রবিবার, ২১ মে, ২০১৭

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়



হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়


অক্ষর
--------

অক্ষর যে এত গরম হয় আমার জানা ছিল না। অক্ষর যে এত ঠান্ডা হয় সেটাই বা কি আমি জানতাম। অক্ষর আমায় তার ঝুলি থেকে একটার পর একটা রঙ বার করে দেখিয়েছে। একসঙ্গে অনেক দিন ঘর করার পর এটাও জেনেছি অক্ষরের পিঠে দুটো ডানাও আছে। একবার সে আমাকে সাত সমুদ্র তের নদীর পার থেকে ঘুরিয়েও এনেছে। সত্যি কথা বলতে কি অক্ষরের সাথে এক ছাদের নীচে এইভাবে ঘর না করলে তার সম্পর্কে অনেক কথাই আমার অজানা থেকে যেত। আসলে মানুষের মুখের গুহা সম্পর্কে আমার ধারণাটাই ছিল আবছা আবছা।                    
          
******************




লাল বিন্দু
 --------------

লাল বিন্দুটাকে ঘিরে আমরা সবাই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছি আর আমাদের চোখের সামনে ধুলোয় গড়াগড়ি খাচ্ছে অর্থ, যশ, খ্যাতি। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার ফুটবলের মতো দু'একটাতে পাও লাগাচ্ছে। আমরা জানি লাল বিন্দুটা নিভে গেলেই কক্ষচ্যুত তারকাদের মতো আমরা বিভিন্ন দিকে ছিটকে যাব এবং প্রত্যেকেই হয়ে উঠব এক একজন গোলকিপার। তখন পায়ে নয় বুকে জড়াতেই বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ব।
                              
*******************





মাটিতে পা
--------------
গায়ে একটু ফাগুনের হাওয়া লাগলেই মন উড়ে যায় গ্রামে। মনে পড়ে এই আমিই না একদিন মাথায় ঘুড়ি নিয়ে আলে আলে ছুটেছিলাম। বুঝতে পারি শহর এখনও আমাকে পুরোপুরি গ্রাস করতে পারে নি। রাস্তার ধারের গুমটিতে একমাত্র কৌটোয় গোটা চারেক বেকারির বিস্কুট আর এক কেটলি গরম চা নিয়ে বসে থাকা লোকটাকে আমি এখনও ঈর্ষা করি। জোর করে কেটলি নিয়ে মাটির ভাঁড়ে নিজের চা নিজে ঢেলে নিই। বুঝতে পারি আমার ভেতরে একটা মা বেঁচে আছে এখনও। আমার দু'পা এখনও মাটিতে। উড়ে যাওয়ার গল্প শুনলেও, মনে ওড়ার ইচ্ছে জাগলেও পুরোপুরি উড়ে যাব না কোনোদিন।
       
***************




অন্ধকারে ডুবে
---------------------

সারাটা দিন উঠোন জুড়ে সাজিয়ে রাখলে তোমাকে। প্রতিটি পদক্ষেপে তোমার ক্ষমতা প্রকাশ পাচ্ছিল। সবাইকে জানিয়ে দিচ্ছিলে 'তোমার উঠোন'তোমার প্রতিটা মুখে জ্বালানো ছিল বাতি, তবুও উঠোন জুড়ে ছিল চাপ চাপ অন্ধকার। কোনো কোনো জায়গায় যেন খুব চাপাস্বরে কেউ কথা বলছিল। তাদের কথাতেও উঠে আসছিল চাপ চাপ অন্ধকার। কোনো কোনো জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল বিষাক্ত সব পোকামাকড়। নিজেকে দেখে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলে একবার। তোমার উঠোনে পা রেখেছিল কেউ। হারানোর ভয়ে তাকে বড় ভয় পেয়েছিলে তুমি। নিজের সামনে একটা আয়না রাখলেই পারতে। কিছুই হারাতো না বরং নিজের প্রতিটি পদক্ষেপ পড়ে নিতে পারতে। তোমাকে আরও গভীর অন্ধকারে ডুবিয়ে দিয়ে সে এখন ফিরে যাচ্ছে।
            
 ******************





খোলা আকাশের নীচে
-------------------------------

খোলা আকাশের নীচে
দাদুর রেখে যাওয়া জমি
বাবার রেখে যাওয়া ঘর
বুকে নিয়ে সে একা বসে থাকে ।

খোলা আকাশের নীচে
আজ রঙ বদলে বদলে যায়
লেখা হয় অন্য মানুষের গল্প
কাহিনীর শেষ কোথায় সে জানে না ।

খোলা আকাশের নীচে
আজ কোথাও নেই তার দাদু বাবা
নিজেকেও সে কোথাও দেখতে পায় না
তবুও দাদু বাবার জমি ঘর বুকে নিয়ে সে
                                                 একা বসে থাকে ।
     ******************