শ্রীকণ্ঠ
জন্মদিন
জন্মদিন
এলেই রাত বড়ো হয়। রাস্তা ক্রমশ সংকীর্ণ হয়। বাঁক বাড়তে থাকে। বাঁকের মুখে জমা হয়
ঈষৎ কালো অন্ধকার.... ভারী হয়ে আসা মেঘ.....
চর
পড়তে থাকে দিকচক্রবালে। রুদ্ধ হয় স্বাভাবিক গমনপথ। সর্পিল যাত্রায় নিজে হয়ে উঠি
মেরুদণ্ডহীন। ক্রমশ সঙ্গীহীন। অপেক্ষার ভেজারাতে জেগে ওঠে প্রলম্বিত শ্বাস। তরল অন্ধকারে
খুঁজতে থাকি জীবাশ্মিত প্রজন্মের ছাপ।
জন্মদিন
এলেই পাসওয়ার্ড ভেঙে সীমান্তে সীমান্তে গজিয়ে ওঠে ধূলিঝড়। ফ্রিকোয়েন্সি কমে আসা
শিলাবৃষ্টি ক্রমশ শিশির রূপ নেয়। লজ্জাবতী পাতার মতো নিজেকে গুটিয়ে নেয় নীলাকাশ।সৌরদিনীয়
মুহূর্তগুলি নিউক্লীয় বিভাজনে বিশ্লিষ্ট হয় ঘন্টা, মিনিট, সেকেন্ডে।
কেক
কেটে সকলের সঙ্গে শেয়ার করি একেকটা জন্মদিন।
জন্মদিন এলেই মোমবাতি জ্বালিয়ে দেখতে থাকি ছায়াবৃত্ত থেকে ঠিক কত আলোকবর্ষ দূরে দাঁড়িয়ে
আছি আমি।
অভিজ্ঞান
পুরানো
বর্ণমালার মধ্যে তোমার শব্দের আর ঘ্রাণ পাই না। স্বরবর্ণ আর ব্যঞ্জনবর্ণের যৌথপ্রয়াসেও
তোমার মুখের ছবি ফুটে ওঠে না। আসলে ঐ চিঠিগুলো রঙ পাল্টেছে। কোনটায় আবার উইয়ে কামড়
বসিয়েছে। তোমার বলতে তেমন কিছু নেই। আজকাল তুমি ফোনে ম্যাসেজ করলেও তাতে আঙুল বুলিয়ে
তোমার স্পর্শ পাই না। তুমি ভিডিও কল করে তোমার মুখ দ্যাখালেও সেই চিত্র বেশিক্ষণ স্থায়ী
হয় না স্মৃতিতে। তুমি একটা যত্ন করে আমায় চিঠি লিখো। সেই চিঠিতে আঙুল বুলিয়ে তোমার
স্পর্শ পাবো। তোমার মুখের শব্দ শুনবো। আর চিঠিতে ভাসিয়ে তুলবো তোমার লজ্জায় রাঙা
হয়ে ওঠা মুখ। খুব যত্ন করে গুছিয়ে রাখবো তোমার অভিজ্ঞান।
নতুন
ফুলের বাগান
ঝুপ
করে নেমে এলো ভোর। ফোঁটা ফোঁটা ঘুম জড়ানো চোখ নিয়ে বাসি কাহিনি ছেড়ে তুমি উঠান থেকে
ধুতে লাগলে গত রাতের অন্ধকারের জন্মদাগ। নতুন এলো বাতাসে তোমার মুখ রাঙা হয়ে ওঠে।
সেখানে বসে কিছু ছাতারে ভোরের কীর্তন শুরু করেছে। তোমার মুখ আরো রাঙা হয়ে উঠছে। তুমি
সেই কীর্তনে ভেসে চলেছো। আমাকেও ভাসিয়ে নিলে। আমি সবুজ নিমডাল মুখে দিয়ে গত জন্মের
গল্পগুলো ধুতে লাগলাম। দরজা জানলা খুলে আদুরে রোদ সারা বাড়িতে ছিটিয়ে দিলাম। তারপর
আমিও ভাসিয়ে নিলাম সনু তিতাইদের। কলতলায় জলের শব্দ পতন ঘটিয়ে তাদের মুখ হাত থেকে
উড়িয়ে দিলাম রাতপরিদের। আমারা সবাই ভেসে ভেসে আবাহনী সংগীত ধরলাম। রাস্তা দিয়ে যেতে
যেতে সবাই দেখছে আমাদের নতুন ফুলের বাগান।
তুমি
আমি ও বৃষ্টি
আবার
বৃষ্টি এলো। তোমাকে বারণ করা সত্ত্বেও তুমি বৃষ্টিতে ভিজতে থাকলে। ক্রমশ বৃষ্টির ভিতর
ঢুকে গেলে। বৃষ্টির ভিতর আরো ঢুকে গেলে। তোমার শরীরটা বৃষ্টি হয়ে গেলো। তোমার শরীর
থেকে অঝরে বৃষ্টি নামছে। হঠাৎ তুমি উঠে এলে বারান্দায়। তুমি আমায় ভিজিয়ে একশা করে
দিলে। আমায় টেনে নিয়ে গ্যালে উঠানে। আমি ভিজতে থাকলাম। তারপর আমিও ক্রমশ বৃষ্টির
ভিতর ঢুকে যেতে থাকলাম। আরো ভিতরে। আরো ভিতরে। একসময় আমার শরীরও বৃষ্টি হয়ে গ্যালো।
বৃষ্টির ভিতরে আমরা উদম ভিজতে থাকলাম।