অলভ্য ঘোষ
পরিচয়
আমি এই পৃথিবীতে একটা সামার ভ্যাকেশনে এসেছি।
নুড়ি কুড়া তে নয়।
সমুদ্র পাড়ে বালির ঘর বানাতেও নয়।
আমি জানি তা একটা ঢেউয়ে মুখ থুবড়ে পড়বে।
আমি এসেছি বাউলের মত গান গাইতে।
দমকা হাওয়ার মত এসেছি এলো মেল করে দিতে পালের হাওয়া।
ঢেউয়ের মতো বেহিসাবি বোহেমিয়ান আমি আছড়ে পড়েছি।
আমি এসেছি ঢেউ মাখতে ঢেউ দিতে
অসাড় অনড় সংস্কার বিহীন রুক্ষ বালুকা তটে।
পানকৌড়ির মত ডুব গেলে
চেতনার অনেকটা গভীরে সাঁতার কাটতে এসেছি আমি।
না আমি তোমার পুতুল খেলার সঙ্গী হতে আসিনি।
তোমার রান্না বাটি গুছিয়ে রাখো।
আমি কিছু সংগ্রহ করতে আসিনি।
বিলাতে এসেছি প্রেম।
আমার পরিচয় আমি রাখালিয়া বাঁশি;
আমার পরিচয় আমি মেঠো পথের লাল সুরকি;
আমার পরিচয় তীব্র তাপ দাহে শুকিয়ে যাওয়া তৃণমূলে
এখনো প্রাণ সবুজ রাকার চেষ্টা করা এক টুকরো দূর্বা ঘাস।
আমি কামারের হাত কুমোরের চরকা কৃষকের কাস্তে।
আমি মানব সরোবরের পদ্ম বনে ভোমর।
তবে মনে রেখো দম বন্ধ হয়ে আসা গুমোট
দুপুর ভেঙে আমিই বিকাল বেলার কালবৈশাখী ঝড়।
স্বস্তির নিঃশ্বাস!!!
আমি এসেছি শিখতে ও শেখাতে
ভালবাসায় কিভাবে দেউলিয়া হতে হয়!
আলোক
বর্তিকা
কি হবে ঈশ্বর জানেন।
পারলে ভুলে যাও!
পৃথিবীর এই সংকুচিত অবস্থা থেকে;
বের হয়ে আমি এখন অসীমে হাঁটবো।
কোন সম্পর্ক বেড়াজাল নয়।না!!
থেমেছে সব। আমি স্থির।
আমিও থেমেছি।
আজ আর কোন বন্ধন নেই
কারো সাথে।
বিন্দু মাত্র পাল্টাতে পারবো না দুনিয়া।
নিজের ভেতর নিজে ডুববো আজ; আসি!
একটু আত্মার গান শুনি। আর কিছুতেই শান্তি নেই।
শিল্প ই আমার চির শুশ্রূষা। চর্চা দর্শন।
উঁকি মেরে দেখা নিজেকে।
অভিব্যক্তি, নির্যাস চেতন অচেতনার।
সঙ্গীতের ভাষার কোন প্রতিবন্ধকতা নেই।
চারু কারু কলার কোন জাত নেই। ইউনিভার্সাল!
আরো কবি , লেখক, বাজিয়ে, গাইয়ে
অনেকে আছেন ।
অনেক প্রতিভাবান।
আমি কিছু দিতে পারবো না!
অমর্ত্য হাস্যকর!
আমি একার মধ্যে একা ডুব গেলে বসে থাকি।
না! তোমাকে ভালবাসি না । কাউকে ভালবাসি না।
নিজেকেও না !!
একটা শরীর কে ভ্রম হয়েছিল; আমি!
না সেটা আমি না।
ভ্রম!!
আমি শরীর না। অশরীরী!
তাই তোমাকে ভালবাসি বলাটা মিথ্যা!
তোমার স্তন কে ভালবেসেছি!
ভালবেসেছি যোনি পথের পিচ্ছিল দ্বার।
বর্তমানে ভালবাসা ফ্রয়েডের নিষিদ্ধ থিওরী।
তার মাঝে দেখি রবিঠাকুরের অনন্ত প্রেম ও লুকিয়ে বসে ।
হঠাৎ দুম করে খেয়ে ফেলা চুমু বুদবুদের মত ক্ষণস্থায়ী ।
ক্ষণজন্মা রয়ে যাওয়া অনুরণন।
গোপনে সাড়ে অসাড়ে প্রবাহ মান কালান্তরে অণুচক্রিকা।
তুমিত একটা শরীর নও কেবল। শরীর
আলেয়া!
তুমি আমি আমরা সকলে এক একটা প্রকাশ ।
অনুভূতি। অভিজ্ঞতা! বিক্রিয়া!
ইলেকট্রন- প্রোটন- নিউটন!!
একটা ছোট বিন্দু আলোকরশ্মি অনন্ত ব্রম্ভান্ডে।
ঘুমাইনি কতকাল;
ব্যস্ততা ভেঙ্গে যাই দেখি ;
বিছানা সাজিয়ে কে রেখেছে আমার জন্য।
বিছানা , আমি , সজ্জা, সঙ্গিনী সব অনিত্য।
তুলো ভরা বালিশ তোশক। .. ভুসি ভেতরে।
নিত্য শুধু যাতায়াত করে আলোক বর্তিকা
কয়েক লক্ষ কোটি আলোকবর্ষে।
দেখা
আর ইচ্ছে করেনা তোমাকে দেখাতে নিজেকে;
এখনো দেখার বাকি আছে আমাকে!!
আমর প্রতিটি কবিতায় উন্মুক্ত হৃদপিণ্ডের ছবি
ছিল ; তা কি দেখনি তুমি।
তোমার সাঙ্গ হয়নি দেখা!
বলো আর কি দেখতে চাও আমার!
উজাড় করে অনাবৃত যে আমি তোমার
সামনে দাঁড়িয়েছি দিনের পর দিন।
চোখ, নাক, কান, ঠোঁট, বুক, সুদৃঢ় লিঙ্গ
সবটাই দেখছ তুমি।
আমাকে স্খলিত হতে দেখেছো;
আমাকে দেখেছ উন্নত হতেও।
বুকে কান পেতে শুনেছ হৃদপিণ্ডের আওয়াজ।
চরিত্রের গঠন? তাও কি বাকি আছে দেখতে!
তবে কি দেখতে চাও বারবার দরজায় কড়া নেড়ে।
আমার বুকটা জুড়ে কেবল তোমারি স্থান?
তোমার কাছে কিছুই লুকাতে পারি নি।
তোমাকে কেউ কিছুই লুকাতে পারেনা।
তবে কি দেখতে চাও তুমি?
আমার বুকের উপর তোমার একচ্ছত্র অধিকার?
তোমাকেত এত লোক ভালবাসে!
তবে কেন এই হ্যাংলামি !
আকাশের বুকে কত পাখির পাখা ঝাপটানো;
সমুদ্রের বুকে নাবিকদের আনাগোনা চলে আদি অনন্ত।
কেবল আমার বুকটা তোমার জন্য সংরক্ষিত হবে!
এতটা নিষ্ঠুর হয় না ভগবান। তার চেয়ে আসা যাওয়া করো
অঘ্রাণের সোনালী ধানের শীষে; এই রামধনুর দেশে;
সাত রংয়ে মিশে; জীবনানন্দে গাংচিল আর শালিকের বেশে।
রোদ
রোদে দের কি ভাগ্য
তোকে ছুঁতে পারে জানালা ডিঙ্গিয়ে।
আমি এই উইন্ডো এক্সপি ডিঙ্গাতে পারিনা।
রোদে দের কি ভাগ্য তোকে ঘামাতে পারে।
আমি আমার তাপ পারি না তোকে দিতে।
রোদের কাছে ছাতা ঢাকিস যেমন।
আমার কাছে এমনি আড়াল খুঁজবি?
রোদের মত আমি যদি আগুন লাগাতে শিখি
বুঝবি তখন বুঝবি!
একটা চকমকি আছে আমার কাছে
আর একটা লাগে আগুন আবিষ্কারে।
কেবল আতশ কাচের ফাঁকে পড়া রোদ
জ্বালতে পারে প্রেমের চিঠির চিতে।
রোদের কাছে স্পেশাল ক্লাস নেবো
কেমন করে দুনিয়া ঘামায় সে
সামান্য এক পুচকে মেয়ে তুই
তোকে ঘামাতে মাথা ঘামাচ্ছি শেষে।
একবারটি ঘামাচি হতে পারলে
চুলকে চুলকে জীবন যাবে তোর।
আমিতো মজায় সেঁটে থাকবো
যেন গায়ের সাথে গা লাগিয়ে চোর।
মেঘের কাছে আবার যেন তুই
শিখিস নাকো মেঘলা দিনের বাহার;
নিভে যাবে আমার যত তেজ
লাভ কি তখন এমন রৌদ্র হবার।
আকাশ
একটা আকাশ লক্ষ কোটি তারা চাঁদ সূর্য; পাখিরা,
উড়োজাহাজ, মহাকাশযান,
ধূমকেতু, ঘুড়ি, ফানুস, প্যারাসুট,
গ্যাস বেলুন কত কিছু ভাসে।
সবাই বলে আমার আকাশ !
এক মুঠো আকাশ ধরতে চায় সবাই।
যারা না পারে ;
আকাশের তল খুঁজে না পেয়ে ;
বলে আকাশ অহংকারী।
আকাশ বদলায় না কিন্তু ;
আকাশ উদার তার প্রেমের কোন খোঁটা পোতা নেই..
.তাকে যে কেউ পেতে পারে!
উড়তে না জানলে আকাশ পাওয়া যায় না
যারা বলে; তারা কখনো নদীর বুকে চেয়ে দেখেনি।
আকাশ প্রেমিক;
যে আকাশের দিকে দেখে আকাশ ও তার দুই নয়ন জুড়ে কাব্য লেখে।
মেঘ, রোদ, বজ্র, ঝড়-বৃষ্টি আকাশের মহাকাব্য।
মহাকাশ আবহমান কাল ধরে আছে অনন্ত ব্রহ্মান্ডে।
আকাশের কাছে চাঁদ ও যা সূর্যও তাই চড়ুই ও যা বাজপাখিও তাই।
জোনাকির আলো তারার আলোর থেকে খাটো নয়।
ফড়িং এর মধ্যে আকাশ দেখে হেলিকপ্টার হবার সম্ভাবনা।
উড়ে চলা তুলোর বীজে আকাশ খুঁজে পায় মেঘেদের পাখনা।
পশ্চিমে সূর্য ডোবা দিগন্ত বলয়ের দিকে চেয়ে দেখ;
যেন ঝুলন পূর্ণিমার যুগল মূর্তি;
আকাশ কোলাকুলি করে পৃথিবীর সাথে রোজ।
কি তার আকুতি!
সকাল বেলায় নরম সবুজ ঘাসে হাত বুলিয়ে দেখ;
আকাশ থেকে কান্না ঝড়ে ভোরের শিশির হয়ে গেছে।
বড়ো মুখ চোরা আকাশ লুকিয়ে কাঁদে।
আকাশ কে যে বুঝতে পারে সেও কবি হয়ে যায়।
দেখতে পায় দূরে
সব পথ আকাশে গিয়ে মেশে।
পবিত্র হৃদপিণ্ডের কোটরে লুকানো আকাশের পথ ;
শোন না স্বর্গের সিঁড়ির কথা।
সৎ মানুষ কেবলি সে সিঁড়ি বাইতে পারে।
আকাশ যদি মহান হয় তবে তোমার মহানুভবতা ;
পৃথিবীর বুক থেকে মহাকাশে হয়ে যাওয়া তিল সমান উড়ো চিল।