অক্ষয় কুমার সামন্ত
শিরোনামহীন সংকল্প
শক্ত পেশীবহুল দুটো পা মাটিতে রেখে
ওই যে লোকটা লোহা পিটিয়ে পিটিয়ে
সিঁড়ি
বানাচ্ছে
তার কাছে গিয়ে যদি ছাদে দাঁড়িয়ে
আকাশ দেখার অভিজ্ঞতার কথা
জিজ্ঞেস
করো
তাহলে সে তোমাকে অত্যন্ত বোকা
ভাববে
বরং এক পা নেই অন্য পায়ের হাঁটুতে
অস্ত্রোপচার
করা
ওই লোকটার কাছে যদি জানতে চাও
তাহলে আমি নিশ্চিত আজ রাতে
ঘুমের
ভেতর
চাঁদে পাড়ি দেওয়ার স্বপ্নটাকে
তুমি আরো আগুনে সেঁকে ফেলবে।
তাহলে আজ আমরা এত হতাশ কেন?
ইচ্ছাশক্তি গুলো কেন মৃতপ্রায়?
আসলে দেখা হলে
যার কাছে যে প্রশ্ন করা দরকার
সেসব না করে
আমাদের মনের মধ্যে বানানো
ভালোবাসাহীন প্রশ্নগুলো
সবার কাছেই ফেলে দিই --
আর শেষে সভ্যতাকে
উন্মাদ বলে গালাগালি দিই।
মৃত্যু
আমার মৃত্যু সংবাদ পেলে
তুমি আর চমকে উঠবে না।
বেতন হতে না হতেই
বাজারের দেনা,
ফ্যাটের ইএমআই
ছেলের সেমিস্টার ফি,
মেয়ের বিয়ের জন্য সোনা
সকাল সন্ধ্যায়
তোমার দেওয়া ফর্দ নিয়ে
দু'হাতে বাজারের ব্যাগ
আর
প্রতিবেশীর প্রতি ঈর্ষায়
তোমার এটা চাই ওটা চাই...
এইসব ঘ্যানঘ্যান শুনতে শুনতে
আমার মস্তিষ্কের ডানা ভেঙ্গে গেছে
আর কবিতার খাতা একা হতে হতে
বিবর্ণ হয়ে গেছে
তুমিতো চমকাও নি --
অথচ সেসময়েই
আমার মৃত্যু হয়ে গেছে...
অনেকবার ভেবেছি
উপনিষদের মন্ত্র
উচ্চারণ করতে করতে
স্নান করবো
আবার জন্ম নেব নতুন করে
কিন্তু প্রতিবারই স্নানে ঢোকার আগে
তুমি শুনিয়ে দিতে
তোমার সন্ধ্যেবেলার ফিরিস্তি
আর মন্ত্রগুলো আমার
হতাশার অসন্তোষের নুড়ি কাঁকড়
বইতে বইতে স্নানের জলের সাথে
আমার গা দিয়ে গড়িয়ে পড়তো --
উচ্চারণ করা হয়নি আর..
মৃত্যু তো আমার সেদিনই হয়ে গেছে
যেদিন থেকে কলমে
আর কোন শব্দ আসেনি!
তোমার জন্য আকাশ
আমার কাছে তুমি কেমন
তার তুলনা করিনি আজও
তোমার কাছে আমি কেমন
তোমার মুখে শুনবো বলেও
শোনা হয়নি আজও।
ছায়ার ভেতরে ছায়া হয়েও
তোমার অস্তিত্ব জানানোর জন্য
তুমি যখন সূর্যের দিকে আঙুল তুলে
বলো,
তোমার কপালেও নক্ষত্র আছে
আমি তখন আবার নতুন করে কম্পাস
ঘোরাই
না, পালিয়ে যাওয়ার জন্য নয়
--
আমার ইচ্ছে গুলো দিয়ে
যতগুলো জ্যামিতি আঁকা যায়
তার সবগুলো দিয়ে তোমার জন্য
আকাশ বানাবো বলে...