রবিবার, ২১ মে, ২০১৭

রাবেয়া রাহীম



রাবেয়া রাহীম
হার-জিত
প্রেমের  অমিয় ধারায়--যুগল স্নানে সিক্ত হয়ে
ভাবতেই পারো,
তুমি আসল-খাঁটিপুরুষ, ভালো মানুষ
আর আমি নষ্টা-দুঃশ্চরিত্রা।
নইলে... বুকের তিল দেখাই কি করে!
কেন অমন করে!!
আমি ভাবি,
তোমাকে জিতিয়ে আনন্দ আমার হারে
তোমাকে নয় হারিয়ে! 






বিশ্বাস হারাইনি

মহামান্য,
অপরাধ না শুনিয়ে দন্ডবিধি ৩০২ ধারায়
শাস্তির রায় দেওয়া কি উচিত হয়েছে !!
বুকের মানচিত্রে আঁকা আছে যে চিহ্ন
অবারিত-গতিশীল এখন কেবলই স্তব্ধ।
আহত স্বপ্নগুলো সদ্য সমাহিত করে
স্তুপাকৃতি ছাইয়ের দিকে
বুভুক্ষুর মতো চেয়ে আছি;

প্রশ্নাতীত ভালোবাসার বিনিময়ে চাওয়ার ছিলো না কিছুই।
দুইশত ছয়খানা হাড় চিতায় সাজিয়ে
প্রজ্বলিত শিখায় ভালবাসার অর্থ খুঁজেছি
সার্কাসের সঙ হয়ে !!
শুনুন, বিশ্বাস হারাইনি আমি !!





জীবন দেবতা

জীবন দেবতার দেখা পেলাম একবার জীবনের খুব গভীরে
চিনিয়ে দিয়ে গেলো জীবনের ধারাপাত
চলে যাবার আগে অজস্র নীল খাম হাতে ধরিয়ে বলে গেলো
"লিখো চিঠি যখন পড়বে মনে"
মনে পড়ে তাকে--কষ্টে-দুঃখে, আনন্দে-উৎসবে
দৃশ্য-অদৃশ্য সকল অগ্ন্যুৎসবে ।

এক--দুই--অসংখ্য!
চিঠি গুলো নীল খামেই থাকে, ভাঁজে ভাঁজে
বিষাদের শ্যাওলা বুকে জমিয়ে শহরের নির্জন সেমেট্রির দিকে যাত্রা করি
ভয়ানক হাজারো স্মৃতি পাশ কাটিয়ে
রামধনু ছোঁয়া লাগে মনে
কোন আশা নেই
কোন দিশা নেই
তবুও কেন এই নেশা জাগে!!

জেগে থাকা ভাঙাচোরা  কবর
বেল ফুলের গন্ধ শুঁকে অালোকিত বাস স্বপ্নে দ্যাখে
মাননীয় বহু ভাষাবিদ ঈশ্বর--
অনুগ্রহপূর্বক চিঠি গুলো গ্রহণ করুন




অদেখায়-দেখা

কোন এক দূরের শহরে শরতের সকাল
দাঁড়িয়ে তুমি বারান্দায়,
হাতে ধূমায়িত চা
অবিন্যস্ত কাঁচাপাকা চুল
শুষ্ক ঠোঁট,
চিবুকজুড়ে না কামানো দাঁড়ি
সেন্টার টেবিলে সকালের পেপার-
হিমেল হাওয়ায় তোমার নিঃসঙ্গ নিস্তব্ধ সময়!!
ছন্দহীন রুক্ষ বাস্তবতায় সময় গড়িয়ে
পাখির ডানায় ক্লান্তি--
দিন মাসের হিসেব পেরিয়ে
দ্রুত এগিয়ে চলছে জীবনতরী!
বেঁধে দেওয়া প্রতীক্ষার
 সুদুরিয়া প্রহরে বাতাসের হাহাকার
বৃদ্ধি পায় কেবলই দহন
তুমি তো শুধুই আমার,
না দেখেও যেমন দেখি!!
রাতের পর দিন--দিনের পর রাত
আজন্ম লালিত অভ্যাস-
খুঁজি মুঠোর ভেতর তোমার বলিষ্ঠ হাত
আমি আধেক তোমার--আধেক আমার
এভাবেই হয়েছি ভাগ,
তোমার-আমার মাঝে রয়েছে চির জীবনের অনুরাগ।।
কোন এক দূরের শহরের শরতের সকাল!






দূরত্ব

দুজনার মাঝখানে আজ মহাদেশ--মহাসাগর দূরত্ব!
নাকি গ্যালাক্সি?
বোধহয়, তারচেয়েও অনেক বেশী!
জায়গাটা ছিলো হিথরো এয়ারপোর্ট--
লম্বা পথ পরিক্রমার পর যাত্রা বিরতি ছিলো
দীর্ঘ সময় বিমানের ভেতর সেঁধিয়ে থাকা শরীর
মুক্ত বাতাস পেতে ডাঙায় তোলা মাছের মত ফুসফুস হাসফাস।
যদিও টার্মিনাল ভবনটি মোটা কাঁচের ঘেরায়
বাইরে চেয়ে আলোর ঝলকানিতে মন প্রফুল্ল!!
হঠাত বাতাস কেমন অদ্ভুতরকম শীতল হয়ে শিরদাড়ায় কাঁপুনি ধরায়--
একটা ঘোরলাগা পরিবেশ সৃষ্টি
হ্যাঁ তাঁর সাথেই মুখোমুখি !
আটলান্টিক পার হয়ে আমি ইউরোপ ছেড়ে যাচ্ছি এশিয়ার দিকে
আর সে--
হিথরোই ছিলো গন্তব্য---
অচেনা হওয়ার ভান করিনি আজ আর কেউই!
কিছু ব্যথা ব্যাকুলতা
কিছু আকুলতা
ঘন নীল সময়ে ভেসে উঠে একঝাঁক রংধনু,
শালুক-শাপলা,
তুমি কি এখনও প্রবল বর্ষায় কিংবা শীতের রাতে
সেই নদীটির কাছে আমায় আনো?
না কি ভুলেছ ---
হারাই কন্ঠস্বর, বেড়ে যায় গ্রীবার কম্পন, ঠোঁট জোড়াও মৃত
সচল মস্তিস্কে থাকে কেবলি মলিন বিরহ,
বুকে খেলা করে রক্তের প্রবাহ।।

সময়ের সাথে বদলে ফেলেছি নিজেকে---
নাছোড়বান্দা অনুভুতি--বদলাতে পারলাম কই !
কান্নায় অঝোরে বৃষ্টি ঝরে বুকের জমিনে
না কাঁদিনি তখন---চোখের পাতা দুটি ভারি হয়েছিল।।
চারদিক অসংখ্য মানুষের বিবিধ কণ্ঠ ভেদ করে
লাউড স্পিকারের আর্তনাদ "ইয়র ফ্লাইট ইজ অন টাইম"
যাত্রা পথের বিরতি সময় শেস হয়েছে
অশান্ত মনের ডিঙি বেয়ে আমি উঠে দাঁড়াই।
আমার ঘরে ফেরার তাড়া নেই আজ

শীতল বাতাসে শীত শীত লাগছিল খুব ।।