বুধবার, ২১ মার্চ, ২০১৮

স্বপন কুমার দাস


স্বপন কুমার দাস

রক্তজবা

তোমার কালো চুলের আবেশে এক রক্তজবার পরিপাটি।
যা তুমি গেঁথেছিলে সযতনে কোন বিলম্বিত অভিসারের মুহূর্তে।
তবুও কি আশ্চর্য্য নীরবতা কাঁপা কাঁপা  ঠোঁট দুটিকে ছূঁয়ে ছূঁয়ে..
তোমার চোখের গভীর ঝিলে কত কাহিনীর স্রোতস্বিনী
স্মৃতির রাত্রিবেয়ে কত ঝড় যেন  বয়ে গেছে.
                                                           এখন একটু নিরিবিলি।
মধ্যাহ্ন সূর্যের শৃঙ্গার মেখে বইছে কোন নদী
খেয়ালই করোনি।
সেই কোন কিশোরীর ক্যানভাসে
কে যেন রঙে রঙে সাজিয়েছিল শিল্পী হতে চেয়ে
তার ঠিকানা  হয়ত পেতে চাও মনের কোন পুরানো বাক্সে।

নামছে গোধূলির আঁধারে
রক্তজবার সাথে শামলা রঙের খেলা।
নদীতীর।
বটের হাওয়া।
আঁচলে তোমার প্রজাপতি বেলা।








ফিরে এসো বসন্ত

তোমাকে স্পর্শ করার আগে
আরো একবার পবিত্র হয়ে নিই।
তোমাকে কিছু বলার আগে
আমার প্রতিটি শব্দের সাথে
নিজের অস্তিত্ত্বকে মিলিয়ে নিই।

দেবত্বের দিকে তোমার এক একটি পদক্ষেপ
ষেন আমার এক একটি পরাজয়।
এ তোমার কেমন অভিমান বুঝিনি আগে।
সব চপলতাকে রেখেছি পৃথিবীর সীমানায়
সব মুকুলিত শাখা, সবুজের সাথে হয়েছে পরিচয়।
বনফুলের দোলায় কোনো রাখালিয়া সুর..
                এবার বেঁধেছি একতারায়।

সহজাত পথে আবার ফিরে এসো তুমি,
রজোগুণে রজস্বলায়।
নইলে এ পৃথিবীতে বসন্তের আগমন থেমে যাবে।








মন

সব কবিতা লেখা হয়ে গেলে
রাত্রি নেমে আসে।
নীলআকাশ ঘিরে তখন অনেক তারার ক্ষত।
চাঁদ উঠে ম্লান..
     তোমার আবছা মুখের অবয়ব ঘিরে।
এক একটি বলিরেখায় আঁটকে থাকে-
বেশুমার ইতিহাস।

শরীর থেকে স্বর্গচ্যূত স্বপ্নের উত্থান পতন-
হয়ত এমনি সময়-
তোমার ঘরের দরজা ভাঙ্গবে
             কোন বৈশাখী শ্রাবণ।

আলগা আঁচল লুটিয়ে পড়ে..
হীরের বাক্সে সুখের চাবীর খোঁজ।
অনেক উপমার সামনে
ঋজুপায়ে পেরিয়ে যাও সব গোলাপ কাঁটার বন।

হয়ত জেনে গেছো
কার আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দিয়ে
শান্ত হাওয়ায় পুড়ছে তোমার মন।








কোন এক অনামিকে

অনেক নির্দয়ী সূর্যের মধ্যাহ্ন দুপুরে
একাই হেঁটেছো ছায়াহীন পথ।
তাই তো্মার এক একটি পদক্ষেপের সামনে
আমি শব্দহীন বসে থাকি।
তোমার শরীরের ভাঁজ বেয়ে বয়ে চলে রাস্তা।
চরাই উতরাই।
         নিশুতি রাত।
                 সব অকাল বোধন..
তুমি নগ্ন পায়ে মগ্ন গভীরে পেরিয়ে যাও আলপথ।
কখনো কিছু সবুজ মাঠ , কখনো ধূসর প্রান্তর।
অনেক পূর্ণিমা রাতে,
টুকরো টুকরো মেঘেও ঢাকে তোমার জোৎস্না।
সেই আবোছায়া আলোয়
একটি তারার দিকে তাকিয়ে
চেনা বন্দিশে গেয়ে চলো কোন গান।
আমি সহজাত বিস্ময়ে দেখি জীবনের কোন নিপুন শিল্পীকে..
একদিন এ পূথিবীর সীমানা ফুরাবার আগেই
যেন রেখে যাবে বনষ্পতির মত অনেক প্রতিশ্রুতি।








আমার আকাশ

কিছু ভাল না লাগলে কবিতার খাতা খুলে বসি।
মন খারাপেও তাই।
কবিতার খাতা খুললে ধীরে ধীরে কুয়াশা কেটে যায়।
কিন্তু ঝড়ের পূর্বাভাসে মেঘেরা আসে, বৃষ্টি হয়।
বৃষ্টি থেমে গেলে গাছপালারা আবার জেগে ওঠে।
ফল ফুল প্রজাপতি। সাগরের টানে নদীরা সব গর্ভবতী হয়।
ঋতুরা ফিরে ফিরে আসে।
সে যেন এক পরিপূর্ণ্ পৃথিবীর কাহিনী।
হঠাৎ খেয়াল হয় তুমি নেই পাশাপাশি।
তোমার খোঁজে, সেই পৃথিবীর রা্স্তা বেয়ে, পাকদণ্ডি ঘুরে,
আমি খূঁজতে থাকি তোমাকে।
এখানে ওখানে, কোন উদাস লিপটাসের বনে,
অশান্ত কোয়েল, নুড়ি পাথরের দেশে।
হয়তো নিজের ঠিকানা হারিয়ে একরাশ বনফুলের মাঝে-
তুমি বসে আছো একাকি।
সন্ধ্যা নামে।
আমার আকাশ জোড়া তুমি আর তারাদের আনাগোনা।
সেই তারাদের পথবেয়ে
তোমাকে একদিন ঠিক খূঁজে নেবো।      
তোমাকে ছাড়া বাঁচার অভ্যাস
কোন পৃথিবীই আমাকে শেখাতে পারেনি।