তৈমুর
খান
বর্ষা
সংবাদ
__________
সহজ মুখগুলি হাওয়ায় ভেসে উঠল
পরিজ্ঞাত নীলিমায় অবগাহন হোক
ঈশ্বরের কাছাকাছি উপলব্ধির চোখ
আত্মনিবেদনে চেয়ে থাকে ।যদিও
বিরহমায়া অনালোকিত প্রয়োগে
অন্ধকারে উড়ে যায় বিশেষণ
তাকেই বিশেষ্য বলে জানে সব লোক
মৃগরাজের পদচারণায় কারও পতাকা কেঁপে ওঠে
দেখি অরণ্য সঞ্চার হয় গার্হস্থ্য জীবনে
ঘন ঘোর বিহ্বল পৃথিবীতে সব প্রেমিকেরাই
মেঘদূতের পোশাকের রং চিনে নেয়
দিগন্তের এপারে ওপারে দ্বিপ্রহর
মাটির ফাটলে জমে শোক
অবশেষে কান্নার ভেতর বর্ষা আসে
দুই কূল থই থই ভাসে আনন্দলোক
নিজেকে
বসাই
_____________
নিজেকে বসাই আমি একাকীর কাছে
নিজেকে বসাই আমি বেদনার কাছে
এই যে পুকুর পাড়, গোরুরা ফিরছে একে একে
বাঁশঝাড় , মাটির বাড়িতে সূর্যের শেষ আলোটুকু
ভিক্ষার মতো পড়ে আছে ।
আমি শুধু সহ্য করি খিদে
আমি শুধু সহ্য করি পিতার অসুখ
কারও কাছে আমার কোনও নিবেদন নেই
খালি গায়ে গ্রীষ্ম চুম্বন করে যায়
দরিদ্র গ্রামের মুখ চেয়ে থাকে দূরে
নির্জন শাড়ির পাড় ঝুলে নামে
স্বপ্নেরা চৌকি বানায় শয়ন ঘরে
কে মহৎ , কে মহান —খুঁজি না আর
নিজেকে বসাই পথে , গোধূলির নিঃস্ব কলোনিতে ।
বটপাতা
________
যে প্রেম এসেছিল
তাকে নির্লজ্জের মতো বাঁধিনি
তার কিছুটা অমৃত বটপাতায় দেখেছি চেটে চেটে
আজ আমি শূন্য বিলাসী
সাদা হংস পালকের মতো হেসে উঠি
প্রেম খুব গৃহকর্ম নিপুণা হয় নাকি ?
অথবা মেদ মাংসে শরীর সর্বস্ব এক পাখি?
বিলাপ বিলাপী কেউই জানে না -
আমি শুধু বটপাতা চাটি
আমার আকাশময় অতিলৌকিক আলো
অমৃতের মৃদুমন্দ গাভী
সহিষ্ণু পল্লবের মর্মর কাঁপন
স্মৃতির চৌকাঠে দাঁড়ানো অবেলার সাদা সজনে ফুল
অধিবেশন
_________
ভালোবাসা কোথাও নেই
একটা মুরগি একাই ঘোষণা করছে
কলকারখানার শ্রমিকরা আবছা সন্ধ্যা মেখে
বাড়ি ফিরল
আজ চাঁদ উঠবে না
জিঘাংসা ঘুরছে ছদ্মবেশে
ফুটবল খেলার মাঠের রমণীরা
কেউই বিশ্বাস করে না মুরগির কথা
কমলা রঙের পতাকা উড়িয়ে
চারপাশে চুম্বন বিছিয়ে দিচ্ছে
পৃথিবীর সমস্ত অধিবেশনেই
তখন রঙিন কাপে চা আসতে শুরু করেছে
কেউ কেউ বলছে, আজ কফি খাওয়ার দিন !
আকুতি
_______
ধর্ম লইয়া কী করিব?
যে ধর্ম মানুষ করিতে পারিল না
প্রেম শিখাইল না
খুন করিবার উৎসাহ প্রদান করিল
সেই ধর্মে আমার কী কাজ?
স্বর্গ চাহিলাম না, অমৃত চাহিলাম না
মানুষের দুঃখের পাশে দাঁড়াইয়া
অশ্রু মুছাইতে চাহিলাম
এত রক্তপাত, এত নিষ্ঠুরতা
এত অন্ধকার !
পথ রুদ্ধ হইয়া আসিল
হায়! হায়! কবে আলো ফুটিবে?
ভোরের অপেক্ষা করিতেছি
আমাকে মানুষ হইতে দাও
আমি ধার্মিক নহি , মানুষ হইব।