মিঠু নাথ কর্মকার
অরুন্তুদ
দিনের জোয়ার শেষে আঁধারের ভাটার টানে
আলেয়ার পথ ধরে পৌঁছে যাই এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপে,
ভিজে যাওয়া প্রচ্ছদটা সেঁকে নি বাস্তবের চাটুতে|
উদলা আকাশের নীচে কঙ্কালসার মায়ের স্তন আঁকড়ে
জীবন-
মৃত্যুর মাঝে ঝোলে অপুষ্ট শিশু,
ফুটপাথে অসুখের চাদর মোড়া পাংশুটে যৌবনকে
ঢেকে রাখে প্রখর নিঃস্ব দৃষ্টি,
লোনা জলের চোরাস্রোতে স্বপ্নের চিতাভষ্ম ভাসায়
শৈশব হারানো কিশোর,
মৃত জোনাকীর আলোয় আগন্তকের ছায়া দেখে অভ্যর্থনা
জানায় ঘেও কুকুরের দল,
বৈষম্যের ফাঁসে ঝুলন্ত যুগলের অন্তর্লীন স্রোত
ভেদ করে রাতের নৈঃশব্দ্য ,
টেথিসের পলি জমে আরেকটা হিমালয়ের আশা ধুলিসাত্
হয় রিক্টারের তীব্রতায়,
বন্ধ্যা সমাজ অপরাধীর উত্পাদন বৃদ্ধি করে মুনাফা
খোঁজে|
রাতের বৃন্ত ছেঁড়া ফুটন্ত সকালে সভ্যতার ছাল
জড়িয়ে শিক্ষার আতর মাখি ,
সময়কে মুঠো করে যুগের হাওয়ায় পাল তুলি ,
ফ্যাকাসে মুখের নির্বাক আবিল দৃষ্টিপথে রোদচশমার
দেওয়াল গড়ে
হেডফোন গুঁজে চাপা দি যন্ত্রণার কোলাহল ,
ঠাণ্ডাঘরের অস্বচ্ছ ঘেরাটোপে কারফিউ জারি করা
মগজে পণ্য হয় আধুনিকতার নিষিদ্ধ চিত্র ||
মৃত্যুটীকা
কৃষ্ণচূডার সামিয়ানায় বাসন্তী হাওয়ার উন্মাদনায়
কোকিলের সুর মূর্ছনায় মূর্ছিত হয়েছিল হৃদয়বীণা |
পরম মোহাচ্ছন্নতায় নিবিড় আবেশে তৈরি করেছিলাম
ভালবাসার রাজপথ,
পলাশের আবির মেখে অনাবিল আনন্দে বুনেছিলাম আদিম
সভ্যতার বীজ,
বুঝিনি ঈশান কোণে অভিমানী মেঘের আড়ালে ছিল অশনি
সংকেত,
মিথ্যার ঝরন আর অশ্রুর প্লাবনে বিস্তৃত রাজপথ
যেন উলঙ্গ মৃত্যুফাঁদ,
প্রতিশ্রুতির আস্তাকুঁড়ে আলেয়ার ল্যাম্পপোস্ট
চুঁইয়ে পরা অবহেলা,
সর্পিল ইচ্ছার বাঁকে ছড়ানো শোকস্তব্ধ লাজ,
অব্যক্ত কথার মিছিলে উপেক্ষার প্রতিধ্বনি,
মৃত স্বপ্নের শবযানে আমার হিমায়িত দেহ জুড়ে ,
অতৃপ্ত আত্মার নীরব আর্তনাদে বাজবে আমন্ত্রণী
সুর,
কয়েক আলোকবর্ষ দূর থেকে সুখের সময় ধার করে এসো
আমার মৃত্যুবাসরে,
ভালবাসার পাপড়ি ঝরা রাতে তোমার ঘেমো গন্ধের আতর
মাখিয়ে,
বিরহী কাঁটার আঘাতে চরম ঘৃণা ভরে এঁকে দিও আমার মৃত্যুটীকা ||
সার্জিকাল স্ট্রাইক
বারুদের গন্ধময় জীবনে বরফকঠিন অদৃশ্য অনুভূতি ,
অনিশ্চয়তার হাতছানি ঝুলন্ত জীবন- মৃত্যুর
সীমারেখা,
অতন্দ্র প্রহরায় সময়ের বেড়া গলে বেআইনি অনুপ্রবেশ,
নজর এড়ানো অনিয়ন্ত্রিত লেনদেনে কিছু উপরি সঞ্চয়,
উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালীন কারফিউ
জারি,
মৈত্রী চুক্তির মাঝেই অতর্কিতে সার্জিকাল
স্ট্রাইক,
ল্যান্ডমাইনের স্প্লিন্টারে বিদ্ধ টুকরো স্বপ্ন
কফিনবন্দী,
ব্ল্যাকআউট হওয়া গর্বিত সুখী কষ্ট
মৃত বিশ্বাসে ক্ষত বিক্ষত ইচ্ছে গান স্যালুটের
ক্লান্ত অপেক্ষায় ||
ডিজিটাল লাইফ
লকআউট হওয়া বিবেকের মনুষ্যত্বহীন অনুভূতি চালান
করি,
মরচে ধরা চিন্তা গ্যালভানাইজড করে স্ট্যাটাস দিই,
স্বার্থকে কমফোর্ট জোনে রেখে
ক্যাশলেস জীবনে সোয়াইপ করে কেনা মুঠো ভালোবাসা,
ডাউনলোড করা সম্পর্কে মেমরি ফুল,
ফ্ল্যাশব্যাকে কিছু অস্পষ্ট প্রতিচ্ছবি,
ভাইরাস এফেক্টেড প্রতিবাদী কণ্ঠে এন্টিভাইরাস
লাগিয়ে সমঝোতা ই ট্রেন্ড,
অনস্ক্রিনে দুর্ধর্ষ কাহিনীচিত্রের ট্রেলরে
বাজিমাত,
অফস্ক্রিনে অজানা জটিল ইকুয়েশন ব্যালান্সিং এর
একাগ্র প্রচেষ্টায়,
ক্রিমেটোরিয়ামের সিম্ফোনি মিউট করা ||
সভ্যতা
গহীন রাতের ছায়াহীন নিঃসঙ্গ পথিক আমি,
লাল ঠোঁটের চুঁইয়ে পরা নাইট ল্যাম্পের আলোয়
দেখি-
আঁধারের বুকচেরা উলঙ্গ পথের দু’পাশে---
যৌবনের পসার সাজানো ।
কলঙ্কিত-অশরীর, স্তনপানের চেষ্টায় ব্যর্থ সদ্যোজাত,
রাতপ্যাঁচার ঘুমপাড়ানি গানে পাড়ি দেয় চিরঘুমের
দেশে ।
মৃত জোনাকির আলোয় দেখি---বিষণ্ণ রক্তের
দাগ-লাগা দেওয়ালের আড়ালে ---
কামনার কসাইখানায় ছটফট করে নিথর হয়,
ভবঘুরে পাগলীর অস্পৃশ্য নারীত্ব !
ব্রেন-ডেথ হওয়া স্বপ্নগুলো, নীল দেহদানের
অঙ্গীকার করা পোয়াতি ইচ্ছার অপ-মৃত্যু |
আধুনিকতার চোখ ঝলসানো দামী পোশাকে
আঁধারের নগ্নতা ঢেকে ----
সভ্যতার কনজাংটিভাইটিস ভাইরাস সংক্রমণে,
দৃষ্টি-হীন নীরব দর্শক আমি ।
নির্বাক প্রতিবাদী কণ্ঠে পাঠ করি---জীবনের
অক্ষয়মন্ত্র |
নিয়নের আলোয় মনুষ্যত্বকে বিকিয়ে--
মায়াহীন ক্রোধের মশাল জ্বালিয়ে, মৃত্যুর
সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ফিরে যেতে চাই-- সভ্যতার জন্মলগ্নে
||