শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৭

অনুক্তা ঘোষাল





অনুক্তা ঘোষাল

আঁধারের প্রতিলিপি

চোখের আঁধার দেখে দূর বালিয়াড়ি
জলে থাকে হিসাব, কত লাশ তাতে
আলোর পতাকা হাতে শববাহী গাড়ি,
মৃত্যুর খাঁচা খোলে রক্তপ্রপাতে।

ষোড়শীর দেহখানা আবৃত ছিল? নাকি
লোলুপের জিভে হল চেটেপুটে গ্রাস
নখরের সংস্রবে চোরা সে কুহকি,
সভ্যতার কাঁধে ফেলে প্রশ্রিত শ্বাস।

রক্ত জমাট বেঁধে কফিনের হিমে
আড়ষ্ট মোমে খোঁজে শেষ আশ্বাস ,
নিথর গোঙানি ফের স্থির হাত তুলে
ছিন্ন যোনিতে পোঁতে সভ্যতার লাশ।

সমাজ কী আজও চুপ মুখোশের ভিড়ে?
নিজ হাতে নিজ জিভ ফেল তবে ছিঁড়ে।






একটি অন্য প্রেমের কবিতা

যখন আমি একলা বিরান পথে
হাঁটছি একা হাজার লোকের ঢলে ,
শিহরণের শেষ লহমাটুকু
আজও লেগে শরীরি বল্কলে।

সনির্বন্ধ রাতের ফিসফিসানি
না হওয়া শেষ কথা গোলমেলে,
ভালোবাসা পাঠিয়ে দিলাম তোকে
বহুদিনের জমা চোখের জলে।

মিলিয়ে গেছে অবুঝ অন্তরালে ,
গলার নীচের অঙ্গীকারের ছাপ,
অপূর্ণতার ফুটন্ত বিভ্রমে
ক্ষুণ্ণ প্রেমের সূক্ষ্ম পরিমাপ।







আজও কিছু কথা।।

আজও কিছু কথা  মগজে ভিড় করে থাকে
ঠোঁট বেয়ে কিছু  নামে পাতে।
লাগামের পোষ মানে  কিছু দিগ্বিজয়
কিছু শুধু দূরে হাসে গন্ধে মাতাতে।

তবু আজ ধরাধরি,মাখো তেল ফেল কড়ি
অন্ধকার  বুক চুষে খায়।
আঁশ হুল ছুলে কেন,পরিপাটি  আঁচড়ানো
পিঠ টান। স্ক্যান্ডাল,পাতায় পাতায়।

এইভাবে তড়িঘড়ি নাম বাড়ে ভুরিভুরি
কিছু মরে বেঘোরে,চোরা কোনো বাঁকে।
তবু কিছু উস্কায় চাহনির মহিমায়
অন্ধকারে ঝোঁকে মুখ দুপায়ের ফাঁকে।






আমার প্রতিমা

আমার প্রতিমা,রাতে দাঁড়ায় চোরাগলির ধারে,
অশ্রুজলে সিক্ত কায়া,বিকায় নির্বিচারে।
আমার প্রতিমা নিয়ত সাজায় নিজ যৌবন চিতা,
কান্না গহন কলিজা মাঝে ওষ্ঠে হাসির স্মিতা।
আমার প্রতিমা যজ্ঞকুন্ডে দিয়েছে আত্মাহূতি,
তবুও হীনা, পায়নি সমাজে সতী-সাবিত্রী স্তুতি।
আমার প্রতিমা ঠাঁই পেল কই তোদের ঠাকুরঘরে?
সোনার দুর্গা পতিতা নামেই কাঁদছে চুপিসারে।






আমি  ফের এসেছি

আমি ফের জ্বলেছি তিলোত্তমা,বন্দি বিলাপ মাঝে
কান্না গহন বিষাদ রাতে নিষিদ্ধ সমাজে।
আমি ফের এসেছি পতিতা মায়ের নিঃস্ব মলিন ক্রোড়ে ,
মুক্ত আলোর নব্য নজির,কালের অন্ধকারে।
আমি ফের লড়েছি ইহুদী মেয়ের নিচুপ আর্তনাদে,
অস্থি জলে সিক্তা নারী দুরন্ত সংঘাতে।
আমি ফের হেঁটেছি নগ্ন মিছিল,স্বত্বা স্বাধীন পণে,
আত্মগ্লানির নিত্য ছোবল নীরব অভিমানে।
আমি ফের এসেছি,ফের জ্বলেছি দৃপ্ত সবল বুকে
আমি মরেও বেঁচেছি লক্ষ হাজার নারীর স্বত্বা রূপে।
                                        আমি মরেও বেঁচেছি লক্ষ হাজার নারীর স্বত্বা রূপে।