অশোক রায়
বিমুদ্রিকরণ
জীবনটা কেমন যেন ভোঁতা হয়ে গেছে
আকাশের রং টা আর সেরকম নীল নেই
কাগজগুলো সব গোলাপি দেখছি
ধরা দিতে চায় কিন্ত কেউ নেয় না
আহা ওই তো গোপাল নরেশ মিতালি
না ওরা ও মুখ ফেরায়
জীবনটা আর সেরকম নেই কত্তা, ভোঁতা।
খুড়িয়ে চলে বাজার দোকান
লোক নেই গো কেনার, গোলাপি নোটে
খুচরো দেয় না, কাজ নেই,
জীবনটা হয়ে গেছে ভোঁতা।
মন্থন
কজন মিললাম যখন বসেছিল মেলা
আকাশটা উপুড় শীত সন্ধ্যা বেলা
মুখে কথা নেই ঊণ্মুক্ত হৃদয়গুলো
উথালি পাথালি শুধুই করে খেলা
যেদিন প্রথম রেখেছিলাম পা
আমাদের হাত ধরে স্মৃতি সাক্ষী করে
কতো খেলা খেলেছিল
যৌবন সম্পদ ভরা দুপুরবেলা
এখন শীত বিষণ্ণ হারানো সন্ধ্যাবেলা
পলিতমন চারুক্লেশে মন্থন করে
ফেলে আসা টুকরো আলোর মেলা
আমার তোমার সুদীপ্তর রাগিনীর
আরপ্ত আড্ডা ফাজলামি
ঘুমিয়ে আছে তৃপ্তি, ভাল্লাগা
ঘুমিয়ে আছে রাত, শুধু আমি আছি জাগা।
এই এক তুমি
তুমি বললেই কি ভালবাসা আসে
নগ্ন প্রান্তরে কি বন্য আকাঙ্খা জাগে
যা হবার তা ঘটে গেছে মেঘের নীচে
ধূমায়িত আগ্নেয়গিরি চাপা পড়ে
গরম ছাইয়ের আস্তরে
একবার বৃষ্টি হয়েছিল অম্লপ্রাংগণে
একবার তোমার মসৃণ শরীর বেয়ে
সরীসৃপ নেমেছিল না-দেখা কন্দরে
তারপর জীবাস্ম হয়ে লক্ষ বছর
তারাদের ঘিরে ঘিরে আবর্তন
তবু আমি আছি তোমার কাছে
অবয়বহীন হয়ে
গবেষণাগারে বিচ্ছিন্ন
তবু আছি তোমার শরীরে।
শুধু খুঁজে চলি
খুঁজে চলি পরশপাথর যা দিয়ে
তোমাকে পাব বলে ভেবে ভেবে
কত রাত হয়েছে ভোর
রাতের অন্ধকার ঠেলে
নৌকা বেয়েছি জোর
তবু পাইনি সেই তোমাকে
সে সুন্দর গৌরব আভাতে
কত রাত হয়েছে ভোর
তোমার শরীরের সেই সেই কোণে
তখনও জেগে আছে রাত
যে-যেখানে আমি লিখেছিলাম কবিতা
মুখ আর শরীর নিসৃত স্বেদ খরস্রোতা
তারা ঘন জ্বাল দেওয়া ক্ষীর
আকাশ কালো থেকে ধুসর নীল
তবু পাইনি যা চেয়েছিলাম
শনিবার দুপুর রোদে
ঝলমলে ঝলসানো তোমার মধুপ হয়ে।
দরজা খুলে রেখো না
দরজা খোলা রাখলে ও দরোয়ান ভাই
যে কেউ যখন তখন ঢুকে পড়বে
দিনের বেলায় বা রাতে
কখনোই দরজাটা খোলা রেখো না...
যদি কিছু চুরি যায় সব আমারি যাবে
তোমার তো যাবে শুধু চাকরিটা
আমার যাবে ভিতর বাইরে যা আছে সব –
ধূসর পুঁতির মালা শেওলা-ধরা দেয়াল
বৃষ্টির সকাল সাঁঝবাতির আলো
ঝাপসা স্মৃতির আলবাম
ফুটো ঝিনুক পালকের বিছানা
যা কিছু গাঁথা আছে বয়সের বালিতে –
সব নিয়ে যেতে পারে চোর এসে
তাই দরোয়ান ভাই সবসময়
দরজাটা বন্ধ রেখো মনে করে
আমি চলে গেলে।
এল যে শীতের বেলা
গোলাপি অধরে নিলে রোদ শীঞ্জিত চুক্তি।
আকাশ দোলা দেয়। শীত যাবার আগে
হারতে চায় না, একটা দোলা একটু আলো
লেপের নীচে অংগ খেলা করে
রাগ ছিনিমিনি খেলে দোতারায়
তুমি থাক নীল যমুনায়
রাধার কান সোনায়
উষ্ণ অভ্যর্থনা নিয়ে কিছু দোটানা
এস রাত তোমাতে পোহাই স্বপ্ন আরাধনা।
তবু মন ভরে না.......
এত যে তোমায় দেখি তবু মন ভরে না
মনে হয় দিনের পরদা নামার আগে
তোমাকে ফোন করি
কিন্তু তোমার ফোন নাম্বার আমার অধরা।
আজ আকাশে এত রামধনু
তবু তুমি না থাকলে জীবন ধু ধু
দুর্নিবার আকর্ষণে গলে যাওয়া সোনা মুঠোয়
এসো আজ দুজনে মনে রাখার মত
রাত ভোর একটা বারবিকিউ করি।
মাটি
বন্ধু পাশে থেকো,
ঢেউগুলো ক্রমশ এগিয়ে আসছে
পায়ের নিচে একটু মাটি চাই
আমাকে ছেড়ে যেওনা ভাই
একটু কাছে থেকো
হোগলার বনে পা পিছলায়
অশরীরী শন শন চিত্তরোল
আমাকে ছেড়ে যেওনা সোনা,
ঢেউগুলো ক্রমশ এগিয়ে আসছে
সময় বড় কম বন্ধু,
দরজাটা খুলে রেখো......।।
কবিতা
সে আসে আবার ফিরে যায়, কেন।
পলকের দেখা দিয়েই লুকায়, কেন।
যাবি যা না
তবে ফিরে উঁকি দেয়া কেন।
যতগুলো আম ছিল ঝরে গেছে
ক’দিনের ঝড়ে,
ঝড়কে কে পাঠিয়েছিল। হিসেব নেই।
আসলে সে স্থবির
শুধু আলো পিছ্লে যায় তার ফসলে।
কিম্বা আমি স্থবির সে আলো
শিশির মাখা গোলাপের পাপড়ি
নিয়ে আসে রোজ সকালে
তারপর ঘুমিয়ে পড়ে, আমার কোলে।