পিয়া ব্যানার্জী
সেই পাগলিটা
সেই পাগলিটা,
আজ ব্রিজটার ধারে একলা বসে,
কত কিছুই না খুঁজে চলেছে।
ওর ঝুল মাখা ময়লা শরীরটা ছুঁয়ে
গেছে
বিকেলের কমলা রোদ,
ওর সারা শরীরে তখন ধুলোর আবীর।
ওর ঠোঁটের কোণে তখন
একচিলতে রোদের মাখামাখি।
ওর দুই চোখে তখন এক্কাদোক্কা, বুড়িবসন্ত।
হয়তো বা কোনো হলুদ গেরোস্হালির
স্বপ্ন।
ওর বুকে তখন নদীর পাড় ভাঙার শব্দ।
একখন্ড কাপড়ের ভিতর থেকে
কঙ্কালসার হাতটা মাঝেমধ্যে চেপে
ধরছে
ওর শুকনো বুকটাকে।
ওর ঠোঁট থেকে চুঁইয়ে পড়ছে
অজানা এক
হাসি।
সেখানে বিগত কয়েক বসন্তের
আবছায়া
খেলা।
ও
লুটিয়ে পড়ছে।
দ্যুলোক ভূলোক কাঁপানো সেই হাসি।
তারপর....
তারপর হঠাৎ কালো মেঘ......
কিউমুলোনিম্বাস।
একটা আদলা ইঁট নিয়ে ছুটে গেল
ঝড়ের গতিতে।
ছুঁড়ে মারলো ইঁটটা হয়তো বিধাতার
দিকে।
আবার ফিরে এল এক চোখ শ্রাবণ নিয়ে।
আঁকড়ে ধরলো ওর জীর্ণ পুঁটলিটাকে।
খুঁজতে শুরু করলো
পুঁটলির ভিতর বন্দী অতীত,
বর্তমান, ভবিষ্যতটাকে।
ঐ তো কী যেন একটা খুঁজে
পেল
ফ্রেমে বন্দী।
জেগে উঠলো মাতৃত্ব।
ওর গলায় তখন ঘুমপাড়ানি গান।
কখনো ডান হাতের তর্জনী টা ঠোঁট
ছুঁয়ে
শহুরে কোলাহলকে স্তব্ধ করতে চাইছে।
ওর খোকা যে এখন চির ঘুমে কাতর।
তোমরা কেউ ওর খোকাকে জাগিও না।
ওকে একটু ঘুমতে দাও......
একটু ঘুমতে........।।
নীরবতা
নীরবতা কথা বলে,
মনে মনে ,সংগোপনে
শুনতে কি পাও?
ওরা আঁচড় কাটে
ক্ষত বুকে, আত্মসুখে
বুঝতে কি চাও?
ওরা একখন্ড মেঘের মতো ভেসে বেড়ায়
কখনো বা বৃষ্টি ঝরায় আমার শুষ্ক
মনে।
ওরা গনগনে আগুন জ্বালায় আমার বুকে
ঘুমন্ত বুকে জেগে ওঠে ভিসুভিয়াস।
ওরা বাণ ডাকে, ওরা
প্রলয় আনে
তোলপাড় করে একূল ওকূল,
ওরা শব্দ খোঁজে, কবিতার
জাল বোনে
নিঃশব্দে এক নীরব কবির জন্ম দেয়।
আমার বুকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ওরা,
ঘ্রাণ নেয় আমার শরীরের,
আমি ওদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরি,
কানে কানে বলি ভালোবাসি তোদের।
নীরবতা আমার ভাষা বোঝে,
আমার না বলা কথার সাথে ওদের
সখ্যতা।
আমার জারজ যন্ত্রণাগুলো ওদের হাতের
ছোঁয়া পায়,
ওরা আমার একাকী রাতে দেয়ালা করে,
আমার উন্নাসিকতাকে ওরা ভয় পায়,
ওরা আশ্রয় খোঁজে, মুখ
লুকায়
আমার স্যাঁতসেঁতে ভালোবাসায়।
আমার চেতনায় রঙ মেশায়,
ফাঁকা ক্যানভাসে স্বপ্নের ছবি
আঁকে।
ওরা আমার সাথে অন্ধকারে রাত কাটায়,
আমার সাথে ওরা রোদ্দুর মাখে,
আমার সাথে এগিয়ে চলে চুপকথার মৌন
মিছিলে।
ক্ষুধার্ত
শহরে
তখনও সন্ধ্যা নামে নি,
পরিযায়ী সুখটা তখনও বিকেলের কমলা রোদ মাখে, নিষিদ্ধ
পল্লীর গলিটা বর্ষাতির নীচে তখন মিথ্যা শ্রাবণ ঢাকে। ঘোলাটে হ্যালোজেনের নীচে
বিবস্ত্র মেয়েটার শুকনো স্তনে মুখ গোঁজে কোলের শিশুটা। ডাস্টবিনের ধারে পড়ে থাকা কঙ্কালসার পাগলটার
মুখ বেয়ে নেমে আসা কষে তখনও মাছিগুলোর ভনভনানি। ওরাও ক্ষুধার্ত। দেহ ব্যবসায়ী
মেয়েটা তখন আয়নার সামনে গত রাতের কালশিটে দাগটা নিপুণ হাতে ঢাকতে ব্যস্ত। ক্রমশঃ
শহরের রাস্তায় ছায়াটা আরো কালো হতে থাকে। সুগন্ধি আতর আর বেল, জুঁইয়ের সুবাসে ধীরে ধীরে চাপা পড়ে যায় আস্তাকুঁড়ের পাশে অভুক্ত মরা
কুকুরের গন্ধটা। জলসাঘরে আবেগী সানাই আর এসরাজের বেহাগী সুরে মিশে যায়
দেহপসারিনীর করুন আর্তি। বহু যত্নে ঢাকা একখন্ড কাপড় সরিয়ে একদলা মাংসের উপর তখন
ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্ষুধার্ত কুকুরের দল। ছিন্ন ভিন্ন শরীরটায় রক্তের স্বাদ পায়
কুকুর গুলো। গা গুলিয়ে ওঠা গন্ধটা ভুলে
মেয়েটা কালশিটে হাতটা তখন বাড়িয়ে থাকে একমুঠো কাগুজে নোটের দিকে, কারণ মেয়েটাও যে ক্ষুধার্ত