রবিবার, ২১ মে, ২০১৭

তৈমুর খান



তৈমুর খান

নিদাঘ ছায়ায়
_________________
ভেজা পালকের গন্ধে সকাল এসেছে
আজ নীল মেঘ, বসন্ত বিদায় হল
ঘুমের বিষন্ন তাপ চলে গেলে
ক্লান্ত দিন জাগরণ ফেলে যায়

আমাদের দীর্ঘশ্বাস ঝরে পড়ে......
     


আমরা বাউল হই
___________________
রোজ এক বিহ্বলতা ছবি আঁকে
আমরা বাউল হই
বাতাসে স্বরলিপি বাজে
গাছেরা নর্তকী হয়ে নাচে

নদী বয়ে যায় অনন্ত বিরহপুরে



রাতের ব্রিজ
_____________
মাটিতেই শ্রদ্ধা পুঁতে রাখি
হৃদয় শুধু কেঁদে কেঁদে ফেরে
বিহ্বল আর্তনাদ নদীতে ভাসাই
বিবেক কল্পনালতা হয়ে ওড়ে

আমার কি আকাশ আছে ?

রোজ ডান হাতে মেপে নিই খুদ
জীবিকার মূর্খ অভিলাষ
সারারাত ধান ভানে বুড়ি
জবাগাছ বেড়ে ওঠে দেখি

মানুষের ভেতরে মানুষ থাকে না ?
কে তবে থাকে ?

লোলমুখ প্রাণীদের বিবাহ বাসর
বেশ বাজনা বেজে ওঠে
আগুনের ব্যবহারও শুরু হয়
কোনো কোনো অনৈতিক সংগমে

তবুও জলের ফোয়ারার ধারে
বসে থাকি কোনো কোনো বিকেলে
আশার পোশাক দেখি রঙিন ঝরোকা
দুলে দুলে সামনে আসে

আহা দিন চলে যায়
আহা আশা চলে যায়
রাতের ব্রিজ দিয়ে দেখি রাত পার হয়  !




বিচ্ছিন্ন মানুষ
______________
এত শোকের ঝরনা
আমি জল পান করতে পারিনি

সারারাত নগ্ন রাত্রি কেঁদে গেল
গুহায় গুহায় হিংস্র গর্জন উঠল
মানবসভ্যতার কোনো রাস্তা চোখের সামনে দেখা গেল না

দূর পাহাড়ের সীমানায় কাদের রংধনু শাড়ি উড়ল
ফালা ফালা হৃদয়ের প্রতিধ্বনি শোনা গেল
আর রক্তাক্ত মুচকুন্দ ফুলের বাঁশি
                       জোনাকির সখ্যতায় জ্বলে উঠল
                                                             দেখলাম

কোনো বাজনার কাছে যেতে পারলাম না
কোনো আহ্বানের কাছে আসতে পারলাম না
এক অসত্য ভঙ্গুর ধ্বসের তীরভূমিতে দাঁড়িয়ে থাকলাম
মেঘমন্ত্রহীন প্রচ্ছায়ার অন্তরালে
                                    বিচ্ছিন্ন মানুষ এক  !




আমার শুধু বিষাদের পাল
______________________
সবাই নাচতে নাচতে যাচ্ছে
আমি নাচতে পারি না
অনন্তের প্রহরী বাঁশি বাজিয়ে দিচ্ছে
আর উৎসাহ দিচ্ছে সম্মোহনের বিকেল
নাভির হিল্লোলে নীল মেঘ
             কল্লোলিত করে দিচ্ছে পাড়া
নাচতে পারছি না আমি
                          কুড়োচ্ছি নাচের মুদ্রা 
ভেজা আরশির ঘুমে মুখ দেখছে হৃদয়
রোদের কার্নিশে ছায়াকাক
                               ডেকে যাচ্ছে নতুন ভাষায়...

পৃথিবী ভর্তি নাচ
লাল নীল হলদে তামাটে নাচেরা
কারুকার্যে উথালপাথাল

আমার শুধু বিষাদের পাল
ঘুরেফিরে আসে আর ঘোলা করে জল

চেতনাকে ঢেকে রেখে আমি
সেই জলে নামি...
   প্রবাহের নীচে এক ক্ষয়

______________________
চারিপাশে ঝরে পড়া দীর্ঘশ্বাস
আয়নায় ভাসে রক্তমাখা গান
সবই তো সময় স্বরলিপি
ঘরে ঘরে উঠে আসে সময়ের ধান

কার্যত বিজ্ঞাপনের জ্যোৎস্নায়
কিছু খেলাধূলা আর সুরের উৎসার
ছলকে ওঠে অসহিষ্ণু মূর্খ আলো
আলোয় আলোয় নিঃশেষ বিষপান

আমাদের জয় নেই
প্রবাহের নীচে এক ক্ষয়
প্রবল ঘোরের টানে পাক খায়
রাত্রির নিরর্থক ঘুম...




প্লাবক
________

কারও পায়ের ফাঁক দিয়ে চাঁদ ঢুকে যাচ্ছে
কারও পায়ের ফাঁক দিয়ে চাঁদ বেরিয়ে আসছে

এত তাড়াতাড়ি আলো নিভে যাচ্ছে
আমরা অন্ধকারে নিজেকে দেখতে পাচ্ছি না
চেঁচিয়ে বলছি, হাত বাড়াও, হাত বাড়াও

শৌর্য বীর্য ক্ষয় হয়ে গেলে যা হয়

আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে কমিয়ে
ভরসা রেখে অথবা না রেখে
আমরা পোকা মাকড় হয়ে উঠছি
হাসপাতাল যাবার কথা ভাবতে ভাবতে
আমরা অন্ধকারে চলে যাচ্ছি

চাঁদ পালাচ্ছে, চাঁদ পালাচ্ছে
হিহি হিহি হিহি........


        

কুকথা
_______         


সন্ধ্যার সংগীত বাজছে

জেগে ওঠো চেতনার বাড়ি

ম্রিয়মাণ সম্পর্কগুলি জোড়া দাও

তালি বাজুক, আমাদের কাকতালীয় ঘুড়ি


পিপাসার মাঠে ফিরছে অসম্ভব ঘোড়া

দেখছে সবাই, কিন্তু কেউ বলছে না

রাজা আসবে সবাই জানে

রাজা আনবে নতুন প্রতারণা


জয় জয় গাইছে সবাই

আমরা গানই গাইতে পারছি না

ঝুড়ি ভর্তি মেঘ পালাচ্ছে

শ্রাবণ মাস বৃষ্টি দিচ্ছে না


কী রঙে আজ খেলা জমবে?

ভাবতে ভাবতে উড়ছে ঘুমের শালিক

পাহাড় চূড়া সেজে উঠছে

সবাই বলছে মায়ার কুহক, নষ্ট ইন্দ্রজালিক


           

একসঙ্গে
__________

বঙ্গভঙ্গ ছড়িয়ে দিচ্ছে বুলবুলি

ধান খেয়ে গান গেয়ে নাচ দেখিয়ে

বেশ বঙ্গভঙ্গ ছড়িয়ে দিচ্ছে

আমরা হাত ধরছি, হাতে হাতে হাত রাখছি
আমরা বুকের বার্তা বুকে বুকে ছড়িয়ে দিচ্ছি
একটি বাংলা, একটি পাড়া, একটি পরিবার
ঘুম কেন কেড়ে নিচ্ছিস, ও দুঃস্বপ্নরা ?


জুতোর ভেতর কাঁটা ফুটছে, জামার ভেতর
                                          আগুন জ্বর

চোখ খুলেও অন্ধ চোখ, চোখের জলেই

     ধুয়ে নিচ্ছি ভেঙে পড়া বাংলা ঘর


মাটি চিনে, মেঘ চিনে, গাছপালা আর

                                  চায়ের কাপ

ট্রেন লাইনে হুইসল্ শুনে ছুটছি পথ

                                       পথে পথে

আয় মানুষ, বাংলা আয়, ভাষা ও চাঁদ

                                            সঙ্গে থাক

জন্মভূমি সমতল পাহাড় জঙ্গল সমুদ্র নদী

স্কার্ট লুঙ্গি ফ্রক শাড়ি হাফহাতা গেঞ্জি শার্ট

আজ দেখি একসঙ্গে হাঁটুক পথ


 
     
ভাষা নেই
__________
আলো জ্বালাবার ভাষা কই?
এত ভাষা তবু ভাষাহীন দেশে
সুকেশী আঁধার সব স্তব্ধতায়
অবিরাম হাসে

শব্দ আর অক্ষরেব় ঘ্রাণে ছুটে আসি
গুহায় গুহায় লুকায় দিন
কী হবে দিনের পরিভাষা?
সূর্য যদিও সূর্যহীন
আঁধারের অদ্ভুত তামাশা

মিছিলের স্রোত যাচ্ছে আকাশে আকাশে
বজ্র-বিদ্যুতের ভাষা উড়ছে মুখে মুখে
দু একটা যুদ্ধের পাখি সংকেতে ডাকে
ভাষা নেই, ভাষা নেই, আমাদের ভাষাহীন মুখে  !


  

পরিবর্তন
__________
তোমাকে ডাকিনি তবু এসেছ যখন
অব্যয় ক্রিয়ার পাশে বসো কিছুক্ষণ
মাথা বেঁধে দিই, আলো জ্বেলে দিই
সনাতন শঙ্খ ধ্বনিও.......
তারপর তোমাকে দেখতে থাকি মুখোমুখি

কী সুন্দর হাসতে পারো তুমি
কী মধুর তোমার বচন
শরীরী রচনা থেকে বিনির্মাণ হোক তবে
স্বপ্নের আকাশ

শত্রুর জন্যও আজ দুয়ার খুলে রাখি
ঘাতকও ঘুমাক এসে প্রেমের শয্যায়
লাল রক্তের রঙে লেগে থাক ফসলের ঘ্রাণ

এসো এসো আমরাও আজ বৃক্ষ হয়ে উঠি   !