বুধবার, ২১ মার্চ, ২০১৮

জাকিয়া সুলতানা শিরিন



জাকিয়া সুলতানা শিরিন

প্রথম ফাগুনের সর্বনাশ

চল পালাই
অন্ধ সমাজ আর বর্বরোচিত
এই জনারণ্যের মাঝ থেকে। 
কী আর হবে?
বড়জোর দু'মাস-
ফাটিয়ে চলবে কানাঘুষা
আলোচনা সমালোচনা,
তারপর জাতি ভুলে যাবে সব।
জানিস?
বাঙালি ভুলতে খুব ওস্তাদ,
এক ঘটনার ফাঁকে
আর এক ঘটনা এলেই
ভুলে যাই পুরানো ইতিহাস।
যেমনি ভুলেগেছি
প্রথম ফাগুনের সর্বনাশ।





অস্তিত্বের আঙিনায়
          দ্রোহ

পরিশ্রম, অধ্যবসায় শব্দগুলো বড্ড সেকেলে
ও গুলোর প্রচলন নেই আর আজ।
যশ, খ্যাতি ছুঁতে চাই, নিমিষেই-
কোটিপতি হতে চাই কোটিপতি
এক গুলিতে।
দিনের পর দিন মাসের পর মাস অফিসের কাজ
কেমন জানি অভদ্রতা মনে হয় এখন।
জীবনের সব অর্জন, সুনাম
পেট্রোল বোমায় দগ্ধ  করতে
চারিদিকে ওৎপেতে আছে হায়েনার দল।
আমাদের চোখের দীপ্ত শিখা
একটা মোহ জালে আটকে গেছে।
তাকিয়ে থাকি কিন্তু  কিছুই দেখতে পাই না।
সুচিন্তা আর স্থির বুদ্ধি চলে গেছে নেপথ্যে
ওদের খোঁজার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে হবে।
হাহাহা কী বলছি, পত্রিকা?
ওগুলোতো এখন মল- মূত্র পরিষ্কারের
মোক্ষম অস্রে পরিণত হয়ছেে।
ওখানে বিজ্ঞাপন দিলে দূর্গন্ধ ছড়াবে
অস্তিত্বের আঙিনায় -





আত্মরচিত খুন

গতমাসে খুন হয়েছি আমি
বিচ্ছিন্ন ঘটনার অংশ হিসাবে
চললো একাধিক ময়নাতদন্ত।
খুন হয়েও শান্তি নেই-
হৃদয় কলিজা মস্তক হাতে নিয়ে
অনেক ঘাটাঘাটি কাঁটাছেড়া।
চারিদিকে নানান প্রপাগান্ডা 
'বড় ভালো মেয়ে ছিলো'
বেরিয়ে আসছে এর মধ্যে থেকে-
সাথে গুঞ্জনও আছে,  প্রেম পরকীয়া
ঘটিত বিষয় নয় তো?
ঝাঁকড়া চুলের এক বাউলের সাথে
ঘুরতেও দেখেছে ক'জনে -

গতিপথ খুঁজে পাওয়া গেলো
রোজ সকালে হাঁটতে যেতো
মেয়েটি বোটানিকাল গার্ডেনে।
চিরুনি অভিযান চলছে
বুট জুতোয় থেতলে যাচ্ছে 
সম্ভাবনাময় চারা গাছ, সবুজ ঘাস
আর শিশির বিন্দু, অবশেষে
পাওয়া গেল সেই চাঞ্চল্যকর তথ্য -

জানা গেছে মেয়েটি কবিতা লিখতো। 
এখানে, এই প্রকৃতির মাঝেই প্রথম পেয়েছিলো
গোলাপের গন্ধ, প্রেম, কবিতার উৎস আর
পরিপূর্ণ মানুষ হওয়ার স্বাদ। "
ক্লু খুঁজে খুঁজে , চুলের ক্লিপ, সেফটিপিনও
পাওয়া গেল পথে প্রান্তরে  -

সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত আসলোঃ
মেয়েটি একটি গোলাপ ছিঁড়েছিলো
কাঁটাও ফুটেছিলো আঙুলে।
কবিতায় জড়িয়ে  ছিলো
সে গোলাপের মৌ মৌ গন্ধ,
তাই মৌমাছিরা বাধ্য হয়েছিল
একটি খুনের স্বীকারোক্তি জানাতে।

আমি এখন উদয় ও অস্তের মাঝামাঝি
এক দিগন্তে, চলছে নিরন্তর ছুটে চলা
সেই কাঁটা ফোটানো গোলাপের পেছনে-





প্রথম  চিঠি

পুরাতন বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে
হঠাৎ থমকে গেলাম
এতো সেই অমূল্য সম্পদ,
সহস্রবার স্পর্শিত হয়েছিলো ওষ্ঠযুগল।
' প্রথম পাওয়া চিঠি '
সুগন্ধি রুমালের মতো
বুকের ভাঁজে রেখেছিলাম
এক যুগ।
যতোবার ছুঁয়েছিল
হৃদয়ের খাঁচায়
ততোঅক্ষর  আজও
লেখা হয়নি, কবিতার পাতায়।

তারপর অবচেতনে অঘোরে কখন
যে চলে গেল বইয়ের ভাঁজে
জানা নেই সে ক্ষণ একেবারে
তবুও মনে পড়ে,
সে প্রহর -
যেদিন তুমি হয়েছিলে
অষ্টাদশীর ঘোমটার আড়ালে
বিলিয়ে দেয়া স্বপ্নের দোসর-





সবুজ খুঁজে পাচ্ছি না

একটু রঙ দিবে রঙ?
একটা মানচিত্র আঁকবো
শুধুই একটু রঙ চাই, লাল রঙ।
সেই কবে থেকে বসে আছি
একটা স্বচ্ছ মানচিত্র আঁকবো বলে
কিছুতেই পারছি না।
না পারার কী যে দহন
বুকের ভেতরে অনুভব করছি
কে বুঝবে সে ব্যথা?
পঁয়তাল্লিশ বছর অপেক্ষায় আছি
ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইলব্যাপী
বুকের জমিন পেতে
একটা লাল বৃত্ত আঁকার জন্য।
ক্যানভাস, তুলি সবই আছে
আজ দেখছি পুরো জমিন
লাল রঙে ডুবে গেছে,
কোথাও সবুজ খুঁজেপাচ্ছি না।