অভিজিৎ পাল
যাপন ১
শিলালিপির ক্ষয়ে যাওয়া অক্ষরের
মধ্যে
যেটুকু ভাব সমাহিত ছিল,
সেটুকু অনুভূতি আমি আজ পর্যন্ত
প্রকাশ করতে পেরেছি...
তোমার সঙ্গে একত্রে এতদিন থেকে
এতগুলো যাপনের পরেও সারারাত ধরে
মাতৃসঙ্গীত গেয়েছি বকুলের তলায়
কারণের অনুসন্ধান তুমি করতে পারোনি!
ফিরে গেছে সবকিছু, যোগীর মতো করে।
কালীকীর্তনে ঢেকেছে শরীর রক্তবর্ণজবায়,
মিটেছে হিসেবের কড়া-গণ্ডা-পাই
এবার আমার আর কিছুই বলার নেই
বোঝানোর নেই, নেই ঝগড়ার বিষয় পর্যন্ত!
সমস্ত যাপনময় স্মৃতি পর্যন্ত মলিন
হয়ে যাবে
পৃথিবীর এটাই স্বাভাবিক জীবনধর্ম।
যাপন ২
বাতাসে এসে মিশেছে দগদগে বারুদের
গন্ধ।
দেওয়ালির রাত গেছে কেটে
আর সাত পাঁচটা রাতের মতো অনায়াসে।
অসংখ্য আলোয় দেখলাম কলকাতাকে
সে এখনও তন্বী হতে পারেনি
তিলোত্তমাও নয়।
ওর নগরযৌবনের প্রথম আলো জ্বলছে
প্রাচীনকালের সেজবাতি ঝাড়লণ্ঠন
ত্রিফলায় জড়িয়ে ধরা চিনা বাতি
সবে।
সময়ের সঙ্গে বদলে নিয়েছে নিজেকে
বদলেছে ওর মানুষগুলো!
আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ কমেছে অন্তরের
বেড়েছে বিষাদ, ছুঁয়েছে অবচেতনে!
শৈশবের দিনগুলো ‘ঐসব’ হয়ে এলে
ফিকে হওয়া খাতার কালিরও একটা
নতুন অর্থ তৈরি হয়।
সমস্ত গ্যালারিময় প্রতিটি ক্যানভাসে
ছবি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে নীল বিষাদ
দূর থেকে চেয়ে দেখি একা!
যাপন ৩
নিরন্তর প্রতিবন্ধকতা ঘিরে ধরে
জড় হয়ে আসে জিহ্বা
প্রতিবাদের মুখ নষ্ট করে ফেলি।
আমার সংসার আছে, পরিবার আছে,
আছে দায়িত্ব, স্বজন আছে!
ঘিরে ধরে একটা একটা করে বাঁধন
আলগোছে খেলার মতো ঘিরে ধরে
রাখতে চায় গহ্বরের চোরা গর্তে।
মায়া বাড়ে, বাড়ে টান, মোহের মাধুরী
আহ্লাদে ভরিয়ে দেয়
শিশুর নিটোল মুখের হাসিতে...
বন্ধন চাই আমি আরও বন্ধন
মুক্তি চাই আমি অসীম মুক্তি
তোমার মতো, তোমার পথে,
কাণ্ডারি, হে দয়াল প্রভু জগন্নাথ!
যাপন ৪
প্রতিদিন একটু একটু করে শিখি।
শিখতে হয়, জীবনের এটাই প্রাথমিক
শর্ত।
যাপনের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাব
খবর দেব আমি আছি, আমার থাকাটা জরুরি
নেহাত এড়িয়ে যাওয়ার মতো সাধারণ
নয়।
আমার আমিকে জানি আমি প্রতিদিন
একটু থেকে অনেকটা হয় জানাগুলো।
অদ্বয় আমি, অখণ্ড আমি, সোঽহং আমি
তাঁর ও আমার মধ্যে আমিত্বের ব্যবধান
ছাড়া
বিন্দুমাত্র আর কিছু বাকি নেই!
যাপন ৫
দলা দলা অভিমান পাকিয়ে রেখো তুমি
তোমাকে নিয়ে দুটো কথাও বলতে আমার
বাধে
কথা থাকলেও বলতে গিয়ে আটকায়।
তুমি বোঝো সবটাই অনুভবগম্য এই সম্পর্ক
অনাবিল আনন্দ জেগে ওঠে সূর্যময়
মা, তোমায় নিয়ে একটি লাইনও লিখতে
পারিনি
এখনও পরিণত হয়নি তোমার কথা লেখার
মতো।
যাপন ৬
তোমার ওপর নির্ভর করি।
নির্ভর করতে হয়, নির্ভরযোগ্য তুমি।
শরীর ব্যাপ্ত করে জমে উঠেছে
অসময়ের কালো কালো মেঘ।
বিষণ্ণ শীতের রাত্রির মতো নেমে এসেছে
তেতো বিষাদ, ওষুধের কটু গন্ধে
ভরে উঠেছে চারপাশের আসবাবপত্র।
অপরাজিতা লতার মতো আঁকড়ে ধরে থাকতে
চাইছে তোমার দৃঢ়তাকে, আমার অসময়ের
দিনলিপিতে সাজিয়ে নিচ্ছি নির্ভরতার
পাঠ।