নন্দিনী সেনগুপ্ত
পঙক্তিগুলি
যে পঙক্তি চেয়েছিলে- সে কথা বিষাদমাখা, সে অন্য কারও;
গচ্ছিত ভাঁজে ভাঁজে। কি করে বলি... ‘তুমি নিতে পারো।’?
ক্ষুধার্ত রেখা লেখে... ‘শান্তি’। শান্তি আসে উচ্চারনে?
আঙুলে জমে এত বৈরিতা? অস্ত্র রেখেছ কী
কারণে?
অদেয় হয়েছে কথা; তীরচিহ্ন সুলভ প্রতি বাঁকে।
পথ গেছে বহুদিকে। বিস্মৃত পঙক্তি আর কে
রাখে-
মনে? বিপন্ন ভূমি জুড়ে আঁধার
নেমে আসে গাঢ়!
যে পঙক্তি চেয়েছিলে—সেটা অন্য কারও।
প্রিয় কবিতা
খুঁজে বেছে নিয়ে প্রিয় সব কবিতাকে-
বেঁচে থাকা ভালো অকবিতা-বাস্তবে।
খুঁজে বেছে নিয়ে মধ্যদিনের ছায়া -
ফিরে যাওয়া ভালো প্রতিপল শৈশবে।
প্রতিদিন আমি উৎসব খুঁজে পাই-
টুকরো কথার রঙে, টুকরো হাসিতে।
খুঁজে বেছে নিই আলোর তুলির টান,
ভালো থাকবার বেহিসেবি বাসাবাসিতে।
এভাবেই আমি এক উৎসব থেকে-
জমিয়েছি পাড়ি আরেক মেলার ভিড়ে।
লক্ষ অচেনা মুখেতে পাই যে খুঁজে-
চেনামুখ যত বন্ধুকে ফিরে ফিরে।
প্রিয় কবিতারা আমাকে বাঁচিয়ে রাখে-
পঙক্তিরা ঘিরে রাখে বন্ধুর মত।
মধ্যদিনেও খুঁজে দেয় মৃদু ছায়া,
আলতো ছোঁয়ায় মুছে দিয়ে যায় ক্ষত।
ফুল
প্রতিবাদ-বিদ্রুপ লিখে তুমি ভুলে গেছ, কবি-
ফুল, হাসি, আকাশের চাঁদ, আলো, পাখি।
এ জীবন নাগরিক জটিলতা-ধোঁয়ায় ধূসর,
ভালোবাসা কবে যেন দিয়ে গেছে ফাঁকি!
এভাবেই কবিতায় কাটাকুটি খেলাদের রাজ্য-
ভরে ওঠে চৌখুপী গোল্লাছুটের সংঘাতে।
প্রেম নয়, বশ্যতা চেয়ে কবি বেঁধেছ
নিজেকে-
ঈর্ষার কালোডানা ঝাপটানো একলা খাঁচাতে।
কত আর প্রতিবাদ লিখে যাবে বল কবিতায়?
আঁধারের মন্থনে অমৃতের মরীচিকা ডাকে।
পথপাশে ফোটা ফুল, তার নেই কোনও দায়-
রঙে রঙে ফুটে থাকা শিখেছে সে পথের বাঁকে।
ফুল হয়ে ফুটে থাকা জটিল ধূসর দিনে, ভাবো!
সেরা প্রতিবাদ আর সেরা বিদ্রুপ জানে ফুল।
যদি পারো কবি তুমি শিখে নাও পাপড়ির ভাষা-
স্পর্ধিত রঙে আঁকা সেই কবিতায় নেই ভুল।
বিষাদ
দীর্ঘতর ছায়াবিকেল এবং একা সিঁড়ির ধাপের কোনও
সখ্য নেই।
বিষাদ মানে জেনে রেখো, তোমার কোনও বিশেষ দুঃখ নেই।
একলা থাকো কিংবা ভিড়ে, নিজের ছায়ায় তোমার লক্ষ্য নেই;
অতএব ছায়াবিকেল এবং তোমার সিঁড়ির ধাপের সখ্য
নেই।
তুমি যেমন বিষাদ চেনো, চিনে নেওয়ার তেমন চক্ষু নেই।
সজাগ ছিল বিফলতা, তবুও আজ বিরহাতুর জমি রুক্ষ নেই।
দীর্ঘ ছায়া সিঁড়ির ধাপে বিকেল আনে; তবুও সখ্য নেই।
বিষাদ মানে স্বতঃসিদ্ধ, তোমার কোনও বিশেষ দুঃখ নেই।
ঝড়
তোমাদের পাড়াতেও এসেছে কি ঝড়?
একই অনুভব লেখে হাওয়াদের ঋণ?
সন্ধ্যা কি এভাবেই মনোযোগ টানে?
পাল্লা-আগল ঠেলে স্মৃতি ক্ষমাহীন।
সিঁড়ির ধাপেই কিছু শেষ না হওয়া-
কথাগুলো আছে আজো। ঝড় পাছে-
নেয় সব। আগলেছি ছুটে গিয়ে;
বিন্দু বিন্দু তুলে রেখে দিই কাছে।
ঝড় এলো; ধূলি-খেলা তোমারও ঘরে?
কণা কণা ভ্রান্তিতে গড়া রাত-দিন-
জমিয়েছ? ফিরে এসো পথ চিনে ঠিক-
দরজা ঠেলছে শুধু স্মৃতি ক্ষমাহীন।