রবিবার, ২১ মে, ২০১৭

মোকসেদুল ইসলাম



মোকসেদুল ইসলাম

চেনা মানুষগুলো
........................................
রাতভর এখানে জ্বলছে আগুন। বিশুদ্ধ সংগীত পুড়ে গেলে যারা ধরেছিল সময়ের হাল তারা এখন পথের ডাকে দিচ্ছে সাড়া। উৎপাদনের বিপরীতে যে নৈশ প্রহরী পদমর্যাদাটুকু বাড়িয়ে নিতে চেয়েছিল আমরা ভুলে গেছি ঘরে তাঁরও সুন্দরী স্ত্রী ছিল, ফুটফুটে সন্তান। আমরা কেড়ে নিয়েছি বেদনার অনুভূতি প্রকাশের ভাষা। কতটা সময় চলে গেলে পথেরদাবী পূরণ হয়? এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিল যে বালক সে এখন ভুগছে নিরাময়- অযোগ্য ব্যাধিতে। প্রসাধনে যদি ফর্সা হতো ত্বক তবে আমি মৃত্যুকে দূরে সরিয়ে দিতাম। আজকাল সহসা মুখস্থ করে ফেলি সব। ধ্বংসের অগ্নি, সম্ভাবনাময় মৃত্যু আর গোপন প্রিয়ার উষ্ণ ঠোঁট। সব আমাদের হাতের তালুর মতো চির চেনা। যে চিনে না সে বন্ধ করে দিয়েছে দখিনা দুয়ার।




স্বপ্নবোধের গন্তব্য
.............................
ব্যক্তিগত উপলব্ধির সাগরে ভেসে যাওয়ার আগে আত্মস্থ করা যেতে পারে কিছুটা স্বপ্নবোধ। প্রত্যয়ঘন বাসনা নিয়ে এসেছিল যে মানব সে হারিয়ে ফেলেছে নিজস্ব গন্তব্য। তারপর কেটে গেছে দীর্ঘ সময়। কলাকৌশল যার জানা নেই মৃত্যু তো তাকেই ডাকে। বৈরী আঙুল ধরে পথচলা করলে শুরু পায়ের নীচে পরে মারা যায় দূর্বা ঘাস। দুঃসাধ্য ব্যাপার বটে, জটিল তত্ত্ব যারা বুঝে না আজকাল তারাই জানে যতিচিহ্নের ব্যবহার। নাগরিক আস্ফালনে নেমে আসে যে ভোর সেতো কিশোরী কানের দুল। চোখ মেলে দেখ, স্বর্গের দ্বারে দাঁড়িয়ে যে ট্রেন তার গন্তব্য অসভ্য জগতে। ভাঁজ করা শূন্যতাকে ঘিরে কিছু মানুষ দেখিয়ে যাচ্ছে অশ্লীল নাচ। আদিম অন্ধকারে ধরে রেখেছে আগামীর আয়না। এসব দৃশ্যায়নের কাব্য ফেলে চলো পাখিদের কাছে ফিরে যাই। পাখিদের কাছে বলা যেতে পারে বিমূর্ত ভাবনার কথা। জান তো, নিরীহ পাখিরা প্রতারণা জানে না।




নষ্টনীড়ের প্রজাপতি
.......................................
রাতের পাখার নীচে সুখ চাপা পড়ে গেলে পৃথিবীতে নেমে আসে ধূসর ছায়া। আমার বিরহের পূজারী, নিদারুণ সুখে ভেসে গেলে জনম সুখ মহাকালের চোখে একেঁ দিও সঙ্গিহীন শোক। সাম্যবাদী প্রেমে বিশ্বাস না থাকায় তারারা জেগে থাকে একা। লজ্জাহীন সে আকাশ সাক্ষী থাকুক। মেঘের পোশাক খুলে গেলে নিভৃত রাতে কেউ কেউ গেয়ে ওঠে নষ্টনীড়ের কষ্টসঙ্গীত। বেহালারর করুণ সুরের সাথে তাল মিলিয়ে যারা হেসেছিল অযাচিত বিদ্রুপের হাসি তাদের সুখের শুরু। সেদিন উল্লাস ছিল না হাওয়ায়, আহ্লাদী প্রণয়ে গান গেয়েছিল যে পাখি আমরা তাঁর নাম দিয়েছি নষ্টনীড়ের প্রজাপতি। জানা নেই, না পেলেও মানুষ কেন চেয়ে থাকে সব। অবলীলায় পেরিয়ে যায় দুঃখ নদী ঠোঁটে নিয়ে দীর্ঘশ্বাস। মানুষ! এসো তবে প্রজন্মের জঠরে রোপন করি মনুষ্যত্বের বীজ, বুকের উপত্যকা ভিজিয়ে দিই দুর্বার আন্দোলনে।




নদীগুলো আমাদের ছেড়ে যাচ্ছে
.......................................................
নদীগুলো আমাদের ছেড়ে যাচ্ছে কিংবা আমরাই ছাড়ছি নদীর মোহ। ঘাটে নৌকা ফেলে রেখে টপকে পার হচ্ছি জলপ্রাচীর। নদীগুলো বোবা কথা বলতে পারে না। আমরা চুপসে গেছি পরিবেশ বিজ্ঞানের ভুল ব্যাখ্যায়। সাধ্য নেই নদীকে থামিয়ে দেওয়ার। না, এজন্য কোন মানুষ আদালতে যায়নি রিট পিটিশন নিয়ে। অনুশোচনা শুধু পাখিদের ক্ষেত্রেই হয়। পরোক্ষ মাটিতে ঠোঁট রেখে কেঁদে ওঠে খুব। জলপিপাসা তারও যে লাগে। পাখিরা স্বাক্ষী থাকুক, এ শহর ও সভ্যতা আমার অথচ কী নির্দয় ভাবে মেরে ফেলছি নদীকে। অথচ একদিন নারীর পাশাপাশি নদীকেও ভালোবেসেছিলাম। কোন একদিন লোকালয় অপ্রিয় হলে আমরা সবাই ভাসতে ভাসতে চলে যাবো নদীটি কাছে।




শহরে শোকসভা
.............................
আজন্ম পরিচিত এই শহরের বুকে কে যেনো জ্বালিয়ে দিয়েছে ধাবমান আগুন। তুমি শুধু ঘরদোর গুছিয়ে রাখো ঠিক। রূপান্তরিত রাতে প্রাচীন হাতটি উঁচিয়ে যারা চিয়ার্স বলে হেসে উঠেছিল তাদের আত্মা এইমাত্র বিদায় নিলো।আমরা পারিও বটে। হারানো শোকসভা শেষে এই শহরে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল বেশ্যাবৃত্তি। পেশা বদল হয়, ঠিক সমান্তরাল আবর্তনে পুরুষের হাতে যেভাবে বদল হতে থাকে পেশা। বিপরীতে দাঁড় টানা এই আমি কিছু জলজ অনুভূতি রেখে যাচ্ছি অন্যের শরীরে। এই শহরটা শুধু ট্রাফিক পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিতে পারে নি। কার এক অমোঘ নির্দেশে যেনে পণ্ড হয়েছে হারানো শোকসভা।