শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৭

চয়ন ভৌমিক



চয়ন ভৌমিক

অন্ধত্ব কাটার পর

বড়ো হতে হতে,
-   ছেড়ে যায় হাত।
তখন হাঁটতে হয় একা
যেমন দিনে সূর্য হাঁটে
- বা ভরা জ্যোৎস্নায় রাতের চাঁদ।

মনে হতে পারে
তারাদের মত সবাই তো পাশে
           --  খুব কাছাকাছি
সবাই স্বজন, পরিধিতে আছে,
যাদের তুমি সেভাবে কখনো দেখোনি।

ঠিক তখনই, সামনে যাও
             কাছ থেকে চেনো
হয়তো অসম্ভবকে একটু স্পর্শ দাও।

ছুঁতে গিয়ে দেখো
কতোনা তফাৎ হাত থেকে হাতে,
এক নিঃসঙ্গতার সাথে আরেক শূন্যতায়
         হয়ে আছে ফাঁক লক্ষ কোটি আলোকবর্ষ।

তুমি হীরামণ, এসব পীড়ন
             আগে তো জানতে পারোনি।





বিচিত্র এক সকালের কথা

যেরকম ভাবে এলে আচমকা,
সেরকম ভাবেই সূর্য ওঠে নিশীথের দেশে।
ঠিক সেভাবেই বৃষ্টি ভিজিয়ে দেয়
চাষের ক্ষেত আর গঞ্জের খামার বাড়ি।
হাটে আর মাঠে দুলতে দুলতে ফিরে আসে
কোমর নিকানো লাল পাড়, নীলাভ আকাশ।
যেই মুহূর্তে ঘণ্টাধ্বনি হল দূরের গির্জায়,
গলবস্ত্র হয়ে সকাল সেরে উঠলো স্নান,
বাজারের ফর্দ হয়ে উঠলো জীবন্ত, সাইকেলের চাকায়।
শহুরে কিশোরীর আড়ামোড়া শীত,
লুকানো উত্তাপ খুঁজে ঠোঁট চিপলো কোন স্বপ্নের বুকে?
এটুকু জীবনই চোখ মেলে দেখি আমি,
আমার এই সামান্যতেই হেসে ওঠা জানলায়, চিলেকোঠায়।
এই নিক্তিভরা উল্লাসই রবিবাসরীয় সকালের,
ছোলার ডাল আর ফুলকো লুচি যেন,
এই ভাবেই মেঘ সরে গিয়ে,
রোদ হেসে ওঠে শীতের বারান্দায়।






অন্ধকার ও আশীর্বাদ

এই মুহুর্তে দাঁড়িয়ে বলতে পারছিনা,
কী অপেক্ষা করছে পরের মুহুর্তে - দরজার ওপাশে।
অনেক কিছুই হতে পারে জানি,
বউ ফোন করে বলতে পারে,
বাড়ির সব চাবি হারিয়ে গেছে,
মেয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠে
আঙুল তুলতে পারে, পুল কারের ড্রাইভারের দিকে।
আচমকা ফুরিয়ে যেতে পারে আমার
পুরোনো গাড়ীর হাওয়া, আর আমি
হাঁটতে থাকি মাইলের পর মাইল।
অযুত সম্ভাবনা, ধারনাগুচ্ছ ভেসে যাচ্ছে মেঘের মত।
আর একটার পর একটা অভাবনীয়, অহেতুক
ঘটনা ঘটে যাচ্ছে সমস্ত বদখত দিন ধরে।
সমস্ত সন্ধ্যার আবছা আলোয়,
নেমে আসছে অনাহুত রাত্রির নির্বাসিত কুকুর।
সাবধানতা, তুমি এক অর্থহীন বয়ে চলা চকোলেট,
ভাগ্য তুমি এক সুচতুর চকচকে ধারালো ছুরি,
তোমাদের নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দেখি
জীবন মানে এক সুন্দরী নদী,
আর মৃত্যু - আমার দুচোখের বিষ সে।






কৃষক

চারা নিয়ে সুখে আছি।

   তাকিয়ে দেখেছি  -
    চতুরাশ্রমের উঠোন ঘিরে
             মহীরুহ গঠনের দায়।

আমি তো ঘোর সংসারী,
             অভ্যাসের দাস, হায়।

পালনের ধর্ম মন্দির আমার,
                    
কখনো ভাবিনি -
এছাড়াও আরো কোনো আয়ু,
        হতে পারে বাঁচার উপায়।।   





ঠিকানা


যতটুকু প্রকাশিত জমি,
              যতখানি কোমল পলল

সেখানেই রোপণ, অনন্ত অমৃতের বীজ।


যে গাছ হবে সেই মাটি ফেটে

তার বাকলে, পাতায়, ফুলে
             রত্নের মতো লেগে আছে

                 আমার একান্ত তৃপ্ত খনিজ  .....