শাশ্বতী
সরকার
আত্মমুকুর
জানো, সেই যে একদিন বলেছিলে
এই মাটি, আকাশ, বাতাস,
এই সোনা রোদ, বৃষ্টি
সব তোর জন্য লিখে দিলাম
তুই শুধু ফুল ফুটিয়ে যা
সেই থেকে কত শত ফুল ফুটিয়ে যাচ্ছি
কত বসন্ত পার হল
কত শীতে ঝরে গেল সব
কিন্তু তুমি তো আর এলে না
ইচ্ছে করেই হারিয়ে গেলে দূর কোন গ্রহে
এখন আমি বুঝেছি দেবতারা বুঝি এভাবেই
পালিয়ে যায়, পালিয়ে পালিয়ে বাঁচে
এখন আমি আর কোন দেবতার জন্য
ফুল ফোটাই না
আমার সমস্ত শাখাপ্রশাখা
ফুলে ফুলে সেজে ওঠে
শুধু নিজের জন্য
আত্মমুগ্ধ আমি সারাদিন নিজেকে দেখি
সংলগ্ন ওই দীঘিটির জলে
যেখানে এতদিন আমি ভুলেও তাকাইনি।
চলেছি
কোথায়!
যেখানেই যাই সঙ্গে কিছু গন্ধ নিয়ে আসি
মাটির গন্ধ, নদীর গন্ধ, লবণের গন্ধ
যেখানেই যাই কিছু শব্দ নিয়ে আসি
কলরব, জলরব, জনরব
যেখানেই যাই কিছু দৃশ্য সাজিয়ে আনি
স্মৃতির পাতায়
যেখানেই যাই কিছুমিছু স্বাদ নিয়ে আসি
বহুদিন লেগে থাকে রসনায়
যেখানেই যাই শিহরিত স্পর্শগুলিও
ফিরে ফিরে আসে
আসো না তুমিই শুধু, আধখানা হয়ে রয়ে যাও
পথপ্রান্তে একা
আমার আমি থেকে একা হতে হতে
হতে হতে, হতে হতে,
এ আমি চলেছি কোথায়!
দেহি
পদপল্লবমুদারম
ক্লান্তির মেদ জমা পৃথুলা এই শরীরটাকে
আকাশ, জলপথ, বনপথ চরিয়ে নিয়ে এল
শীর্ণ যে পা-দুখানি
এখন তার ভারী অসুখ
মেঘেদের স্তুপ সরিয়ে
জঙ্গলের গন্ধ ছাড়িয়ে
রঙিন মাছেদের গল্প হারিয়ে গিয়ে
বিশ্ব চরাচরে এখন জেগে আছে শুধু
নিরাসক্ত ব্যথায় দীর্ণ দুটি
রক্তিম চরণকমল
বাঁশির সুর ভেসে আসে চারদিক থেকে
“দেহি পদপল্লবমুদারম্”
দেখা দাও, দেখা দাও হে...
গীতবিতান
দুয়ার এঁটে বসে আছি হে,
চপল এ পৃথিবীতে আমার বুঝি আর স্থান হল না।
কত কারুকার্যময়, কত খিস্তিময়, অ-পূর্ব সব কথার রাজ্যে
ঘুরে ঘুরে পিপাসায় ও ক্লান্তিতে যখন নেতিয়ে পড়ি,
তখন তুমি এসে হাত ধরো, নিয়ে চল রূপসাগরের পাড়ে,
ডুব দিয়ে আকন্ঠ পান করি অমৃত,
তারপর ঘুমিয়ে পড়ি তোমার কোলে।
আজকের এ পৃথিবী বুঝি আমার নয়,
অনাত্মীয় এই পৃথিবীতে
হে অতীত, এখনও শুধু তোমাকেই
আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছি।
কালবোশেখি
সারা আকাশ জুড়ে চেয়ে আছে
নিষ্পাপ দুই চোখ
দুর্যোগ কাটতেই নামল
অঝোর ধারায় বৃষ্টি
অ – ঝো – র ধারায় ...