রিয়া চক্রবর্তী
জন্ম
মৃত্যু জন্ম
ফিনিক্সের চিতাভস্মে
পুনর্জন্ম আমার,
পুরনো যন্ত্রণাগুলো
বিসর্জন দিয়েছি
চিতার আগুনে।
পৃথিবীর নাড়ী ছিঁড়ে
জন্ম যে গ্রহের,
জন্মবিন্দুতেই
ফের বিস্ফোরণ,
অন্ত শুদ্ধস্নান,
শূন্য থেকেই ফের
শুরু পথ চলা।
রঙরসিয়া
কাব্যকথা
দিনের ফাটলের মধ্যে দিয়ে দেখা যায় রাতের রূপকথা
শূন্যতা আর তারার মধুর মিলনে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন আলোর পথ।
বসন্তের উষ্ণ দুপুরে যখন আসবে কবিতা
একটু নুন, একটু চিনি মেশাবার সাথে সাথেই
বুভুক্ষু নিঃসঙ্গতা ঝাঁক বেঁধে আসবে
শান্তির জন্য আবারও মেশাতে হবে
একটু ভালোবাসা, একটু আন্দাজ মতো রং
তৈরি হবে তোমার কবিতা।
বিকল্প তাদের পরিবেশন করবে কিছু সুখের মুহূর্ত,
আজকাল আবার কবিকে কবিতা লেখার সময়
শিল্পের দিকে, রঙের দিকে লক্ষ্য রাখতেই হয়,
তখনই কবিতা তৈরির সাথে সাথেই
তৈরি হবে জ্যামিতিক রঙ্গভূমি।
প্রত্যেকটি শব্দই নিজেদের সাজাবে
সরল নিষ্পাপ সৌন্দর্যে,
উপভোগ করবো নিঃশ্বাস- প্রশ্বাসের সাথে।
উৎসারিত দুর্বার শব্দেরা মিছিল করবে
দীর্ঘ, মহৎ ও নৈপুণ্যে অর্জিত হাত ও মাথায়
অনায়াস ব্যাবহারের জন্য-
দুর্দম ঘোড়সওয়ারদের
অশ্ব চালনায় প্রকাশ পাবে।।
একটি
কবিতার জন্য
----
একটি কবিতা লিখব বলে
এক আকাশ রোদ্দুরকে সাথে নিয়েছি
ঘুম ভাঙিয়েছি সব শব্দের
ইজারা নিয়েছি যত স্বপ্নের
এঁদো পুকুর থেকে শব্দ গুলোকে তুলে
স্বপ্নের সাথে শুদ্ধ হতে দিয়েছি,
স্বপ্ন আর শব্দের ছোঁয়ায়
এঁদো পুকুর হলো পদ্মশোভিত,
স্বপ্ন গুলো হলো পদ্মগন্ধা নারী,
ঠিক তখনই শুরু হলো
তাদের অলৌকিক খেয়া পারাপার ...
আমার আর কবিতা লেখা হলোনা।
জীবন
মৃত্যু কল্পযোগ
উত্তাল সমুদ্রের মধ্যে দিয়ে যখন
নক্ষত্রদের গান পৌঁছে যায় গভীর থেকে গভীরে
নুড়ি পাথর গুলো মুগ্ধ হয়ে গড়িয়ে পড়ে
সমুদ্রের ধুয়ে দেওয়া বালির ওপর।
কোথাও কোন গতিশূন্য কবির মৃত্যুতে
সারা বিশ্ব সরগরম কবির মাহাত্ব্যে,
শুধুমাত্র কবিতার শব্দ গুলোই যাত্রা করে
নিঃশব্দে সেই কবির সাথে মহাপ্রস্থানের পথে।
অন্যএক জীবন
একটি অভাববোধ, কিছু
অমানবিক বঞ্চনার স্মৃতি
দীর্ঘ বন্দীদশা,
নীরব কান্নায় পৃথিবীও
ভেঙে গুঁড়িয়ে যায়,
এক একটি লোহার শিকল খুলে
বেড়িয়ে যাওয়ার পরেও
স্মৃতি বহনের কষ্টের কষ্টত্ব থেকেই যায়।
স্মৃতির ব্যবচ্ছেদে যখন পেশীতন্তু ব্যকুল হয়ে ওঠে
তখন, একমাত্র কবিতাই মনকে স্থির করে রাখতে পারে,
রাত্রির প্রতিটি শিরায় উপশিরায়
আঘাত করে হৃৎপিণ্ডের মাংস ছিন্ন ভিন্ন করে।
যখন সকাল হয়, নতুন ভোরের সাথে
দিনটাও জলের মতো বয়ে চলে।
বন্ধ
ঘরের কাব্য
দেখেছো কখনও শব্দের চোখে ফোঁটা ফোঁটা জল জমতে ?
এক ফোঁটা-দু ফোঁটা -তিন ফোঁটা,
টুপ টুপ করে ঝরে পড়তে চিবুক বেয়ে,
আঙুল ছুঁয়ে খাতার পাতায় মনের খাতায়?
কালবৈশাখী ঝড়ে যখন ধুলো ওড়ে,
তখন কেন চোখ ,মুখ রুমালে ঢাকো?
সাহস করে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে দেখো একবার,
প্রশান্ত মহাসাগরের অজানা দ্বীপের গন্ধ এসে ভিড়বে আঙিনায়।
কখনো কখনো খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখো।
দেখবে তোমার ছাদের কার্নিশে পায়রাদের বকম বকম
কতগল্প শোনাবে তারা তোমায় গত রাতের মেঘপরীদের।
তাদের ডানায় করে আনবে দেখো তোমার জন্য রাত শিশিরের জল।
বন্ধ ঘরে কখনো নিজের সাথে গল্প করে দেখো।
নিজের ভুল গুলোকে অকপটে স্বীকার করে দেখো।
ভালবাসার কাছে নিজেকে সম্পূর্ণ মেলে ধরে দেখো
দেখবে নতুন করে ভালোবাসাকে ভালোবেসে ফেলবে।
মনখারাপের দিনগুলোতে নিঃশব্দে কখনও বালিশে মুখ লুকিয়ে
কেঁদেছো ?
একা একা গভীর রাতে ছাদে হেঁটেছ কখন?
দেখবে কত তাড়াতাড়ি সব কিছু আলোকময় হয়ে ওঠে।
কত তাড়াতাড়ি নিজেকে আবিষ্কার করতে পারবে নতুন করে।
মাঝে মাঝে গোধূলিবেলায় হেঁটে যেও যেকোন অজানা রাস্তা ধরে।
ছায়াদের সাথে নিয়ে আমিও হাঁটি তোমার সঙ্গে তোমার ছায়া
হয়ে।
বছরের প্রথম বৃষ্টিতে ভিজেছো? ভিজে দেখো একবার,
কিংবা ছেলেবেলার মতো করে কাগজের নৌকো বানিয়ে
একটা একটা করে ভাসিয়ে দিও সেই বৃষ্টির জমা জলে।
মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে কবিতার কান্না শুনেছ কখন?
আজ আমার এই মনটাকে শরীর থেকে ব্যবচ্ছেদ করে দেখো
তুমি আর তুমিই থাকবে সেই ভাগাভাগিতে।
আর আমি? আমি তো আছি তোমার মন জুড়ে।
নাহয় আজ কবিতারই ব্যবচ্ছেদ করা হোক,একেবারেই নিরপেক্ষ
ব্যবচ্ছেদ।