সান্তনা সাহা
সম্পর্ক
সম্পর্কের থার্মোমিটারে পারদ ক্রমশ
নিম্নগামী।
হৃদয় অলিন্দে পলেস্তরা খসার
প্রাচীন শব্দ..
মনের ওয়ার্ড্রোবে সাজিয়ে রাখা
অনুভূতিগুলো
আজ বড়ই বেনামী,বর্ণচোরা...
কার্বনঘেরা উচ্ছ্বাস আর
সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত
স্বপ্ন দিয়ে ভরা ফুসফুস নিয়ে কি
আলো ছোঁয়া যায় বলো?
পাবে না জেনেও ,না
পাওয়াকে পাওয়ার আশায়
মন ছুটে চলে রুটিনমাফিক।
না পেয়েও আবার তাই চেয়ে যায়,
আরবার,বারবার...
বানভাসি ইচ্ছের রশ্মিগুলো রোজ কড়া
নেড়ে
বিফল মনোরথ হয়ে ফেরে...
কারও কাছে চাওয়া পাওয়ার অঙ্ক অমিল।
আমি তো দেখি চাওয়াগুলোই বড় দ্রুত
পাল্টায় , একটা
ছোঁওয়ার আগেই...
তবে কি অনিশ্চিত চাহিদা আর অচেনা
অনুভূতির
অনুপাতই গড়বে, সম্পর্কের
রসায়ন?
শুধু একটু বৃষ্টি দেখব বলে
মেঘের চিঠি উড়িয়ে দিলাম আকাশখামে
ভরে,
নীলসীমানায় চিঠিরা সব স্বপ্ন হয়ে
ওড়ে।
স্বপ্ন কিছু মাখিয়ে দিলাম অমলতাসের
ডালে,
শুধু একটু বৃষ্টি দেখব বলে...
জ্যোৎস্না চাঁদের চুঁইয়ে পড়ে
রাতের চরাচরে,
আকাশমাণিক জ্বালল জ্যোতি শুকনো
চোখের
পাড়ে।
চোখের কাজল মাখিয়ে দিলাম চাঁদের জ্যোতির
আলে,
শুধু একটু বৃষ্টি দেখব বলে...
চাতকের সুর মিশিয়ে দিলাম অভিমানের
সুরে,
চাপা আবেগের বাঁধটি ভেঙে ভাসাই
মেঘের 'পরে
মনকেমনের ভেজা বাতাসকে দিই উড়ো
চিঠি
খুলে,
শুধু একটু বৃষ্টি দেখব বলে...
বোজা চোখ বেয়ে কাঁপা অধরের পথটুকু
করি
পার,
হৃদয়ে শতেক স্বপ্ন জ্বালে নতুন
অঙ্গীকার।
অবাধ আবেগকে প্রশ্রয় দিই তোর সজল
চোখের
কোলে,
শুধু একটু বৃষ্টি দেখব বলে....
দগ্ধ গ্ৰীষ্ম
তোমার আগমন ছিল অনেকটা
গ্ৰীষ্মের মত....
বসন্তের বিলাসিতার ছিটেফোঁটা,
কখনও পাইনি তোমাতে.....
রূঢ়,কঠোর বাস্তব নিয়ে,
মাঝে মাঝেই হানা দিতে,
আমার বিছানো গালিচায়....
আর তখন এককোণে লালিত কোকিলটা,
কেঁপে উঠত জানো?.....
জানি আমি সব...বাস্তব বড় কঠিন,
বসন্ত সেখানে ব্রাত্য....
কিন্তু সূর্য থেকে দূরে থাকলেও
যে তাকে অনুভব করা যায়,
বরং আরও বেশি ভালোবাসা যায়,
তা কি তুমি বোঝো না.....
জোর করে কাউকে অনুভব করানো,
পাপ, জানো না তা?.....
তাই আজ দগ্ধ গ্ৰীষ্মের মত,
ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকো,
শুধুই শূণ্য হাতে.....
স্রষ্টা যে উজাড় করে দিয়েছে
সব, বসন্তকে.....
বসন্ত বিলাপ
বুড়িছোঁয়ার মত ট্রামটা আজও
ছুঁয়ে যায়, গড়িয়াহাটের
মোড়...
শুধু আজ আর নেই সেই
যৌবনের উদ্দামতা....
তবু তাকে দেখলেই, স্মৃতিরা
সব
মিছিল করে , ক্লান্ত
করোটিতে....
আবার নিমেষেই মিলিয়ে যায়,
জেবরা ক্রসিংয়ের, থিকথিকে
ভিড়ে....
আচ্ছা বনলতা, তুমি
কি আজও একই আছো?
না কি তোমারও বেড়েছে বয়স,
কল্লোলিনী কলকাতার মতই....
এক বুক নিকোটিন ভরে, আমি
আত্মতৃপ্তির ধোঁয়া ছাড়ি,
দ্বিতীয় সম্ভাবনার গোড়ায়....
তবু মোড়ের মাথায় অবিচলভাবে
দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাফিক সিগনালটা,
আমায় ভ্রুকুটি করে....
শত শত জীবন অঙ্কের নীরব সাক্ষী হয়ে,
সে যেন অস্ফুটে বলে যায়,
সমাধান হয়নি.....
সমাধান হয় না........
সময়ের দান
গঙ্গার পাড়ের ঐ লঞ্চঘাটের জেটিটা,
সেদিন বিলি করছিল সময়....
শান্ত গোছানো হাওয়া আর
স্তিমিত সূর্যের আলোর সাথে,
মনের ঘরের কিছুটা এলোমেলো হাওয়া
মিশিয়ে,বিনুনী
বাঁধছিল গঙ্গার জলে....
মনের সমস্ত আড়ষ্টতা,আড়মোড়া
ভেঙে,
এগিয়ে যাচ্ছিল,বিনুনী
হবার লোভে....
সময়ের দুর্ভেদ্য প্রাচীর ভেদ করে,
এগিয়ে আসছিল একে একে,সমস্ত
বেদনা,অভিমান,প্রগলভতা.....
আকাশে ভেসে থাকা ফিরতি পাখির
ডানায়,দিনশেষের
বিষন্নতা,আনমনে
এঁকে যায় তার আল্পনা....
আমি শুধু চাতকের মত,সময়ের
কাছে
ভিক্ষা করে নিই,
আরেকটু প্রশান্তি জড়ানো নীরবতা....
দূরপারের শ্মশান থেকে উঠে আসা
ধোঁয়া,
মেলবন্ধন ঘটায়,শেষ
হয়ে যাওয়া
জীবনচক্রের সময়ের সাথে চলমান
বর্তমানের...
সময়ের গহ্বরে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে
থাকা
প্রশ্নের, উত্তর
তো শুধু দিতে পারে সময়ই.….