চন্দ্রানী মিত্র বোস
স্বেচ্ছায়
নির্বাসনে যাওয়া যায়
অন্ধকার
যখন নেমে আসে এই পথটার ধারে
আমি
বড় ভয় পাই যে আজও...
অটল
অপার সেই নিঃসঙ্গতার মাঝে
বোবা কান্নার কিছু অস্থি আমি
সাজিয়ে
রাখি বারবার আমার না পাওয়া
সেই
রাতগুলোর কাছে...
স্বেচ্ছায়
নির্বাসনে কি যাওয়া যায় ..!
প্রশ্ন
করেছিলাম নিজের কাছে ...
আমার
সেই অতি আপন নারী সত্তা
কাল
রাতের গভীরে ডাক পাঠালো আমায়..
নির্বাসন
চাই নি তো আমি ..
বলেছিল
সে কাল রাতে ...
একরাশ
স্বপ্ন নিয়ে কি নির্বাসনে যাওয়া যায় ... !
হেসেছিল
বিধাতা না কি তুমি ...
আমার
সব স্বপ্ন আশা আর সেই
নূপুরের
রুনু ঝুনু ...
আমার
কিছু কান্না হাসি আর
তোমাকে
ভালবাসার ছোট ছোট একান্ত মুহূর্তরা
সব
মিশিয়ে দিলাম কাল রাতের অন্ধকারে....
একটু
একটু করে মিলিয়ে গেলো ওরা
আমার
এক ফালি আকাশে ...
স্বেচ্ছায়
নির্বাসনে যাওয়া কি যায় ...
উত্তর
নেই জানা ..
শুধু
বলে দিও আমায়...
সেই
শেষ উত্তর
মুক্তি
তো দিলাম তোমায় ...
স্বেচ্ছায়
নির্বাসনে হয়তো যাওয়া যায় ...
নিজের
পরিচয়
ছোট
থেকেই তো শুনে এসেছি মেয়েদের জন্য ভগবান এক অন্য সংবিধান রচনা করেছেন ...
তার
সুচীপত্রে শুধু নিষেধ বাণী.... এটা কোরো না ওটা করতে নেই ...
জীবনের
এই এক এক সিঁড়ি পার হতে হতে কখন যেন আষ্টেপৃষ্টে আরো জড়িয়ে যাই আমরা...
পারা..
না পারা আর না পাওয়ার পাহাড়ের নীচে কখন যেন একেবারে হারিয়ে ফেলি নিজেকে ...
ভুলে
যাই নিজের পরিচয় ...
নতুন
পদবী ,
নতুন উপাধি আচ্ছন্ন করে নেয় পুরো সত্ত্বা কে ...
বাবা
মার দেওয়া সেই ছোট্ট একটা আস্ত নাম পদবী শুদ্ধু হারিয়ে যায় ওই তেল হলুদের দাগ ধরা
আটপৌরে শাড়িটার আঁচলে।
ধীরে
ধীরে দিন কাটে ... বেলা বাড়ে !
মন
কোন এক ফাগুন দিনে উচাটন হয় আবার কি করে কে জানে ...!
ভেসে
যেতে চায় পুরোনো খোলস ছেড়ে ..
কোন
এক দুর্নিবার আকর্ষণে ...
নিজের
হারিয়ে যাওয়া 'আমি' রাতের ঘুম দিনের শান্তি কেড়ে নেয় ...
সেই
এক ঢালে বয়ে যাওয়া জীবনে একটু পরিচিতি খুঁজে পাওয়ার চেষ্টায় চুপিসারে চৌখাট পেরোয়
কেউ....
বাকিরা
তো রাবণের ভয়ে ওই লক্ষণরেখার এপারেই জীবন
কাটিয়ে দেয়...
চিতার
ধোঁয়া ওঠে ওপরে ... আরো ওপরে ...
আর
কি করে যেন সেই মেয়েটার আকাশ ছোঁয়ার
স্বপ্নটা পুরো হয়ে যায় .....
সমর্পণের_মানে...
রোজ
রাতে সমর্পণের আগে
উঁকি
মারে কাজলা সে এক মেয়ে ...
ঘর
চৌখাট পেরিয়ে এক ছুটে দৌড় লাগায় ওই খোলা আকাশের নিচে ...
আঁচলেতে
টান পড়ে ওর ...
ছিন্ন
ভিন্ন শরীর আত্মা আর সেই সমর্পণের স্বপ্নটা ...
ল্যাম্প
পোস্টের আলোটা নিজেই কি করে যেন পর্দার আড়ালে ঢেকে নেয় নিজেকে...
জোনাকিরা
পথ ভুলে আসে না আর.
রক্তাক্ত
একটুকরো সিঁদুর মেয়েটার মাথায়
লিখে
দিয়েছিল সে রাতে সমর্পণের মানে...
বেনারসীর
প্রতিটি জরির ফুলে খুঁজেছিল সে ভালবাসা সেদিন ...
সাত
পাকে ঘোরা মেয়েটা সাতজন্মের বিভীষিকায় তাই ...আজকাল ...
সিঁদুর
দান আর সমর্পণের মাঝখানের সেই 'কালরাত্রি' টা
খুঁজে বেড়ায় ঘরে মাঠে
আর
শরীরের আনাচে কানাচে ..
বোবা
নির্জীব সমর্পণ
হেরে
যায় রোজ নিস্তব্ধ রাতের কাছে ...
তবু
কেন কে জানে ...
রোজ
রাতে
সেই
অবুঝ মেয়েটা সমর্পণের মাঝে
নিজের
অস্তিত্বটাকে খোঁজে ...