শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৭

সম্পাদকের কলমে: কবিতার মুহূর্ত




কবিতার মুহূর্ত
কখন আসে কবিতার মুহূর্ত? কি ভাবে আসে? সব কবিতাই কি কোন না কোন কবিতার মুহূর্তের অনুপম উদ্ভাসন? ফরমায়েশি কবিতার জন্মও কি হয় না? এইসব প্রশ্নগুলিই সম্প্রতি মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। এক এক জন কবির কাছে যদি জানতে চাওয়া হয়, নিশ্চিত ভাবেই এক এক জন কবির উত্তর এক এক রকম হবে সন্দেহ নাই। এইখানে আরও একটি প্রশ্ন উঠে আসতে পারে, এই যে কবিতার মুহূর্ত- সে কি দূর্লভ না সুলভ? যাঁরা প্রচুর কবিতা লেখেন, তাঁরা কি এক প্রবাহমান কবিতার মুহূর্তের মধ্যেই বাস করেন? নয়তো এত বেশি পরিমাণে কবিতার সৃষ্টিই বা হয় কি করে? আবার সঙ্গে সঙ্গেই আরও একটি যুক্তি মনের কোনে শান দিতে থাকে। মুহূর্ত মানেই তো ক্ষণিকের আয়ু। না কি বড়ো বড়ো কবিদের সৃজনশীল মননে ক্রমাগতই উদ্বোধিত হতে থাকে কবিতার এক একটি অম্লান মুহূর্ত?

মনে হয়, যে কবির সংবেদনশীলতার অনুভবের বিস্তার ও গভীরতা যত বেশি, তাঁর ক্ষেত্রেই হয়তো এই অম্লান মুহূর্তগুলি তত বেশি ঘন ঘন আসে। আর আসে বলেই, তাঁর এক একটি লেখনীর প্রত্যয় এত বেশি সংখ্যক মানুষকে এত বেশিবার করে আন্দোলিত করে। আর করে বলেই আমরা বারবার তাঁদের কাছে ছুটে যাই। এইখানেই হয়তো তাঁদের শ্রেষ্ঠত্বের ভিত। অর্থাৎ কবিতার যে মুহূর্ত নিয়ে কথা বলছিলাম, এই অম্লান মুহূর্তগুলির পশ্চাতে অবশ্যই রয়েছে কবির সংবেদনশীল অনুভবের এক একটি মহাদেশ। এই সংবেদনশীলতা ছাড়া কবিতার কোন অম্লান মুহূর্তের উদ্ভাসন সম্ভব নয় বলেই মনে হয়। এবং এইখানেই বড়ো কবি আর সাধারণ কবিদের মধ্যে পার্থক্য। বিশ্বসাহিত্যের পাঠ নিতে গেলেই আমরা মুখোমুখি হই এই সত্যের।

ভাবা যাক সকল মহাকবিদের কাছেই এই আর্জি নিয়ে যাওয়া হল, বলতে হবে তাঁদের; এক একটি বিশ্ববিখ্যাত কবিতার সৃষ্টির অন্তরের সেই কবিতার মুহূর্তের কথাগুলি। যে কবিতাগুলি যুগ যুগ ধরে পাঠককে বিমোহিত করে রেখেছে। এক এক কাল তার নিজস্ব মূল্যবোধে যে কবিতাগুলিকে আবিষ্কার করেছে নিজের মতো করে। যে কবিতাগুলির মধ্যে দিয়ে উদ্বোধিত হয়েছে কোন না কোন বিশ্বসত্যের। যে কবিতাগুলি পরবর্তী সাহিত্যধারার ভিত তৈরী করে দিয়ে গিয়েছে। সেই সব কবিতার নেপথ্যে লুকিয়ে থাকা কবিতার মুহূর্তগুলির গল্প যদি শুনতে পেতাম আমরা? যদি ধরে রাখা যেত সেই গল্পগুলিও কবিতার সাথে সাথে। কবির কবিতাগুলির পাশাপাশি! কেমন অভিজ্ঞতা হতো পাঠকের?

অনেকেই আমরা চমকে যেতাম হয়তো। অতি পরিচিত অতি ব্যবহৃত কবিতার আড়ালের অবগুন্ঠিত সত্যের আচমকা আবির্ভাবে। অনেকেরই হয়তো অসুবিধে হতো নিজের জানার সাথে কবির জানা মিলেই নিতে গিয়েই অনেকেরই সামনে হয়তো খুলে যেত অতি পরিচিত কবিতারই নতুন এক মহাদিগন্তের অনেকান্ত রূপরেখা। আবার অনেকেই হয়তো প্রশ্ন তুলতেন এই বলে যে এতে কবিতার অভ্যন্তরীণ যে শক্তি এক এক জন পাঠকের মননশীলতায় এক এক রকম ভাবে জায়মান হয়ে ওঠে; সেই শক্তিটিই হয়তো হারিয়ে যাবে। কবিতার নেপথ্যের এই অবগুন্ঠিত কবিতার মুহূর্তের প্রকাশ্য আবির্ভাবে। কেননা তখন কবির বলে দেওয়া অনুষঙ্গটিই হয়তো কবিতাকে ছাপিয়েই দাঁড়িয়ে যাবে অটল অনড় হয়ে। আর সেই দৃঢ় কাঠোমোটুকুই পড়ে থাকবে পাঠকের হাতে। হারিয়ে যাবে কবিতার মায়াজাল। যে মায়াজালে পাঠক আশ্রয় পায় তার ভালোলাগা কবিতার কাছে। যে মায়াজালে পাঠক বিশ্রাম পায় তার ভালোবাসার কবিতার কাছে। যে মায়াজালে পাঠক শক্তি পায় তার প্রিয় কবিতার থেকে।

অর্থাৎ সব সত্যটুকুই জানা হয়ে গেলে আর যেমন সেই বিষয়ে নতুন কিছুই আবিষ্কার করার উন্মাদনা অবশিষ্ট থাকে না, ঠিক তেমনই হয়তো কবিতার সাথে কবিতার নেপথ্যে থাকা কবিতার মুহূর্তের এই গল্পগুলিও জানা হয়ে গেলে, সেখানেই হয়তো থেমে যেতে পারে কবিতার চলন। কবিতার গতি। ঠিক এমনটিও ভাবতে পারেন অনেকেই। কবিতার প্রবাহমান কালোত্তীর্ণ ধারায় পড়ে যেতেও পারে অন্তিম যতিচিহ্ন।  কবিতার পাঠকের কাছে সে তো এক গভীর দুঃসময়। আবার উল্টো দিক থেকে দেখলে কবিতার গবেষকের কাছে খুলে যেতে পারে নতুন এক বড়ো দিগন্ত। উন্মোচিত হতে থাকবে কবি আর তার কবিতার মধ্যেকার নিবিড় সম্পর্কের রসায়নগুলি। যে কোন সাহিত্য গবেষকের কাছে সে এক আলাদীনের আশ্চর্য্য প্রদীপের মতই স্বপ্নময়!

কিন্তু এতো গেল পাঠকের কাছে কবিতার মুহূর্তের অভিঘাত কেমন হতে পারে সেই কথা। আবার সব পাঠকের কাছেই যে এক রকম অভিঘাত হবে বিষয়টি আদৌ সেরকম নয়। এক এক জন পাঠক এক এক ভাবে বেজে উঠবেন। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কি ভাবে সৃষ্টি হয় এই কবিতার মুহূর্তগুলি? যে মুহূর্ত এক এক জন কবির অন্তরে এমন কিছু অভিঘাতের জন্ম দিয়ে যায়, যা থেকে সৃষ্টি হয়ে ওঠে সাহিত্যের এক একটি অম্লান সম্পদের? আগেই দেখানো হয়েছে কবির সংবেদনশীলতার বিস্তার ও গভীরতার উপরেই নির্ভর করে কবিতার মুহূর্তের জন্ম হওয়া। কবি তার পরিপার্শ্বের প্রবাহমান জীবনযাত্রার বিভিন্ন অনুষঙ্গগুলির সাথে কি ভাবে সংলগ্ন থাকবেন, সেটি এক এক জন কবির কাছে এক এক রকম হতেই পারে। কিন্তু সময়ের সাথে এই সংলগ্ন থাকা এবং সেই থাকার মধ্যে মানবিক সংবেদনশীলতার আধারেই তৈরী হয়ে উঠতে পারে কবিতার এক একটি অনুপম মুহূর্তের। যে মুহূর্তগুলি কবির মননশীলতায় সৃজনশীলতার ঢেউ তোলে। যে ঢেউগুলি কবির জীবনবোধে পরিপুষ্ট হয়ে কবির কালচেতনায় সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে আবহমান জীবনপ্রবাহের সারসত্যে। আর তখনই জন্ম হতে থাকে এক একটি চিরকালীন কবিতার। যে কবিতার মধ্যে আশ্রয় ও বিশ্রাম পাবে পাঠক। যে কবিতার মধ্যে শক্তি অর্জন করতে পারবে পাঠক তার মানবিক মূল্যবোধের দিগন্তে। যে কবিতার মধ্যে স্বাক্ষর রাখবেন কবি বিশ্বসাহিত্যের। এইখানেই কবিতার মুহূর্তের অম্লান মূল্য।

পাঠক হিসাবে আমরা সেই মুহূর্তের খোঁজ করি আর না করি, তাতে কিছুই যায় আসে না। যায় আসে না আমাদের। যায় আসে না বিশ্বসাহিত্যের। যায় আসে না কবির নিজেরই। কেননা ততক্ষণে সেই দুর্মূল্য কবিতার মুহূর্তের অভিঘাতে কবির বীণায় জেগে উঠেছে সেই বাণী, যে বাণী পথ দেখাবে যুগে যুগে। যে বাণী ভিত তৈরী করে দেবে যুগান্তরের। যে বাণীর আশ্রয়ে পাঠক নিশ্চিন্ত হবে কালে কালে। যে বাণীই সাহিত্য হয়ে উঠে ধরে রাখবে সভ্যতার আয়ুধকে। ধারণ করবে মানবিক প্রত্যয়কে সাহিত্যের মূল্যে। সাহিত্যের শ্রীতে।

কবিতাউৎসবে আমরা সেই দূর্লভ কবিতার মুহূর্তকে নানাভাবেই ধরে রাখার চেষ্টা করি আমাদের নিজেদের মতো করে। প্রতিমাসের নিবেদনে আমাদের এ মাসের অতিথি বিভাগে আমাদের প্রয়াস থাকে এক এক জন কবি সাহিত্যিকের মুখোমুখি হওয়ার। যেখানে কবির চেতনায় বিশ্বাসে তার পরিপার্শ্বের বহমান সময়কে তিনি কি ভাবে অনুভব করছেন। কি ভাবে মূল্যায়ণ করছেন। কি ভাবে কাজে লাগাতে চাইছেন তাঁর সৃষ্টশীলতায়- এই সকল বিষয়গুলি নিয়েই আমরা তাঁর মুখোমুখি হই তাঁরকবিতাউৎসবের সাথে কবির একান্ত আলাপচারিতার মধ্যেই আমাদের আশা, অনুভবী নিবিষ্ট পাঠক খুঁজে নিতে পারবেন কবির নিজস্ব সেই সব মুহূর্তগুলিকে; যেখান থেকে গড়ে উঠতে থাকে কবির নিজস্ব কবিতার ভুবন। এই বৈশাখে, নতুন বর্ষের শুভারম্ভে আমরা আমাদের মধ্যে পেয়েছি এ মাসের অতিথি কবি বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়কে। কবিতাউৎসবের সাথে তাঁর সুদীর্ঘ আলাপচারিতায় উঠে এসেছে সংবেদনশীল কবিমননের নানা দিগন্তের রূপরেখা। অভিনিবেশী পাঠক যেখানে খুঁজে নিতে পারবেন কবির সৃষ্টিশীল সৃজনশীলতার নেপথ্যের মানবিক প্রত্যয়ের রূপবিকাশকে। যেখানেই গড়ে উঠতে থাকে কবির নিজস্ব কবিতার মুহূর্তগুলি।

প্রতি মাসের মতোই বৈশাখের কবিতার ডালি সাজিয়ে তোলা হয়েছে দুই বাংলার শতাধিক কবিতায়। নতুন বছরের উৎসবে কবিতাউৎসবের আঙিনায় আমাদের আমন্ত্রণ সকল কাব্যমোদী সাহিত্যপ্রেমীকেই।

কবিতাউৎসবের ফেসবুক পেজ :
https://www.facebook.com/amaderkobitautsov/  কে লাইক করে ফেভারিট করে রাখলে কবিতাউৎসবের যাবতীয় তথ্য ও বিজ্ঞপ্তি সরাসরি আপনার ফেসবুক ওয়ালেই দেখার সুযোগ ঘটবে। এই পেজেই কবিতাউৎসবে প্রকাশিত কবিতাগুলিও নিয়মিত প্রচারিত হয় লিংকসহ।

এবং এরই সাথে কবিতাউৎসবের ফেসবুক গ্রুপ:
 https://www.facebook.com/groups/kobitaautsov/#  এ জয়েন রিকোয়েস্ট পাঠালে গ্রুপের সদস্য হিসাবে গ্রুপের ওয়ালে আপনার কবিতা ও কবিতা বিষয়ক মূল্যবান মতামত সরাসরি পোস্ট করে সকল সদস্যদের সাথে শেয়ার করেও নিতে পারবেন। গ্রুপের পিনপোস্টে এই বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশাবলীও দেওয়া আছে।

এছাড়াও কবিতাউৎসব গুগুল কমিউনিটি:
https://plus.google.com/u/0/communities/117144176931778027450  তে সরাসরি জয়েন করে একটি সম্পূর্ণ ওয়েবসাইটের মতো সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন। এখানে আপানার কবিতা পোস্ট করার সুবিধা ছাড়াও আপনার নিজস্ব সাহিত্য ব্লগের লিংক নিয়মিত ব্যবধানে প্রচারের সুবন্দোবস্ত ও অন্যান্য একাধিক বিভাগে আপনার যোগদানের সুযোগ রয়েছে। রয়েছে সুস্পষ্ট নিয়মাবলীও।

***কবিতাউৎসবে লেখা পাঠানোর সাধারণ নিয়মাবলী:
১) স্বনির্বাচিত স্বরচিত ৫টি প্রিয়কবিতা পাঠাতে হবে
২) অভ্র বাংলা হরফে টাইপ করে একটি এমএস-ওয়ার্ড ফাইলে এটাচ করে
৩) কোনভাবেই পিডিএফ ফাইল ও বিজয় ফন্ট গ্রহণযোগ্য নয়
৪) একটি প্রফাইল চিত্র  অতি অবশ্যই আবশ্যক
৫) কবিতা পাঠানোর ঠিকানা amaderkobitautsov@gmail.com
৬) পাঠানোর শেষ দিন প্রতি বাংলামাসের ১লা তারিখ
***কবিতাউৎসবে প্রকাশিত কবিতার স্বত্ত্ব লেখকের নিজস্ব।
কবিতাউৎসব আপনার সৃষ্টিশীলতার প্রতি ঐকান্তিক শ্রদ্ধাশীল থেকে সবরকমের সহযোগিতার বিষয়ে সাধ্যমত অঙ্গীকারবদ্ধ। কবিতাউৎসবের সাথে থাকুন কবিতাউৎসব আপনার পাশে রয়েছে সবসময়।