আলম তৌহিদ
অশ্বমেধ
হায় অশ্বমেধের ঘোড়া !
তোমার আছে এক সৌরবছর আয়ু,
এখন বশ্যতার লাগাম খুলে
ঘুরে বেড়াও পৃথিবীর সবুজ-দীপ্ত ঘাসে,
পেরিয়ে যাও মাঠ, প্রান্তর, তেপান্তর-
হাওয়ায় হাওয়ায় দুলে, তোমার পুচ্ছ
থেকে
নির্গত হোক, বিজুলী-প্রভা।
সুলক্ষণ, সুবর্ণ মুখ তোমার
সুগন্ধ চন্দন কাঠের কোহলে
বিজয়ের অলকাতিলক,
আঁকা আছে কপালে।
যূপকাষ্ঠ প্রস্তুত, রাজাসনে রামচন্দ্র
নাকি যুধিষ্ঠির !
আছে খুব মৌজে আদিভৌতিক নৃত্যে
গাঁজা-ভাংখোর ঋষিরা।
যজ্ঞমঞ্চ থেকে ওড়ে এলে সোমের সুরভী
নিদ্রাভঙ্গে জেগে ওঠে অমরাবতীর দেবতারা।
ঐ দেখো, আর্যের খঞ্জরে রূপালী ঝিলিক,
এখন তোমার মেদ-মাংসে, পুষ্ট হবে
অগ্নি।
আমি ও শবরী
সে ছিল এক শবরী।
কামকলার শাস্ত্রিক মুদ্রায় দিত বিসর্জন,
তার শরীর চোয়ানো অজস্র স্বেদবিন্দু।
চোখে তার মেঘের মায়া,
কখনও আনত, কখনও গভীর।
বোধের অতলান্ত থেকে, তোলে আনে
বাকহীন ভাষা।
আমি কবি বলে বুঝি বিহঙ্গ-স্বর
বুঝি বৃক্ষ-ভাষা,
তাই বোঝতে পারি শবরীকেও।
কতো পরাভব, কতো গ্লানি আড়াল করে,
নিমগ্ন হয়ে আছি আত্মজগতে।
আমার আর যাওয়া হয়নি গণিকার কছে।
তবু খদ্দের আসে। চেনা অচেনা।
পথ চেয়ে থাকে শবরী।
শস্যক্ষেত্র
কাল থেকে কালে
সহস্র শতাব্দীর ইতিহাস সাক্ষী
ভেঙ্গেছ এই মৃণ্ময় শরীর,
চূর্ণ করেছে মন মধুমালঞ্চ
তুমি সেই শাস্ত্রিক পুরুষ
কোরআন পুরাণের চাষি।
আমি দূর থেকে পাখির চোখে দেখি
কি মোহ ঐ বৃক্ষে!
তবু তোমার কাছে আসি,
তোমাকেই ছায়া মানি।
দেখ, ক্ষেত করেছি প্রস্তুত।
এবার চালাও তোমার লাঙল,
না হয় আরও ফালা ফালা কর,
নিড়ানির নামে দাও কিছুটা নিপীড়ন,
বংশের বীজ বুনে আমাকে ক্লান্তি দাও।
আমি পুত্রদেব, ঈশ্বরের পুত্র
আমি ফলবতী ঈশ্বরের বাগান।