু’হাতে রূপালী ঘ্রাণ।
প্রবল ইচ্ছার মায়াবি বর্ষণে চল ধরি হাত
ভিজি পূর্ণিমা বৃষ্টিতে বাহুতে তনুতে অপূর্ব ধারা
এই নিস্তব্ধ নিশিতে পড়ি ধারাপাত
শিখি বর্ণমালা তুলে আনি মহাকালের রাশিরাশি
মায়াবি শব্দমালা। সঞ্চয় প্রিয়সুর
তুমি দৃষ্টি রাখো অচঞ্চল, রোচে যাক
কিছু ভিন্ন অধ্যায়।
এমন পূর্ণিমা নামুক
কপোলের তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে জাগুক প্রাণ
মেতে উঠুক মন, নীল শ্রাবন ধারায়
ঘর ছেঁড়ে ছুটুক সবে জ্যোৎস্না পানে
মাখুক নিলোৎপলা নীল নীহারিকা সনে।
আসুক; যারা কখনও ছোঁয়নি এই স্পর্শ
এই নীল প্রলেপি রাতে নামেনি
যে মায়ের বারণ শুনে। মেখে নাও অঙ্গে
নীল কণ্ঠ ফুলের পরাগ
বেরিয়ে এসো প্রেমিকের হাত ধরে।
পূর্ণিমা জ্বালিয়ে দিক প্রিয় শখের বাগান
পুড়িয়ে দিক বিছানার চাদর
উড়ে যাক পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা তোমার কবিতা।
প্রত্যাবর্তন বলে কিছু নেই
তার কোনো প্রত্যাবর্তন নেই; কোনো
প্রত্যাবর্তন হয় না। সে এক
দীঘল জলদমেঘ পাড়ি দিয়ে ভিজিয়েছিল একদা ধ্যানীর গ্রহকাল, অপলক
সেই থেকে দ্বিধান্বিত সকালগুলো রোজ ভুলে যায় অনুতাপের
সৌন্দর্যস্তব
তরঙ্গরেখা। একবার সে খুলেছিল বোতাম; হেমন্তালয়ে
বেজেছিল কলরব
মুখর কঙ্কন-সংসার। তখন সাউথ অ্যাভিনিউ’র
সবকটি জানালা খুলে নীরব
সে দুরবীন চোখে বসে থাকত। টুকরো স্পর্শগুলো জোড়া দিতে দিতে
ফাটল মেঘপুঞ্জ হাতে নিয়ে অগণন বর্ষা ধুলো করে তুলতো, যেতে
যেতে।
তার কোনো প্রত্যাগমন নেই; জাস্ট
ওয়ানওয়ে জার্নি। ঝরিয়ে রোদের
অনুরাগ, কৃপণ আকাশ ভেড়ালে যৌথযান, বন্দরে
জেগে থাকা অন্তরিপার
অস্পৃশ্য-জন্মদাগ খোলস ফেলে উঠে দাঁড়াত। এমন করে কবে যে
কুয়াশা ভেজা ট্রেন ছিনিয়ে নিয়ে গ্যাছে সব সবুজ অ্যালবাম।
পড়েনি সে
একটি বারের জন্য, তুফান রোদ্দুরের বুকে লেখা
স্মৃতিভস্মের নাম
পদ্মগন্ধী নাভীরন্ধ্রে জন্ম নেয়া গন্ধরাজ, ক্ষয়ে
গ্যাছে তার অমূল্যদাম।
ফোটোসিনথেসিসের অভাবে পাঁজরের হাড়ে জমেছে হলুদ মানচিত্র;
তবে কি আযাচিত ধনুর্বাণে ছিঁড়ে গ্যাছে সম্ভাবনার সমূহ
হৃতসূত্র।
আর কোনো প্রত্যাগমন নেই; শুধুই
প্রস্থান। উদ্ভ্রান্ত জলরাশিতে ভাসছে কফিন।
স্তনবৃন্তে জমে থাকা ক্লান্ত শিশির যেন সব ঝরাপাতা জড়ো করে
অনুরজন
বিদায়ী পৌষের মিছিলে পেতেছে আঁচল। অঞ্জলিশুন্য নিরুদ্দেশের
বেহালায়
পুন্যবতী বৃষ্টির প্রতীক্ষায় উষ্ণঠোট, জমাট
বেঁধেছে আরও বেশি তৃষ্ণায় ।
তবু প্রত্যাগমনের এতটুকু আকাঙ্ক্ষা নেই। বিচ্ছেদের
ধুলো-আশ্রিত-দেয়াল
নিবিড় কোনো অন্ধকারে শুধু ডুবে যেতে চায়। মুদ্রাহীন হাতের
বাকল
যেখানে জেগেছে সমতট; রেখাহীন এই
শহর বাতিগুলোর মায়া ফেলে
নির্জীব প্রত্যাশার প্রহর পেরিয়েছে। আকাশের শরীরে সূর্য
পড়েছে হেলে।
তার পেরুবার কিছু নেই যেন আবার ফিরে যাওয়া বিন্দুতে
প্রত্যাবর্তনের কিছুই অবশিষ্ট নেই যেন হারিয়ে ফেরা প্রথম
সিন্ধুতে।
রাষ্ট্রের পড়েছে দায়
এখন রাষ্ট্রের পড়েছে দায় কে কার কাছে শোয়
এখন রাষ্ট্রের পড়েছে দায় কোন অঙ্গের চুল কতটা বাড়ছে ধায়
রাষ্ট্রের পড়েছে দায় কে যেন দেখছে গোপনে অশ্লীল ছবি তাই
রাষ্ট্রের পড়ছে দায় কমলার ঠোঁটে চুমু খেয়েছে পাগলা কবির ভাই
এখন রাষ্ট্রের পড়েছে দায় অনুভূতি টনুভূতিতে লাগলে আঘাত হায়
রাষ্ট্রের পড়েছে দায় মন্ত্রীরা খাইলে গালি পাবলিকের আর
রক্ষা নায়
রাষ্ট্রের পড়েছে দায় নড়লে বল্টুর নাট ঝুলিয়ে দেবে সাতান্ন
ধারায়
রাষ্ট্রের পড়েছে দায় কে যেন পায়নি পুরস্কার তেলমর্দনে আসে
আওতায়
শুধু রাষ্ট্রের পড়েনি দায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে ভবিষ্যৎ নষ্ট
হয়
রাষ্ট্রের পড়েনি দায় ত্বকী তনু--বিচার না হলে অপরাধ বৃদ্ধি
পায়
রাষ্ট্রের পড়েনি দায় সাম্প্রদায়িক হামলা হলে সম্প্রীতি নষ্ট
হয়
রাষ্ট্রের পড়েনি দায় মসজিদে বলাৎকার হলে ধর্ম প্রশ্নবিদ্ধ
হয়