দেবাশিস ঘোষ
বদলে যাওয়ার কবিতা
মানুষের সঙ্গে এখন কথা বলতে ভয়
হয়
কেউ আর আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে
নেই
সবাই অনেক অনেক উঁচুতে উঠেছে
যে বন্ধুর সাথে সারাটা দিন কাটিয়েছো
একসাথে
যে তোমার জ্বর হলে পাশে বসে থেকেছে
সমস্ত দিন
যাকে তুমি যা খেয়েছো তার আধখানা নিজ হাতে
তুলে দিয়েছিলে
সে এখন খুব ব্যস্ত
কিভাবে তার সাথে কথা বলবে ভেবে নিতে
হয়
ইচ্ছে হলেই তার বাড়ি যাওয়া অসম্ভব
কখন কি কাজে সে আটকে থাকবে
সেসব অবশ্য করে জেনে নিতে হয়
কেউ আর আগের মতো থাকতে চায় না
যার কাঁধে হাত রেখে এই তো সেদিনও
তুমি
একসাথে হৈ হৈ করে হেঁটে হেঁটে গিয়েছিলে
দোকানে বাজারে
সেও তো তোমার কাঁধে হাত রেখে
বিশ্বাসের মাটিতে নামিয়ে রেখেছিল
বুকের কলিজা
এখন বদলে গেছে সব কিছু
তার চোখে তাকাতে তোমাকে লিখিত পত্র
দিতে হয়
সে তোমার পত্র পড়ে সাড়ে তিন দিন
বাদে
তোমাকে জানাবে
তুমি তার চোখে ঠিক ক মিনিট ক সেকেন্ড
কিপ্রকার দৃষ্টিতে
তাকানোর অনুমতি পাবে
কোথা থেকে এতসব বিষ এসে পড়ছে !
রাত্রিও কিরকম দিন সেজে ডে নাইট
খেলছে
আর দিন তার খাঁজে খাঁজে অন্ধকারের
গুঁড়ো
ছড়িয়ে মাখন মাখিয়ে সেঁকে তুলে
দিচ্ছে
পাল্টে যাচ্ছে ভাষা, রীতি, পোশাক
আশাক, বাড়ি ঘর
স্কুল, সিলেবাস, মেরুবিন্দু
দৃষ্টিকোণ ভেঙে তছনছ
পাল্টে যাওয়াটাই রীতি। ভুলতে পারাটাই
জীবন
রক্তের ভিতরে পুষে রাখা সমস্ত হিংসাকে
মুঠো মুঠো খই পয়সা ছড়াতে ছড়াতে
জীবন পোহানোটা একান্ত নিজের কাছে
মেলে দিলে ফুল ফোটে রক্তের ভিতরে
দিন গলে টুপটুপ
আকাশ, তোমার চই চই ঘুড়িদের ছেড়ে
দাও
আনন্দে উড়ে যাওয়া গ্যাস বেলুনের
মতো
পূজোর রোদের গায়ে লেগে থাকা রূপোলী
বর্ডার
শিশুদের চোখে এঁকে দাও
সকল স্বচ্ছ জলে নদীটি যাপন করো রঙীন
ব্যালকনি
মন্দিরের চূড়া থেকে উড়ে যাক আরো
কিছু শুভ্র পতাকা
এই সব যতিচিহ্নহীন দিন রাত থেকে
শুধু রান্নার ধোঁয়া
আর দিনের ক্লান্তি ছুঁয়ে নেমে আসা
বিষাদের উজ্জ্বল রঙ
নো কিডিং
টাওয়ারে টাওয়ারে ঝুলে থাকা ব্লেড-চোখ
জেগে থাকো ঘন হয়ে, সতর্কতায়।
অমৃতের খোঁজে শপিং মলের পেটে
এসকেলেটর বেয়ে উঠে আসে বলিভিয়ার
জঙ্গলের কফি,
আর অ্যাবর্শনের ছিন্ন সন্তানেরা।
দ্যাখো স্পাইডারম্যান দ্রুত উড়ে
যায় নক্ষত্রের দিকে
লোকাল ট্রেনের ফেরিওয়ালার ঝুড়িতে
অঙ্কুরিত স্বপ্নরা বিকেলের খিদে
খায় দশটাকা ঠোঙা
ধুলো কালি জামা প্যান্ট, ছোটো ছোটো
পায়েরা
পেরিয়ে যাচ্ছে ট্রামলাইন।
যেন ঠিক শিশু নয়
শহরের রোদে পক্ক শ্রমজীবী ওরা।