মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী, ২০২০

বৈশাখী চক্রবর্তী


বৈশাখী চক্রবর্তী

রিক্ত ঝোলা

শহর ঘুমাচ্ছিল।
জেগেছিল কেবল দু'জন।
এক নিটোল চাঁদ,সকলের চেনা
আর এক অভুক্ত পাগল।
মানুষের তাড়া ছাড়া আর
কিছু ভরপেট খায়নি সে বহুদিন।
 ভাঙা ফুটপাথে
আলো-ছায়ার কোলাজ।
এ রাস্তার উঁচু উঁচু বাড়ি আর
পাতাহীন এক অশথ গাছের ছায়ায়
সারা গলি জুড়ে আবছা অন্ধকার।
এক ঘেয়ো কুকুরের ওম পাগলের গায়ে।
দুজনে প্রায় জড়াজড়ি শোয়া।
পাগল তাকিয়ে দেখে সরেসরে যাওয়া চাঁদ আর
কার মুখ যেন মনে পড়ে তার।
মনে পড়ে এক বাগান ফুল
নরম দুটো চোখ
দশটা আঙ্গুল ছোটো ছোটো।
তারপর সব কেমন ফাঁকা!
চাঁদ হাসে।তার দিকে চেয়ে চেয়ে
অভুক্ত পাগলের চোখেও ঘুম নেমে আসে।
কুকুরটা সরে আসে আরো কাছে।
চাঁদের আলো কোনো বিচার করে না
সাদা আলো পড়ে উঁচু উঁচু বাড়িগুলোর গায়
পড়ে আধমরা পাগলের রিক্ত ঝোলায়।





তুমি এলে

ক্রমে ছায়ার মত সব দৃশ্য নিরুত্তর হলে
দূরগামী তুমি এসে বসো
তখন ভাসমান বয়ার মত দোল খায়
ইমনের আলো জোনাকিনী পয়ার
আধখাওয়া চাঁদের মাদল
অক্ষরময় ঝরাপাতার সাজানো সংসার
পুড়ে যেতে থাকে আমার ভিতর
জমে থাকা শতাধিক কবন্ধ চরিত্র
নীলাভ্র স্তবকের মত খসে পড়ে
খসে পড়ে শূন্যতাময় বর্ণমালা
রাতের চোখের কোলে গাঢ় হয়ে আসা
অনপনেয় অন্ধকার।
হাতে হাত রাখো
ভেসে যায় মৃদুল হাসির কুয়াশা সংলাপ
দু’চোখের বৃষ্টিঅলঙ্কার।







গুটিপোকা

অমলতাসের চিঠি এসেছিল আজ, ইরানথিমামের কলমে। চাকভাঙা ভোর নিরুপায় হলুদ ভ্রমরের উৎসুকের মতো খুলে দিচ্ছিল বুক। দুরের আকাশ ঢেকে ছিল বাহুল্য বর্জিত মেঘে। সন্তুরে বাঁশিতে শিশিরের হংসধ্বনি। একচিলতে হিমমাখা রোদ্দুর এসে পড়েছিল সুন্দরী ইউক্যালিপটাসের গায়ে। কেন জানিনা ভাবছিলাম, এমন ভোরে তোমার চিঠি এলে বেশ হয়। অমনি গাঢ় নীল খামে হাজার হাজার তারা পাঠিয়ে দিলে। তারা টুংটাং বৃষ্টিকণা হয়ে ঝরে পড়লো গায়ে।সত্যি বলছি সে এক সুরভিত শিহরণ। পাশের বাড়ির তোয়া চেঁচিয়ে উঠে বললো—‘ দেখো রোদ্দুরের মধ্যে বৃষ্টি পড়ছে। ’আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে ভিজতে লাগলাম। বৃষ্টিতলায় এক ষোড়শী।