রবিবার, ২১ মে, ২০১৭

অভিজিৎ পাল




অভিজিৎ পাল

আত্মহননের আগে

কাগজের ভাঁজে জমিয়ে রেখেছি ইচ্ছেদের। উপার্জন কমে এলে মানুষেরও দামের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। দরজার কাছে মুখোমুখি দেখা হলে সর্বানী তাকিয়ে হাসে মাঝে মাঝে। মুখে ওর বিষাদরঙা হাসি। আমার মানুষঘর নেই। ছিলও না হয়তো কখনও। মেপে নিতে পারছি ডিজিট্যাল দূরত্ব। কম্পিউটার থেকে চোখ সরাই। সিলিং ফ্যান চেয়ে চেয়ে হাসে এক ব্যঙ্গাত্মক ক্রূর হাসি। সস্তা হয়ে ওঠা আমার ভাবনারা জোয়ার তুলতে চেয়েছিল কোনো এক আদিম সময়। ভুলে যাই। আশ্রয় খুঁজতে চাই চিরন্তনী সেই অন্ধকারে..
..............................................................................................



ঊষসীর জন্য যে কবিতাটি বন্ধক রাখা হল

ক্যাম্পাসের ফিকে হয়ে আসা আলোরঙ ক্রমশ পুরাধুনিক পরম্পরায় আরও ম্লান হয়ে আসছে। ক্লাসরুমে ওর দেরী করে আসা ছবিটি ধীরে ধীরে মেনে নিয়েছিল সবাই। আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে দেওয়া ওর সমস্ত খামখেয়ালী কথাগুলোকে মানা আর না-মানায় মেশাতে মেশাতে সবাই বুঝতে পারছিল সহজগম্য নয় সে অতটাও। বাসন্তিকী রঙ মাখে মুখে। হাসতে ভালোবেসে আকাশ রাঙিয়ে দেয়। গান্ধর্বীকলার আভিজাত্যের সঙ্গে মঞ্চের উপর সাজিয়ে তোলে রবীন্দ্র মোহবিতান। নড়ে ওঠে নবীন হাওয়ার গান। মাতন লাগে ক্যানভাসে। ক্যালেন্ডারে ছোঁয়া লাগে শল্কমোচনের। আমার বোনটি ক্রমশ আকাশের মতো হয়ে যাচ্ছে..
..........................................................



ক্যাম্পাসে মেলে বসি পারঙ্গমার মেঘদূত কাব্য

ইউনিভার্সিটির কার্ণিশে এসে লেগে আছে মন কেমন করা রোদ। করিডোর দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে পাশ ফিরে দেখছি চেনা ক্লাসরুমগুলো। খুঁজছি আমার বহু কথকতা আর খিল্লিযাপনের সহযাত্রী বন্ধুদের। পরের ব্যাচও আমার আত্মজনই ছিল। ওদের বিদায়ী দিতে পারি নি এখনও। পারঙ্গমার কথা ভেসে আসে দূর থেকে। আশ্বর্য হয়ে শুনি। দীর্ঘাঙ্গিনীকে খুঁজে ফিরি। জীমূত হেসে ওঠে খুব কাছাকাছি কোথাও। চমকে ওঠে ধূলো মাখানো ক্যানভাস। এবছর বর্ষাকাল কবে আসবে পারঙ্গমা..
.......................................................



প্রাক্তন

ফেলে আসা বন্ধুত্বদের দিকে ফিরে তাকাই। আমার অবচেতনে ঘুরে বেড়ানো যৌনবোধকে ঢেকে রাখি নীল জামায়। আজীবনই এমন করে শরীর বয়ে বেড়াই। আর্কষণ করি আমার নিজের শরীরে মনে জড়তায় পসরা সাজিয়ে বসা কষ্টদের। বোধবৃক্ষের ঝুরি ধরে বসে থাকি। এই পথেই একদিন ক্রমমুক্তি ঘটেছিল কারও। প্রাথমিক প্রতিবন্ধকগুলো এখনও ভাঙতে পারিনি ঠিকভাবে। ঠুনকো নই অতটাও আমি। হিতে বিপরীত হবে ভেবে মেনে নিয়েছিলাম আমার মর্যাদাহীন যাপনগুলো। হারাতে শিখেছিলাম আত্মিক বিশ্বাস স্থবিরতা মেখে। কখনই কেউ বলেনি, শেখায় নি, নিজের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ। শেখাবেও না কোনোদিন..
.................................................................



একটি প্রকরণবাদী কুশপুতুল বিসংবাদ

কলেজ স্ট্রিটের পথে হেঁটে চলি। পাওয়া আর না-পাওয়ার মধ্যে মিশে থাকা আমাদের অবিকৃত ধ্বনিগুচ্ছ জমেছে স্লোগান হতে হতে। কুশপুতুল সাজাই। মজা দেখি। আকাশ বাতাস কালো করে ফেলি স্লোগানের ধূলোয়। নাভি থেকে উঠে আসে প্রণব মন্ত্র। অনুরণন ঘটে কশেরু বরাবর আরও একবার চেনাছন্দে। অজস্র ধিক্কার দিয়ে দিয়ে আগুন সাজে। উদ্যাম লাঠি চার্জ। পৈশাচিক আনন্দ মাখিয়ে একা কূট হাসি হাসে প্রতিবাদ। ভয় জাগে ক্যানভাসে। ফ্যাকাশে রঙের একটা গাঢ় ভয়। অজানা সময়ের ভয়।  কখনও কুশপুতুল আমাকেও সাজতে হতে পারে..!
.................................................................