রবিবার, ২১ মে, ২০১৭

ঈশানী বন্দ্যোপাধ্যায়



ঈশানী বন্দ্যোপাধ্যায়


অমর

তীব্র দহন জ্বালা,
পোড়ায় অঙ্গখানি
তোর হৃদয়ের প্রখর তাপে
ঘটায় জীবনহানি।
যেমন করে সূর্য হানে
প্রখর তপন তাপ
তেমনি করেই হানিস রে তুই
তোর হৃদয়ের তাপ।
রোদে পুড়ে জলে ভিজে
মানুষ যেমন সহন শেখে,
তোর ঐ তীব্র দহন তপন তাপে
তোর হৃদয়ের আগুন জ্বালায়
পুড়তে পুড়তে সহন শেখা।
নাভি যেমন না পোড়ে না
শেষের চিহ্ন যায় রেখে যায়,
আমি তেমন আর পুড়ি না
তোরই বুকের দহন জ্বালায়;
তোরই মনের আগুন তাপে
নাভির মতই আর পুড়ি না;
তোর কাব্য গাথায়, তোরই গানে
তোর জীবনের নাভি হয়ে
জীবন যেন যায় কেটে যায়।।




শেষ বিকেলের বৃষ্টি

আমি ফাগুন হাওয়ায় ভেসে
মেঘ হতে চাই শেষে,
আমি ঝড় হতে চাই
কালবোশেখির বেশে।
কালবোশেখির মাতাল
হাওয়ায় ভেসে
তোমায় উড়িয়ে নিয়ে যাব
মেঘের দেশে, নিরুদ্দেশে।
বৃষ্টি হয়ে ঝরব অঝোর ধারায়
তোমার বুকে,তোমার মুখে,
শেষ বিকেলের বৃষ্টি আমি
ঝরব তোমার চোখে।
ভালবাসার পরশ দিলাম এসে
শান্ত তুমি, রিক্ত তুমি, নিঃস্ব তুমি
আমায় নিয়ে ভাবো? আমি
শেষ বিকেলের বৃষ্টি হব
তোমায় ভালবেসে ।।





বসুন্ধরা

তোমার বুকেতে চাষ করি মোরা
তোমার বুকেতে খাল কাটি,
তোমার বুকেতে বাস করি মোরা
তোমার বুকেতেই লাঠালাঠি।
তোমার বুকেতে দ্বন্দ্ব ভেদাভেদ
তোমার বুকেই অপার সৃষ্টি,
তোমার বুকেতে ভায়ে ভায়ে ভেদ
তোমার বুকেই যত অনাসৃষ্টি।
তোমার বুকেতেই অপুষ্টি ভরা
শিশু রোগে রোগে রোগগ্রস্হ,
তোমার বুকেতে না খেতে পাওয়া
মানুষেরা ক্ষুধায় ক্ষুব্ধ ও ত্রস্ত।
তোমার বুকেতে গরীবেরা শুধু
অপমানে সন্দেহে অপদস্হ,
তোমার বুকেই ধনীরা ধনের
ছড়ায় দিকে দিকে শত অস্ত্র।।





পরিব্রাজক

সেই বসন্ত আবার ফিরে এল
সেদিন তুমি ছিলে পরিব্রাজক
সেই পশ্চিমের পাহাড়ী পথ
বেয়ে বেয়ে রডোড্রেনড্রনের দেশে;
আমি ছিলাম অনেক দূরে তোমারই
চিন্তা মগ্ন,মন ফাগেতে রাঙিয়েছিলাম
তুমি রঙে রঙে রঙিন হয়েছিলে
তখন তুমি রঙিন ফুলের জলসায়;
তারপর? তারপর তুমি এসেছিলে
ঘুম ঘোরে, সেই সে সূর্য ওঠা প্রাতে
চোখে বুলিয়ে দিয়েছিলে ঘুমের
আস্তরণ, কানে কানে বলেছিলে
ফিরে এসেছি, দেখ, ভাল আছি
আসছি তোমার কাছে একটু
অপেক্ষা কর; আস্তরণ সরে যেতে
দেখি তুমি এসে চলে গেছ,
ছটফট করে উঠেছিলাম তোমার
জন্য ডেকেছিলাম কোথায় গেলে!
তুমি যেওনা নীল আকাশ, তুমি
মেঘে ঢেকে যেওনা নীল আকাশ,
বলেছিলে,দেখো আমি তোমার কাছেই আছি
আমি আসছি তোমার কাছে, চিন্তা কোরোনা।
এসেছিলে নীল আকাশ পরম ভালবাসায়
এসেছিলে, কেন আবার মেঘে ঢেকে গেলে?
কেন চলে গেলে তবে! বৃষ্টি সমাচ্ছন্ন!
এ যে আমার বিচ্ছেদের যন্রণার বাজনা।
আবারও তো পরিব্রাজক তুমি উত্তরের,
যাও বন্ধু যাও, আবারওতো ফিরে এস।
অন্য কোথাও, অন্য কোনখানে! তবে
পরিব্রাজক, আমি অপেক্ষারত তোমার
পরিক্রমা শেষের অপেক্ষায়, অনন্তকাল;
সেদিন সক্রেটিস হতে চাইনি তোমার কাছে
কিন্তু আজ চাই, পরিব্রাজক আমায় সক্রেটিস
করে দাও;আমি সক্রেটিস হতে চাই তোমার হাতে।।





প্রাপ্তি

ভালবাসার আশ্রয়ে হারিয়েছি
আজ তোমার বুকে,তোমার
মনে, গানে, সুরে, ছন্দে, সূর্য ওঠা
ভোরে, তোমার বালুকা বেলায়,
তোমার উদ্দামতায়, তোমার
আলিঙ্গনে, রোমশ বুকে, ওষ্ঠ স্পর্শে,
চুম্বনে, তোমার বাহুর, শরীরের নিষ্পেশনে
আমি হারিয়েছি  আমার সবকিছু
তোমার মাঝে, তোমার বিস্তৃত বক্ষে
অসীম আকাশে, পাখির ডাকে
ও আমার নীল আকাশ
নীল চোখেরই তারা।।