অনুপম দাশশর্মা
জলের অবধূত
ঝাঁকে ঝাঁকে বৃষ্টি, এ-যেন
সমুদ্রবরণ।
বালিয়াড়ি খুঁড়ে জল বয়ে আনা
তুমি দেখছ দু'হাতে
লেগে যাচ্ছে বাষ্পফেনা।
মহীরুহ নত। নুয়ে পড়ছে ঝাঁকড়া মাথা
গাছ থেকে মাটি, মাটি
থেকে ভাঙা ব্রিজে
একে একে ঢেকে যাওয়া জলের আচমন
যেন বর্ষণের ঐতিহ্যসম্ভার।
প্রাচীন পুঁথি থেকে খসে পড়া ভগীরথ
জল আনতে আনতে হয়ে গেছে পাহাড়
পৃথিবী স্বয়ংবরা। বনজ ঘ্রাণ নিয়ে
বর্ষার অমোঘ অবতরণ।
সমস্ত বিপন্নতা সময়ের অমিত্রাক্ষর
ছন্দ
ভুলের কৈফিয়ত দিতে দিতে জীবন
উন্মাদ
তবু ক্ষত ঢেকে দিতে বাড়ছে জলের
সীমানা
এসেছে যে জলের অবধূত।
বিচ্ছেদের পর
বিচ্ছেদ ঘটে গেছে।
তোমার হাতে এখন চাঁদ ভাসে না
দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যবর্তী
সময়ে
তুমি গাঢ় বেদনার পোশাক ধারণ করো
এত আঘাত
এত নির্ঝর যাতনা
চোখ থেকে উপড়ে আসে
অন্তরের ভ্রুণ
খসে গেছে কবেই গর্ভফুল
সম্পর্কের শেষ অন্তরায়।
তোমাকে সামলে রেখেছে পবিত্র নীরবতা
জল প্রপাতের শব্দে
তোমার বিচ্ছেদ এখন বাঙ্ময়।
প্রাক-প্রাজ্ঞের হতাশা
জমি জন্ম নেবার আগে থেকেই
তুমি মহাসাধক
ছুঁয়ে দিলে জল, মায়া
ছড়ায় বাতাসে
শস্য মুখে নিয়ে হেসে ওঠে হরিয়াল
জমি বাঁধাই হয় রঙিন ফিতায়
তুমি তোমার নিজস্ব আয়নায় তুলে ধরো
কবিতার গতিপথ
আমরা খুঁটে খাই অক্ষরদানা
কপটতা শিখিনি তাই-
বারংবার পড়ি জয় গোঁসাই
তুমি আর কবিতা লিখছ না
আয়নায় গেঁথে রাখছ সংক্রামক হিংসা
কচি কবিতার মাথা তবু শ্রদ্ধায় নত
হয়
হতাশায় তুমি ঘুরে বসো না তথাপি।