পৌলমী ভ্ট্টাচার্য্য
স্বপ্নের পুরুষ
এই প্রথম দেখলাম আমাকে নতুন সাজে
পরনে আমার এখন প্রিয় সাদা মেঘের
আভরণ
আর,সুগন্ধী রজনীগন্ধায় সুবাসিতা
।
শুয়ে আছে সমান্তরাল ট্র্যাকে আমার
শব -
সাজব আবার নতুন সাজে
চিতার ঝলসানো আগুন আমায় করবে রাঙা
।
শরীর আমার এখন বেজায় শীতল
সদ্য মিলেছে যেন সাপের পরশ
সাদা কাফেনে মুড়ে পাড়ি দিলাম এইমাত্র
যমের দক্ষিন দরজায়,এর আগে
আমাকে আমি দেখেছি অন্য সাজে --
বাস্তবতার কারিগরি তে ছিলাম অর্ধমৃত
আজ আমি আত্মহারা।
কৃষ্ণকায়, দীর্ঘকায় পুরুষ টি যেন
ছিল আমার ই প্রতিক্ষায় -
তাকে ও দেখার জন্য ছিলাম বিহ্বল
-
একাগ্র চিত্তে সম্মোহিত আমি
দৃষ্টির অর্থ নিজ শাসনে রুদ্ধ, অস্ফুট
শব্দের প্রতিক্রিয়ায়
অনন্ত মুহূর্তের দিনলিপির ঘটল অবসান।
হোল তবে আগমন, আনলে তোমার রাজ্যে!
মৃত্যুর রূপে,গন্ধে যমপুরী জমজমাট
-
পরানো হোল কপালে যমের টিকা
নিয়মের নির্ঘণ্টের বেড়া ভেঙে সে
বরণ করলো আমায়।
নিবিড় করে পাওয়ার অপেক্ষায় ছিল সে,
আজ ঘটল অপেক্ষার সমাবর্তন উৎসব;
অন্ধকার পুরী গ্রহন করল আমায়।
উপেক্ষার অবসানে এখন আমি তাঁর-
বিশ্বাসের আগলে বাজল কষাঘাত
এ কী সত্যি আমি?
পেলাম কী তবে সাক্ষাৎ সেই পুরুষের
যার জন্য সাজিয়েছিলাম কল্পলোকের
জগৎ!
প্রতিদ্বন্দ্বী
রেসের ঘোড়া ছুটছে ঊর্ধ্বশ্বাসে
ব্যাকগ্রাউণ্ডে বাজছে তীক্ষ্ণ স্বরের
ব্যান্ড
জকিদের হাতের পুতুল সেজে ছুটতে ব্যস্ত
ঘোড়া গুলো
নম্বরের দল মেতে উঠেছে বুকি গুলোর
হাতে -
চাবুকের ঢ্যাঁড়া পিটছে যুদ্ধের বাগিচায়,
আর একটু ,আর একটু করে লক্ষে এগিয়ে
যাওয়ার তাগিদ –
কী পাবে, কী হারাবে সবই তোলা আছে
চাবুকের অগ্রভাগে
কখনো হাততালি, কখনো দুমড়ে যাওয়া
ডিজিট গুলোর
আর্তনাদ বুকিগুলোর হাতে,
হয়তো বা হেড- টেল খেলার নেশায় বুঁদ!
সম্ভাবকের চোখে জ্বলছে তখনও দ্বিধার
আগুন,
আছাড় খেয়ে যে ঘোড়া টা মাটির কাছে
আসলো তীব্র গতিতে
সেই হ্রেষা কটা লোকের নজর আকর্ষণ
করল?
চোখের কোণ ভিজল কটা মাথার!
উন্মাদনার সরঞ্জাম চাপালো যে জকি
তার বাহনের ওপর,
ভিড় করে বাহবা খেতাব কুড়ালো যে সওদাগর
–
রাজ্য তাঁর কুক্ষিগত, প্রাসাদ জুড়ে
সাজো-সাজো রব ।
বিজেতার সিংহাসনে বসে রাজ্য শাসন
করতে কে না চায়?
কিন্তু মুখ থুবড়ে যে পড়ল,সেই ক্ষতের
জ্বালায় মলম লাগাবে কে?
অসফলতার যে বিষ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বাঙ্গে,
জানে কেউ সঞ্জীবনী মন্ত্র?
যে মন্ত্রে সজীবতার প্রাণ সঞ্চার
ঘটবে!
শেষ-মেশ কুশপুত্তলিকা জ্বলবে নগরীতে!
নাকি
স্কচ, শ্যাম্পেনের শব্দ ছড়াবে চুমুকে
চুমুকে!
আমি সেই বীরাঙ্গনা
ভোগের বলি প্রদত্ত নারীর আমি ছিলাম
নন্দিনী
লালাভ, চরম পাশবিক পেষণের যে ছিল
বন্দিনী ।
উন্মত্ত ক্ষুধা, বলিষ্ঠ বাহুবল,
আঠালো জিহ্বার
ঔরসজাত শীকার সঙ্গিনীর আমি সেই
“তনয়া”
ভদ্র, শিক্ষিত বেশধারী অসুরদের অলঙ্করণে
ভূষিতা “অপয়া” ।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে যুগযুগ
ধরে নারী সমাজের –
ব্যাভিচারী শ্রেণী জন্ম দিয়েছে আমারই
মতো অপয়াদের
তবুও আমি নারী, উচ্চকণ্ঠে প্রতিবাদী
প্রকট শব্দচয়নে সিদ্ধহস্তা ,
দশপ্রহরণধারিণী মা চামুণ্ডা রূপিণী
আজকের এই অপয়া
দেশমাতৃকার চরণে ফুল-বেলপাতা চড়াই
না,পরিবর্তে
বলি দিই হিংস্র লোভাতুর অসুর গুলোকে
।
ওদের হাতে-পায়ে পরাই লৌহ বেড়ি,
কপালে লেপে দিই নৃশংসতার রক্ত ।
যে হাতে আমার হতে পারত দেশবন্দনার
গ্রন্থ –
যে হাত দিয়ে আমার অভিমান কে
বন্ধক রাখতাম কারোর সখ্যতার আকাশে
–
যে গর্ভে শোভা পেত নতুন ভোরের সূর্য
–
সেই আস্যে হোতাম আমি স্নাত, পরিবর্তে
সেই হাতেই তুলে নিয়েছি “এ কে ফরটি
সেভেন”, “পাইপ গান” ।
বঙ্গললনা কে শৃঙ্খলমুক্ত করার বাসনায়
সমাজে আমি নবরূপে অভিষিক্তা –
প্রতিবাদিনী, কলঙ্কহারিণী –
সর্বোপরি আমি বীরাঙ্গনা ।।