রবিবার, ২১ মে, ২০১৭

সৌরভ মজুমদার



সৌরভ মজুমদার

খেলাবেলা

যখন খেলাবেলা -
বারান্দাতে খাশি পাহাড়
লজ্জাবতী বাগান ঘিরে
দেয়াল জুড়ে আলপনা দেয়
সবুজ তরুলতা ।

ছোট্ট ছেলে ধানের খেতে
নদীর পারে, কৃষ্ণচূড়ায় -
হাওয়ার দোলায় কাশের বনে
গোরাং জলে গুণ টানা এক
স্বপ্নকথার মাঝে ।

রেল স্টেশনের একটু দূরে
সুভাষপল্লী মোড় ছাড়িয়ে
বাঁক নিয়েছে রাস্তা যেথায়
ব্যাংক কলোনির দিকে -

সেইখানে যে কোকড়াঝাড়ে
কাম্বলে দাদার বাঙ্গালি ভাই
আজও একাই ঘুরে বেড়ায় -
হারিয়ে গেছে সময় কোথায়
হট্টমেলার দেশে ।
সন্ধে হলেই পড়তে বসা
কীট এর খোঁজে বোড়োর আসা - 
বন্যাজলে শহর ভাসা
কলার ভেলায় খেয়াল খুশির বাহাদুর রাই
লগী ঠ্যালার বেদম মজায় জড়িয়ে নিত সঙ্গে ।

ভুলেই থাকা গল্পকথা
কল্পলোকে গভীর গোপন ছোট্টবেলা
আজকে যখন অন্য খেলায়
ঝাপসা চোখেই অতীত সময় - ইচ্ছেগুলো
সতেজ রাখে ক্লান্ত মনের বয়েসবেলা ।।




গান
একটা গান এর জন্ম মুহূর্ত, একটা সম্ভাবনা -   
আপ্রাণ ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করছি,  
টুকরো কথার ঘেরাটোপে পেতে চাইছি 
সুরের চলাফেরা । অনভ্যাসের আস্তরণ সরিয়ে...  

বুঝছ না কি !  

বিরোধের তীব্রতায় অবিন্যস্ত হাঁটছি । এলোমেলো   
দেখাগুলোর পরতে পরতে, আপাত সারল্যে ঢাকা, জমাট    
বিস্ফোরণ । দেখতে পাচ্ছি । বেশ ধরা পড়ছে একেকটা 
মীড়, তাল, লয় । আবার পড়ছেও না...      

শুনছো কি !       

উঠে দাঁড়াচ্ছে পরিণত সেই গান ।   
তীব্র আকার নেওয়ার ফাঁকে, তার ইচ্ছেগুলো...    
সময়... 
মুহূর্ত...
ছোঁয়া যাচ্ছেনা আর । ঠিক যেমন করে ছুঁতে চাই –    

কখনো কি ছোঁয়া যায়, কোনও গানকে সারাটা সময় ধরে
মানুষকেও... 



প্রিয় বন্ধুকে

যদি একটু মন খারাপ লাগে, একটা কবিতা লেখো
যদি মন একটু বেশি খারাপ লাগে, একটা কবিতা লেখো  
যদি মন আরও বেশি খারাপ লাগে, একটা কবিতা লেখো  
যদি মনে একটু একটু করে খারাপ লাগা জমতেই থাকে -   
সব ভুলে, সব ভুলে গিয়ে, এবার একটা কবিতাই লেখো । 

যদি মন কিছু একটা ভুলতে না পারে, একটা কবিতা লেখো  
যদি মন আর কিছু ভুলতে না পারে, একটা কবিতা লেখো    
যদি মন আরও বেশি কিছু ভুলতে না পারে, একটা কবিতা লেখো     
যদি মন কোন কিছুই ভুলতে না পারে, একটা কবিতা লেখো    
সব মনে করে । সব মনে করে - এবার একটা কবিতাই লেখো ।  

যদি অল্প কিছু মনে না পরে, একটা কবিতা লেখো  
যদি বেশি কিছু মনে না পরে, একটা কবিতা লেখো  
যদি একটুও কিছু মনে না পরে, একটা কবিতা লেখো    
যদি কোন কিছুই মনে না পরে, একটা কবিতা লেখো  
কিছু মনে না রেখে । কিছু মনে না রেখে - আজ একটা কবিতাই লেখো 
সব, সব মন ঢেলে দিয়ে । তুমি এবার একটা নতুন কবিতাই লেখো । 




বসন্ত-লীন  

ধুলোয় ঢেকেছে পলাশ                 জারুল খেল করাতে -
কৃষ্ণচূড়ার অস্থি মজ্জায়                 শহর বাড়ছে প্রস্থে । 

গাছের বসন্তে শোনা যায়               শীত, খুব শীত দৈত্যকান্না - 
চাকায় বা অল্প হাঁটতেই                পিচরাস্তার মাটি গল্প ।  

ভ্যাট এর পাশেই মা টি                ছোটটি কাঁখেতে হাসছে
দুই হাতে মাকে আঁকড়ে               শহর বাড়ছে দৈর্ঘে ।

বাবাকে দেখেনি বড়টি                 দেখছে ট্র্যাফিক সিগনাল 
থেমে যাওয়া যন্ত্রজানলায়              হাত পেতে শুধু চাইছে ...    

বসন্ত উড়ছে আকাশে                 শীত, বড় শীত মাটিতে  
শহুরে রোদের ছোঁয়াতে               পাতামানুষীরা তবু বাঁচছে। প্রবল বাঁচছে ।





অপ্রকাশিত

আমি লিখি। সত্যি। লিখেই চলি, যখন ইচ্ছে। কী লিখি, কেন লিখি অতশত  
ভেবে লিখি না। ভাল লাগে। কথা বলতে চাই, তাই লিখি বোধহয়। প্রকাশের তাড়নায় -
অপ্রকাশিত সত্যি এটাই যে, শব্দেরা অনবরত পর্দা সরিয়ে সরিয়ে আসে নিঃশব্দযাপনের
নিভৃত মুহূর্তে আমার । অক্ষর উৎসবে মেতে উঠি ধর্মপালনের অকুণ্ঠতায় । নিয়মিত ।  

অপ্রকাশিত, তবু মিথ্যে নয়। চলতে চলতে আমার কথারা, কখনও তোমার বা অন্য কারো,
থরে থরে আসে । কখনও আবার অন্যকোনও ছাইপাশ।
সারাটা সময় রক্তের মতো, রোদের মতো, জলের মতো লিখে যাই -   
কখনও আবার অদ্ভুত কালোর দাপাদাপি, শরীরময় অস্থিরতা। শিরায় শিরায়, ধমনীতে। থামি।

থেমে যাই লেখা বন্ধ করে। বেশ বুঝতে পারি শব্দের বিদ্রোহ। এগোনো হয়না সেদিন আর বোধের ওপারে -  
লেখাগুলো পড়ে থাকে অচেতন শব্দশরীর নিয়ে। পড়ে থাকে কথাভাষ কত, অপ্রকাশিত ।।