লগ্নজিতা দাশ
অন্য
জীবন
গভীর রাতে দরজা বন্ধ অন্ধকার চারিপাশ
মধ্যরাতের নিস্তব্ধতাকে খান খান করে
ডেকে গেল কোনো এক রাতজাগা পাখি।
চরাচর ব্যপ্ত গাঢ়
অন্ধকার,শুধুমাত্র
তারাদের খেলা চলছে আকাশ জুড়ে।
কখন যেন টুপ করে
খসে পরবে,কারুর
মনের গোপনে ইচ্ছের খেসারত দিতে।
রাতের শীতল হাওয়ায় গাছেদের শরীরেও
শিহরণ খেলে যাচ্ছে। পাতায় পাতায়
শিরশিরানী যেন কোনো চুপকথার কানাকানি।
মধ্যরাতের নীলে মাতোয়ারা সমস্ত চরাচর।
এরই মাঝে পাশাপাশি শুয়ে থাকা দুটি প্রাণ।
যান্ত্রিক শীতলতায় শুধু হৃদপিণ্ডের
শব্দ ধ্বনিত হচ্ছে। জীবনের স্পন্দন।
এত কাছে থেকেও তারা এক যোজন
আলোকবর্ষ দূরে নিজেদের থেকে।
রাতের গান নাকি নতুন সকাল-
কিসের স্বপ্ন বিভোর তারা!!!
গোপন
ইচ্ছা
নিকষ কালো মিষ্টি সে এক বিষ
ছড়িয়ে পড়ছে সারা অঙ্গ জুড়ে,
বাঁধন ভেঙ্গে ধুকছে প্রতি শিরায়।
রন্ধ্রে রন্ধ্রে যাচ্ছে সব পুড়ে।
সম্মোহিত আজ হচ্ছে দেহমন,
বিক্ষিপ্ত যে সকল চিন্তাধারা
পাপ পুণ্যের হিসেব মিলছে নাতো
মস্তিষ্ক বেহিসেবি দিশাহারা।
দুরবার এই অবুঝ জলস্রোত
মানবে বাধা কোন সে মন্ত্রবলে
সর্বনাশের এ কোন ছবি আঁকি,
রাশ টানব কোন সে কৌশলে
ফেরার হয়ে গেছি সেতো কবেই
ঘেরাটোপের বাগানে ইতি টানি
বিষের নেশায় হয়ে উঠেছি বিভোর
অচিন পাখীর নিষিদ্ধ হাতছানি।
পরম
বন্ধু
তুমি আছো তাই আলোয় ভরা
আমার এই আকাশ,
তুমি না থাকলে অন্ধকারের
গহ্বর হবে
চারিপাশে।
তুমি আছো তাই আমার
দিনরাত
মোহময়,
তুমি না থাকলে আমার জীবন
ভরবে
হতাশায়।
তুমি আছো তাই রঙিন নেশায়
মেতে আছি
দিনরাত,
তুমি না থাকলে সাদা কালোতেই
জীবনের
সংঘাত।
তুমি আছো তাই সুখের সাগরে
ভেসে আছি দুই
বেলা,
তুমি না থাকলে সংসারেতে
শুধুই
অবহেলা।
তুমি আছো তাই দায়িত্বের বোঝা
দিয়েছি শিকেয়
তুলে,
তুমি আছো তাই জীবনকে আমি
পেয়েছি
প্রাণভরে।
তুমি আছো তাই করি
হাসি,রব,অভিমান,
তুমি না থাকলে অনুভূতিগুলো
হয়ে যাবে সব
ম্লান।
তুমি আছো,তুমি থাকবে শুধুই
আমার জীবন ভরে,
তুমি না থাকলে থাকব যে
আমি প্রাণহীন রূপ ধরে।
রঙিন
ইচ্ছে
সেদিন এক অনুষ্ঠানে যাব বলে
রংভরা সাজের
বাক্সটা বার করলাম।
ডালা খুলতেই ঝলমলিয়ে উঠলো কত রঙ।
ছোট ছোট খোপে সাজানো নীল,সবুজ,
গোলাপি, সোনালী হরেক রঙ।
মনটা যেন হঠাত ই খারাপ হয়ে গেল,
ইচ্ছে হল ওই খোপে
বন্দী রঙগুলোকে
মুক্ত করে দিই।
ইচ্ছে হল নীল রঙ টায় মিশে গিয়ে আকাশ
হয়ে যাই , সমুদ্রের গভীরে যে সবুজ জগত আছে,
সেটা ছুঁয়ে আসি ওই
বাক্সে বন্দী সবুজ কে
সাথে করে ।
গোলাপি , কালো ,সাদা রঙের সাথে একাত্ম হয়ে
নিজেকে মুক্ত করে
ঝিনুকে সাজাই।
ইচ্ছে হল সোনালি, রূপোলি রঙগুলো তে মিশে
চাঁদ,তারা হয়ে মহাকাশে
দীপ্ত হয়ে উঠি।
আর বাক্স বন্দী যে রঙ গুলো উদাসীন,তাদের
হাত ধরে যাযাবর হয়ে যেতে চাইল মন।
মন চাইছে সব রঙ
গুলো কে মিলিয়ে মিশিয়ে
একটা রঙ্গিন পাখির মতন উড়ে যাই,
কন এক নাম না জানা কুমারী দ্বীপে
চারপাশে রঙদের কে ছড়িয়ে দিয়ে নন্দনকানন
করে তুলি ।
যে রঙ সমস্ত মলিনতা কে প্রলেপ দিয়ে সৌন্দর্জ বৃদ্ধি
করে,
সেই রঙ গুলো কে উন্মুক্ত করে মুখের নয় মনের শোভা
বাড়াতে চাই আজ।
স্বপ্নিল
বিকেল
ফাল্গুন মাসের শেষের দিক তখন,
একটা পড়ন্ত বিকেলে একান্তে দেখা করলাম
সমুদ্রের পাড়ে, বেশ উতল হাওয়া দিচ্ছিল,
খানিক হেঁটে বসলাম গিয়ে বালির ওপর,
পাশাপাশি।একরাশ লজ্জা নিয়ে চোরা চোখে
তাকালাম তোমার দিকে ,তুমি হাল্কা হেসে
আরো কাছে সরে এলে।হাত রাখলাম তমার হাতে,
ঢেউ গুলো কখনো হাল্কা ,
কখনো মাঝারি হয়ে আছড়ে পড়তে লাগলো-
তার পরশ পেলাম আমার বুকের মাঝেও।
কোথায় যেন ভেসে যাচ্ছি অনন্ত ভাললাগায়।
পড়ন্ত আলোয় মনের সব ভালবাসা টুকু
উজার করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলে
খানিকক্ষণ। আমার ওড়নাটা হাওয়ায় উড়ে
তোমার মুখে গিয়ে পড়ছে, তুমি কি আবিষ্ট
হয়ে পড়ছ না !!!
সন্ধ্যের আঁধার নামতেই আমার কপালে
তোমার ঠোঁটের গভীর পরশ _
আমি বিহ্বল, তোমার কাঁধে রাখলাম
আমার মাথা । সময় যেন থেমে রইল।
মুহূর্ত গুলো যেন সদ্য পাওয়া মুক্তো।
হারিয়ে গেছিলাম কোথায় যেন।
ঢেউ গুলো পা ছুঁয়ে যাচ্ছে , সুখের
সাগরে ভাসছি আমি।
আচম্বিতে ধ্যান ভাঙল। ফিরতে হবে বাস্তবে।
জানিনা কেন পা দুটো অবশ ।
আমি চলছি নাকি ভাসছি অনুভব করছি না।
তোমার হাত ছুঁয়ে স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে বাড়ির পথে।
রূপকথার দেশে নিজেকে খুঁজে পাওয়া
জীবনের মাঝপথে – এই স্বপ্নের তাই শেষ নেই।