স্বপন গায়েন
সেদ্ধ ভাতের গন্ধ
সেদ্ধ ভাতের গন্ধে আজও মন ভরে যায়
সেই মাটির উনুন, সেই মাটির দাওয়া
আজও আমরা শহুরে হতে পারলাম কই
তোমার ছিন্ন শাড়িতে লজ্জা ছিলনা
মা!
বড্ড মনে পড়ে তোমার অমলিন হাসি মুখ
-
আমাদের মাটির ঘরে এক বিছানায় চার
ভাইবোন
একফালি বাঁকা চাঁদ উঁকি দিত গাছগাছালির
দিয়ে
দুঃখের সংসারে অভাব ছুঁয়ে থাকত সারাটা
বছর!
এক চিলতে রোদ্দুর খেলা করে সারা
উঠোন জুড়ে
শীত গ্রীষ্ম বর্ষা পেরিয়ে যায় সময়ের
তালে তালে
তোমার অন্তরে ছিল এক গভীর অন্তর্ভেদী
ফলগুনদী
কখনও বুঝতে দাওনি তোমার দুঃখ যন্ত্রণা
কান্না!
বাতাসে এসেছে হিমেল পরশের গন্ধ
–
ঘাসের বুকে শিশির বিন্দুর কোলাহল
...
মা তোমার দেখা হল না আমরা কত বড়লোক
হয়েছি
তবুও তোমার হাতের সেদ্ধ ভাতের গন্ধ
আজও অনুভব করি।
ভালবাসা পথভোলা
শীতের রোদে মৌতাত নেয় পরিযায়ী পাখির
দল
ঝিলের জলে মেতে ওঠে তারা জলকেলিতে
শীত অবসানে ফিরে যাবে দূর পরবাসে!
মনের খেয়ালে খুশিতে মাতে পরিযায়ী
ঠিকানা তারা খুঁজে নেবে আবার কোন
শীত রাজ্যে
শিশু পরিযায়ীও যাবে উড়ে দূর দিগন্তে
...
বাতাসের কানে কানে হয় গোপন কথা
ফিরে যাবার আগাম খবর পেয়ে যাবে তারা
বসন্ত বাতাসের গন্ধ পেলেই যাবে উড়ে
পরিযায়ী!
পথেই জীবন পথেই মৃত্যু পথই ঠিকানা
অজানার খোঁজে দেয় পাড়ি সাত সমুদ্র
খুঁজে নেয় তারা কোন এক শীত দেশের
ঠিকানা।
ভালবেসে ঘর বাঁধা হয় না কখনও
দূর নীলিমায় ভেসে চলে লক্ষ মাইল
দূর
পরিযায়ীদের ভালবাসা যেন ভালবাসা
পথভোলা!
হৃদয়ের মানচিত্র
সুখের পরতে পরতে লুকিয়ে আছে কান্নার
উপনিবেশ
জ্যোৎস্নার রঙ ধুয়ে ধুয়ে চোখের নিচে
পড়ে কালি
সুখের বারান্দায় প্রকৃতির আলোকরশ্মিতে
ঝলমল করে!
খরস্রোতা নদীর মত গতিশীল হয় না কান্নার
রঙ
সুখের ধারাপাত বুঝতে বুঝতে পেরিয়ে
যায় অনেকটা সময়
হৃদয়ের মানচিত্রে লেখা হয় জীবনের
গোপন অবক্ষয়!
শীতের নরম রোদের মত ছাদের কার্নিশে
দাঁড়িয়ে সুখ
সুখের সমস্ত অনুভব অন্তর দিয়ে উপলব্ধি
করতে হয়
রামধনুর মত সুখ ক্ষণস্থায়ী প্রতিটি
মানুষের জীবনে!
ক’জন ধরে রাখতে পারে সুখের পায়ে
বেড়ি দিয়ে
প্রজাপতির রঙিন পাখনায় আলোকিত হয়
সুখ -
দুঃখের বর্ণমালায় ভেসে যায় বহু কান্নাগ্রস্থ
মানুষ!
শঙ্খচিলের ডানায় নেমে আসে অনাকাঙ্ক্ষিত
সুখ ...
ধুলোর পৃথিবীতে কান্নার রঙ অনেক
বেশি উজ্জ্বল
সীমিত মানুষের জীবনে সুখ বন্দী সারাটা
জীবন!