রবিবার, ২১ মে, ২০১৭

সম্পাদকের কলমে



কবিতার নির্মাণ

আবেগ ও ভাবালুতার সমন্বয়ের কাব্যিক প্রকাশ হলেই যে কবিতার সৃষ্টি হয় এমনটা বোধহয় নয়। যদিও আমাদের মধ্যে অনেকেই অনেকটা সেইরকমই মনে করে বলতে চান যে, কবিতা মূলত আবেগেরই উৎসরণ। এবং আবেগের ধরণই হলো স্বতঃস্ফূর্ততা। তাই স্বতঃস্ফূর্ত আবেগের মুক্তিই কবিতার প্রাণ শক্তি। এমনটাই ধারণা করেন অধিকাংশ কাব্যমোদী মানুষ। বিশেষত আমাদের দেশের লোকসাহিত্যের দিকেও যদি তাকাই, অনেকটাই সমর্থন পাওয়া যায় সেই কথারই। পাঁচালী কথকতা কবির লড়াই পল্লীগীতি ইত্যাদি সমস্ত কিছুর মধ্যেই এই স্বতঃস্ফূর্ত আবেগের যে বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়, সেই প্রকাশেই সাধারণত মজে থাকেন দেশের অধিকাংশ জনসাধারণ। ফলে নাগরিক সমাজেও সাধারণ ভাবে কাব্যপ্রেমীদের ভক্তি ও ভালোবাসা সেই আবেগের স্বতঃস্ফূর্ত উৎসরণের অভিমুখেই যে হবে সে কথা বলাই বাহুল্য। এবং হয়ও। আর সেইখান থেকেই গড়ে ওঠে সহজবোধ্য কবিতা ও দূর্বোধ্য কবিতার দুই শ্রেণীবিন্যাস। যে কবিতা সহজেই বোঝা যায়, সহজেই যে কবিতার বলার কথাটি পাঠক বা শ্রোতার মনে একটি ছাপ ফেলতে পারে, কবিতার বিষয়বস্তুর সাথে পাঠক খুব সহজেই একাত্মতা অনুভব করতে পার, সেই কবিতাই তো সুবোধ্য কবিতা। কিন্তু যে কবিতা পড়ে প্রথমেই চোখ ধাঁধিয়ে যায়, প্রতিটি লাইন এক একটি ধাঁধার মতো লাগে সেই দূর্বোধ্য জটিল কবিতার মধ্যে স্বভাবতঃই পাঠক কোন আনন্দ খুঁজে পান না। পান না মানসিক সখ্যতা। ফলে দূর্বোধ্য কবিতার থেকে পাঠক সাধারণ নিয়মেই যে অনেকটাই দূরবর্তী থাকতে চাইবেন, স্বস্তি বোধ করবেন সেকাথাও বলাইবাহুল্য। অনেকটা যেন সেই মেইনস্ট্রীম বাণিজ্যিক সিনেমার জনপ্রিয়তার পাশে পড়ে থাকা আর্ট ফিল্মের মতো অবস্থা।

এই যে বিশ্বাস, কবির ভাবাবেগের স্বতঃস্ফূর্ত উৎসরণ মানেই কবিতা, মূলত এই ধারণার বশবর্তী হয়েই অধিকাংশ কবিযশপ্রার্থীরই মনে এই ধারণা বদ্ধমূল হয়ে ওঠে যে, সত্যই কবিতা লেখা বিশেষ কোন কঠিন কাজ নয়। ভাষার ওপর একটু স্বচ্ছন্দ চলাফেরা থাকলেই ছন্দতালকে একটু ধরতে পারলেই কবিতার পর কবিতা লিখে ফেলা যায়। এবং তারা লিখেও ফেলেন। বিশেষ করে এই নেটবিপ্লবের সুফলে তাদের এই প্রয়াস বর্তমানে যে বাড়তি মাত্রা পেয়ে গিয়েছে সেকথা বিতর্কের অবকাশ রাখে না। যার প্রমাণ চারিধারে প্রতিদিন জমে ওঠা কবিতার স্তূপ। এ যেন অনেকটা সেই একটু গীটার বাজাতে শিখে গেলেই গলা ছেড়ে হাঁক দিলেই গায়ক হয়ে ওঠার মতো বিষয়। না এই কবিযশ প্রার্থীদের নিয়ে বা গীটার বাগিশদের নিয়ে আমাদের কোন সমস্যা নাই। প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকারের পক্ষে আমরা সবসময়। কিন্তু আমাদের সমস্য হলো, যে কথাটির সূত্র ধরে শুরু করেছিলাম; সত্যই কি ভাবাবেগের স্বতঃস্ফূর্ত উৎসরণই প্রকৃত কবিতা? না কি প্রকৃত কবিতা অন্য কিছু। যে কোন কালেই সাহিত্যের ইতিহাসের দিকে চোখ রাখলেই দেখা যায়, সমকালে সেই সেই কবিতাই বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, যে সকল কবিতার মধ্যে দিয়ে এই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবাবেগের আধিক্য বেশি মাত্রায় প্রকট হয়ে ওঠে। অনেকেই আবার এই জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতেই কবিতার ভালোমন্দ উৎকর্ষ অপকর্ষ বিচারের পক্ষপাতী। একথা সত্যি যে প্রত্যেক কালেই অধিকাংশ জনপ্রিয় কবিতার মধ্যে কবির এই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবাবেগের প্রকাশই পরিলক্ষিত হয়। এখন প্রশ্ন হলো সাহিত্যের মাপকাঠিতে, কালের কষ্টিপাথরে এক যুগের ভাবাবেগ অন্য যুগেও কি সমান জনপ্রিয়তা পেতে পারে? না পায়? আবারও সেই সাহিত্যের ইতিহাসের দিকেই দৃষ্টিপাত করলেই আমরা পেয়ে যেতে পারি আমাদের উত্তর। এককালের ভাবাবেগ যে অন্যকালে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বিশেষ কল্কে পায় না, সেই সত্য আমরাও কি কম বেশি জানি না? জানি।

জানি বলেই তো আবারও সেই প্রশ্নের দারস্থ হতে হয় আমাদের। কবিতা কি সত্যই ভাবাবেগের স্বতঃস্ফূর্ত উৎসরণ না তারও অধিক অন্য কিছু? বস্তুত সংবেদনশীল কবিমন তার চারপাশের বহমান সময়কে আপন ভাবাবেগ দিয়ে ধরতে যে চাইবেন, সেকথা খুবই সত্য। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় তখনই যখন সেই চাওয়াটি ভাবাবেগের প্রকাশের মধ্যেই গণ্ডীবদ্ধ হয়ে পড়ে। এ যেন অনেকটাই শৃঙ্খলিত কবিসত্ত্বা। আপন ব্যক্তিত্বের পরিসরেই আবদ্ধ। কিন্তু কবিতা যদি কবির নিজেরই আত্মকথন হয়ে দাঁড়ায়  তাতে সর্বজনীন আশ্রয়ের ভিত গড়ে উঠবে কি করে? এইটিই এক মস্ত বড়ো সমস্যা। আমরা অনেকেই হয়তো এই বিষয়টি নিয়ে ততটা সচেতন নই। সচেতন নই বলেই কবিতা আর না-কবিতার মধ্যের বিরাট পার্থক্যটি আমাদের বোধের বাইরেই পড়ে থাকে অধিকাংশ সময়।

সংবেদনশীল কবিমন তার পরিপার্শ্বের সময় ও তার স্বরকে আপন ভাবাবেগে ধারণ করে আবহমান কালচেতনায় সংশ্লিষ্ট করে আপন বৌদ্ধিক মননের মাধুর্য্য ও আত্মোপলব্ধিজাত দূরদৃষ্টির আলোতে সেই আবেগকে সংহত করে যখন কাব্যিক রূপ ও সৌকর্যে বিকশিত করে তুলতে পারে, হ্যাঁ তখনই জন্ম হয় একটি কবিতার। সে কাজ মূলত সাধনার বিষয়। অনেক কষ্টকর অনুশীলন সাপেক্ষ সেই সাধনা অনেক দিনের অনেক পথচলার পরই আসতে পারে সেই শুভক্ষণ যখন জন্ম হবে একটি সার্থক কবিতার। এ যেন মাতৃগর্ভজাত ভ্রূণের নবজাতক রূপে ভুমিষ্ঠ হয়ে ওঠার মতোই আর এক জন্মবৃত্তান্ত। না কবিতা কেবলই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবাবেগের অক্ষর শব্দ বাক্য মাত্র নয়। আবেগের সংহতি ও উপলব্ধির উৎসরণ ছাড়া কবিতার জন্ম হয় না। আর এই দুইটি অর্জিত হয় তখনই যখন কবির সংবেদনশীলতায় এসে মিলতে পারে ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার বৌদ্ধিক মননের সৌকর্যে।

কিন্তু মুশকিল হয়, অনভ্যস্থ পাঠক মন জীবনের এতটা গভীরে যেতে চায় না অধিকাংশ সময়েই। কবির চেতনার পথরেখা ধরে তার উপলব্ধির সারাৎসারে অবগাহন করার মতো মন মানসিকতা ও ধৈর্য্য আমাদের থাকে না। থাকে না বলেই আমাদের কাছে তখন দূর্বোধ্য হয়ে ওঠে সেই কবিতা। আমরা সরিয়ে নিই আমাদের উৎসাহ আগ্রহ সংবেদনশীলতা সেই গভীরচারী কবিতার হাতছানি থেকে। নির্বাসিত করে ফেলি নিজেদেরকেই অনুপম সাহিত্যরসের আস্বাদন পাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ থেকে। ব্যার্থ করি আমাদের সাহিত্যবোধের সমৃদ্ধির সম্ভাবনাকে। আরও বড়ো পরিতাপের কথা এই যে, টেরও পাই না হারিয়ে ফেলি এতকিছুই। অনভ্যস্থ কাব্যবোধে অভ্যস্থ যুগধর্মের সংকীর্ণতায়।


তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় সুনামির মতো আছড়ে পড়া অক্ষরবৃত্তই যে কবিতা নয়। জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে খ্যাতির আলো পড়া শব্দবন্ধই যে কবিতা নয়। কবিতা  যে আরও বড়ো কিছু। উপলব্ধি করতে পারি না আমরা সে কথা। কবিতা আসলেই অন্যতর এক সংঘটন। যা কেবল একজন কবির মধ্যেই ঘটতে পারে। প্রকৃত পাঠক যার মধ্যে আশ্রয় পেতে পারে। ঘটতে পারে কবি ও পাঠকের যুগলবন্দী সঙ্গত। এই সঙ্গতটুকুই সাহিত্য। কবিতার ক্ষেত্রে কাব্যসাহিত্য। আর প্রতি মাসের মতো কবিতাউৎসব সেই সঙ্গতের আয়োজন নিয়েই আবারো হাজির দুই বাংলার শতাধিক কবিতার ডালি নিয়ে। সঙ্গে আমাদের এই মাসের অতিথি কবি চয়ন ভৌমিক। কবিতাউৎসবের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় উঠে এসেছে তাঁর সাহিত্যভাবনার দিগন্তের রূপরেখা। আমাদের আশা কবিতাউৎসবের পাঠকরাও তৃপ্তি পাবেন সেইখানে।

কবিতাউৎসবের ফেসবুক পেজ :
https://www.facebook.com/amaderkobitautsov/  কে লাইক করে ফেভারিট করে রাখলে কবিতাউৎসবের যাবতীয় তথ্য ও বিজ্ঞপ্তি সরাসরি আপনার ফেসবুক ওয়ালেই দেখার সুযোগ ঘটবে। এই পেজেই কবিতাউৎসবে প্রকাশিত কবিতাগুলিও নিয়মিত প্রচারিত হয় লিংকসহ।

এবং এরই সাথে কবিতাউৎসবের ফেসবুক গ্রুপ:
 https://www.facebook.com/groups/kobitaautsov/#  এ জয়েন রিকোয়েস্ট পাঠালে গ্রুপের সদস্য হিসাবে গ্রুপের ওয়ালে আপনার কবিতা ও কবিতা বিষয়ক মূল্যবান মতামত সরাসরি পোস্ট করে সকল সদস্যদের সাথে শেয়ার করেও নিতে পারবেন। গ্রুপের পিনপোস্টে এই বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশাবলীও দেওয়া আছে।

এছাড়াও কবিতাউৎসব গুগুল কমিউনিটি:
https://plus.google.com/u/0/communities/117144176931778027450  তে সরাসরি জয়েন করে একটি সম্পূর্ণ ওয়েবসাইটের মতো সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন। এখানে আপানার কবিতা পোস্ট করার সুবিধা ছাড়াও আপনার নিজস্ব সাহিত্য ব্লগের লিংক নিয়মিত ব্যবধানে প্রচারের সুবন্দোবস্ত ও অন্যান্য একাধিক বিভাগে আপনার যোগদানের সুযোগ রয়েছে। রয়েছে সুস্পষ্ট নিয়মাবলীও।

***কবিতাউৎসবে লেখা পাঠানোর সাধারণ নিয়মাবলী:
১) স্বনির্বাচিত স্বরচিত ৫টি প্রিয়কবিতা পাঠাতে হবে
২) অভ্র বাংলা হরফে টাইপ করে একটি এমএস-ওয়ার্ড ফাইলে এটাচ করে
৩) কোনভাবেই পিডিএফ ফাইল ও বিজয় ফন্ট গ্রহণযোগ্য নয়
৪) একটি প্রফাইল চিত্র  অতি অবশ্যই আবশ্যক
৫) কবিতা পাঠানোর ঠিকানা amaderkobitautsov@gmail.com
৬) পাঠানোর শেষ দিন প্রতি বাংলামাসের ১লা তারিখ
***কবিতাউৎসবে প্রকাশিত কবিতার স্বত্ত্ব লেখকের নিজস্ব।
কবিতাউৎসব আপনার সৃষ্টিশীলতার প্রতি ঐকান্তিক শ্রদ্ধাশীল থেকে সবরকমের সহযোগিতার বিষয়ে সাধ্যমত অঙ্গীকারবদ্ধ। কবিতাউৎসবের সাথে থাকুন কবিতাউৎসব আপনার পাশে রয়েছে সবসময়।