বিকাশকুমার
সরকার
স্বগতোক্তি
প্রকৃতির প্রয়োজনে জখম আমার উৎসমুখ
অনর্গল জেগে থাকা স্বাভাবিক তার কাছে, ঘুম
নিঃশেষ ভয়ে কাতর নিজেকে তবু প্রমান করেই ছাড়ল
শুভযাত্রায় বেরনো সমস্ত পথের সেই একমাত্র আশ্রয়
আশানুরূপ এমন চিন্তায় অস্থির ভ্রূণ—
আজীবন ভাবল শিরোপা গুরুত্বহীন অন্ধ
তবু উপলক্ষ আমি নিঃশব্দ পাইপে ঢেলে দিচ্ছি নিরুপায় কালো
হাসি
স্বার্থক সৃষ্টির মর্মোদ্ধারে
এভাবে দিয়েই যাচ্ছি একের পর একা পরীক্ষা
ফলত আহরণের ভাষা বলতে বুঝেছি বুকের নিবিড় ক্ষত—
বাস্তব ভাবনায় জিইয়ে রেখে নৈতিক সংক্রমণের রহস্য
আহত সাধারণের মতো দেখি এইসব সরীসৃপ স্বপ্ন
সৈকতে আছড়ে পড়লে যাকে তুমি বল প্রতিবাদী ঢেউ...
তারপরও নির্বিকার সৌরফল
খোসার পরবর্তী খাপে লুকিয়ে রাখছে এমন বাৎসল্য রস!
অসমীচীন
হরণের নকশা
সংযমে ভুলে যেতে বসেছি আমি জীব—
জড় যেকোনো মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠার ধরেছি জেদ
সুযোগ পেয়ে এই অচ্ছুৎ উপভোগ অভিশাপ দিচ্ছে
আস্বাদন বিমুখ হয়ে থাকবে তুমি মরীচিকাময় মানুষ
গতানুগতিক জীবনে তোমার এই সত্য ফেলবে প্রভাব
সেখানে বাঁধনহারা ভাব একটা স্বাধীন ধারণা মাত্র
জানা হলো না তোমার, শরীরে আলোকলতার ভূমিকা কত
রক্তরাগ উৎসেচকের আঘাতে হয়ে যায় ছিন্নভিন্ন
সুনামের সঙ্গে আপাদমস্তক ছড়িয়ে পড়বে বলে, স্বাভাবিক
এই সাধনার উপর জমে উঠছে তাই আমার একরাশ অভিযোগ
পছন্দ না হলেও এমন নানা আয়োজন করছি, নিরুপায়
কপালে নামছে শুভকামনার ঢল...
জরুরি এমন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাওয়া
সুবিধা পেয়ে আমাকে ভাসাচ্ছে নির্ভুল
অন্ধকারে আলো দেখানো একটা বদ্ধমূল ভাবনার মতো
উপড়ে ফেলতে গিয়ে বুঝলাম—
এখানেই ফুরিয়ে যাবে জ্বালানি হিসাবে আমার সর্বশক্তি
অভিমান থেকে শুরু হওয়া এমন গোপন ক্ষরণ
নিংড়ে নিচ্ছে স্বচল জীবনের ধর্ম...
ধীরে ধীরে সেজন্যই প্রাণের বিপরীত হয়ে উঠছি
সক্রিয় করতে যোগাযোগের সমস্ত মাধ্যম
সন্দেহের চোখে তবু নিজেকে দেখছি
এই সত্যে আমি কতটা সঠিক।
দীর্ঘ
ছায়ার জ্যামিতি
আলোর নীচের অন্ধকার আমাকে যদি উচ্চতা মেপে চিনতে চাও
তাহলে মনস্কামনা পূর্ণ করার আশায় বাঁধতে এসো না এ গাছে পাথর—
ডুবিয়ে রাখো অক্ষর খাটানো শব্দের রঙিন সুদে
নিজেকে রাঙিয়ে চোখ যেমন সবসময় দেখার ভান করে !
তুমি তো জানো দৃষ্টিশক্তি শুধুমাত্র মনের দখলে থাকে
তবু পুষে রাখছ শিকার, তোমার কি সত্যিই আছে তাকে কাঁটা ছেঁড়া
করার অধিকার
এখনও অবুঝ তুমি বুঝলে না জিভে থাকে না, স্বাদকোরক থাকে
রক্তে
ফলত অবিশ্বাস করো এতদিন ধরে বিশ্বাস করা আমাকে
শুধু এড়িয়ে যেওনা, তৈরি করো আমার সঙ্গে অনন্ত বিচ্ছেদ
শ্মশান যখন আনকোরা আকর্ষণের শেষ আশ্রয়
ম্যানিয়া
পিচ্ছিল সুড়ঙ্গের ভাষায় কথা বলে এখন মায়াবী আঙ্গুল
মুঠো আলোয় ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য অপেক্ষার প্রহর—
সঞ্চয় থেকে ছেঁটে ফেলে তাই পরস্পরের যে টুকু যা বাড়তি
তবু মুখোমুখি গল্প গুজব করা আমাদের ভাবছে পুতুল
যদিও ফিকে হতে দিইনি কোনও কিছু...
এখনও আগ্রহ অটুট এদেহের জ্বালানী মধু
কথকতার আদলে মিশিয়ে রাখছে যা কিছু সব সবুজ
স্বরের তলায় তখনও তুমি তরল—
আমাকে পাত্র ভেবে যত পারো উচ্ছিষ্ট ঢালছ!
প্রকৃতির দান এসব, জানে অগাধ জন্মজল, তাও
ভয়পায় অনুসন্ধানে উঠে আসা গর্ভশূন্য অবস্থা দেখে
যেমন অস্থানে অযোগ্য বলে শুধু শুধু কৃপণ ভাবছ তুমি আমাকে
জানি আবহমান এই বেঁচে থাকা একান্ত নিজের
মুহূর্তে ডুব দিয়েও ভেসে উঠছি অলৌকিক ক্ষমতা বলে
বার্তাবাণ আছড়ে পড়ার আওয়াজ শুনে
তখনও সবার হাতে শক্ত করে ধরা অজ্ঞানতার ঢাল
শব্দ ঢুকতে না দিয়ে বুকে, ডেকে আনছে চিরস্থায়ী অসুখ
ধাপে ধাপে একদিন ঠিকিই বুঝবে, এত কিসের ফিকির এসব
গতানুগতিক আশ্রয়কে কেন মনে হয় শ্মশান
অতিথি হতে চাওয়া আদরের কাছে সর্বস্ব উজাড় করার পর
বুঝেছি যখন, বিরল মুক্তি মানে বিচ্ছেদ
মরিয়া মনবাহন তারপরও নিরুত্তর, তোমার পিছু পিছু
ছুটছে...
অনিশ্চয়তার
নিজস্ব ভাষা
আবারও অনিশ্চয়তায় পেতে রাখছি বৃত্তি
প্রলোভন ছাড়াই প্রাণ সঞ্চারে আসা শব্দ
যদি করতে পারি মগজ-মাতৃক শিকার
সেই আশায়...
নিপাত্তা জ্ঞানের অনুসন্ধানে আমি, সজাগ
অবসরে তুলে এনে তাদের স্বপ্ন জমাচ্ছি মাথায়
যেন মাপজোকের বাইরে চলে যাওয়া সেই সব চেহারা
দেখার জন্য আমাকে হতে না হয় আর অন্ধ
এই অসম্ভব মুক্তির মানে কিন্তু অন্তহীন সত্য
তবু উৎসাহ তৈরিতে অব্যর্থ খুঁজি মূল্যায়নের আড়াল
যাতে পরিহাস প্রিয় তুমি, ছিনিয়ে নিতে না পারো—
আমার জখমে তোমার তঞ্চনের অধিকার