শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৭

সৌমিত্র চক্রবর্তী




সৌমিত্র চক্রবর্তী

প্রাক কথন
----------------------
এসেছ! স্থিত হও।
নৃতত্ত্বের রুখাশুখা পুঁথি
মেঘরঙ সাত্বিক শাড়ি
ছুঁড়ে ফেল ঘরের কোণে,
ঘাম মোছ, শ্বাস নাও
আজ সাঁতারের দিন।
বসেছ! স্ফীত হও।
অনুরাগ সিঁদুরের রঙ
মেখে নাও
সফেদ রোদ্দুর গালে,
অন্তরঙ্গ বাসে
থাকা মাওয়ালি বন্ধন
খুলে ফেল, ছুঁড়ে দাও
আবছায়া ঘরের কোণে:
বিভঙ্গে মায়াবী হও
চোখের তারায় এঁকে নাও
নিষাদ মল্লার রাগ;
আজ যে সাঁতার কাটার দিন।
****************




জলীয়
----------------------
মাছেরা রেলিং বেয়ে জল থেকে উঠে এসে
জলছবি আঁকে
মাছেরাই চুমু খায় মাছেদের ঠোঁটে।

অগাধ সন্ধ্যেবেলা নিপাট ভদ্র হয়ে
চা এ, চকোলেটে মেশায় জলরং কন্ট্রাসেপটিভ
সংক্ষিপ্ত স্তনের আবরণে খেলা
করে, ওড়ে মাছেদের উড়ুক্কু পাখনা।

বিহ্বল শীত শীত জল-কুমির খেলায়
জলপরী ইশারায় ডেকে নেয়
যাযাবরী জলসঞ্চয়।
            *************




বিমূর্ততায়
-----------------------
সারা পার্বত্য জীবন জুড়ে বাঁশির আত্মহনন
জলপিপি নেবে উজ্জ্বল ছটপটে
কিশোরী বয়স ককটেলে গুলে দেব
ধূ ধূ শূন্য সরষের ক্ষেতের মাঝে আঁকাবাঁকা রাস্তায়
রূপোলী ফ্রেমে প্রেম এঁকে দিলে
চুলের দুপাশে আল্পসয়ের বরফ বেছে নিও,
অস্থির পশ্চিমে ফেলে রাখা পেগের ভেতর
মুছে যায় সিঁদুরের রঙ...
আমি তো জানি গ্যালাক্সি বিছানো
সযত্ন আদর তুলে রাখা গ্রহানুপুঞ্জের ভাঙাচোরা লাশেদের ফাঁকে,
দিন থাকে যান্ত্রিক দিনলিপি ত্বকে,
ঠোঁট রাখি উচ্চকিত সুতনুকা ঠোঁটে
হারালেই ফের খুঁজে বসত গড়ি জংলা নিষাদভূমিতে।
                  ***********




নষ্ট কালে
-------------
মন এদিক ওদিক
নষ্ট ছলা
ছলাত্ শব্দে
তিস্তা ভাসায়
তিস্তা ঢোকে
বন্ধ ঘরে
মন হাঁচোড় পাঁচোড়
অসৎ বিচার
কূটকচালে আঁকড়ে ধরে
তিস্তা হঠাৎ
সাপ হয়ে যায়
অ্যানাকোন্ডা হাঁ গর্তে
গিলতে থাকে
আগল পাগল
মন লাবডুবডুব
ইচ্ছে সাঁতার
ভুসো মেখে
বহুরূপীর মাস্তুতো ভাই
নোংরা সময়
ছিটমহলের গোল্লাছুটে
মন খুঁজেপেতে
সাদা ক্যানভাস
আবার তুলি
ফের জলরং
আঁকতে হবে
আঁকতে হবেই
মনের সিধে
জ্যান্ত ছবি
আচ্ছা রে বস্...
***********





খিদে
-------------
ল্যাম্পপোষ্টের মাথায় জ্বলতে গিয়ে
সূর্য লাইটহাউস হয়ে গিয়েছিল।
অপার্থিব আলোছায়ায়
লাল অথবা কাঁচা ধূসর  রঙের ডুবসাঁতারে
পৃথিবীর তাবৎ পূর্ণ গাছ পেছনে
রেখে, সামনে মৃতপ্রায় আগাছার
সাক্ষ্য সম্বলেই  টেরাকোটা মূর্তিরা
দ্রাঘিমা মাপতে থাকে
পাঁজরের অপর্যাপ্ততা নিয়ে।
মাঘপূর্ণিমায় যক্ষীর ফেলে যাওয়া ডাক
তখন শীতের খন্ড বেয়ে ছড়িয়ে পড়ছে
                               অভুক্ত পাকস্থলী অন্ত্রে।