বৃহস্পতিবার, ২১ মে, ২০২০

কাজী রুনালায়লা খানম


কাজী রুনালায়লা খানম

ভালোবাসা বৃক্ষ হয়ে ওঠো '

কিছুই পারিনি জানো তো,
যে কথারা জমে আছে বহুকাল
বুকের ভেতর
বলা হয়ে ওঠেনি সেভাবে...
দুহাতে ছুঁয়েছি এই মাটি,
দুপায়ে হেঁটেছি এই পথ
ধানীমাঠ,চা বাগিচা,  অরণ্যের বুকের ভিতর
কেবলই হেঁটেছি আমি আজন্মকাল
মাধুকরী করে জমিয়েছি শব্দের খুদকুড়ো।

যে মানুষ পেতে রাখে সহজ প্রত্যয়।
যে মানুষ ভালোবাসে,ফসল ফলায়
যে মানুষ অজস্র ভাঙন বুকে চেপে
জীবনের কাছে আসে, ঘন হয়ে বসে
তার কথা বলিনি কখনো

যাদের ঘরকন্নায় লেগে থাকে
অভাবের স্যাঁতাপড়া দাগ,
হাভাতে গন্ধ নিরন্ন হাঁড়িতে
তাদের কথা সেভাবে বলা হলো না।

সেইসব মানুষের কথা
যারা ছড়িয়ে দিচ্ছে মুঠো মুঠো স্বপ্নের বীজ,
শব্দের বীজ,আলোর বীজ...

ভালোবাসা বৃক্ষ হয়ে ওঠো।






ভালোবাসা সাঁকোটির কাছে'

কোন কোন মানুষের মনের ভেতর একটা আলোছায়া উঠোন থাকে,
একটা নিজস্ব গন্ধে ভরে থাকে মায়াময় বিকেল,শঙ্খমুখর সন্ধ্যাকাল।
আর চোখের পাতায় সাজানো থাকে একটা মরমিয়া ঝুলবারান্দা।
সেখানে ভালোবাসা রঙের রোদ্দুর আঁচল বিছিয়ে রাখে বারোমাস।
মনখারাপের ঘুমোট ঘরে দমবন্ধ হয়ে এলে,
ভীড়ের মাঝে ভীষণরকম একলা হলে
যেখানে এসে দুদন্ড বসা যায় নিজের মুখোমুখি

শহরের ভীড় ঠেলে,হাজারো ব্যস্ততার জেব্রাক্রশিং পেরিয়ে
দূরত্ব শব্দটাকে আমরা যেদিন হাওয়ায় উড়িয়ে দিলাম।
সেদিনই আমি আবিস্কার করলাম সেই আশ্চর্য ভূখন্ড!

তুমি সাবলীল পেরিয়ে যাচ্ছো জন্মদিন নামাঙ্কিত একটা মেধাবী সাঁকো।
জ্বলন্ত মোম আর ফুলের পাশে আমি চুপি চুপি রেখে আসছি কয়েকটুকরো যাপন।

ভালোবাসা শব্দটির ভাগ্যিস কোন বিকল্প হয়না






ভালোবাসা প্রসারিত করো

চলো ঘুমোতে যাবার আগে 
স্পর্শের পারদে মেপে নিই
কে কতোটা ছুঁয়ে আছি কাকে
  কতোখানি লীন হয়ে আছি
       একে অপরের অতলান্ত বুকে।

অনিবার্য ঘুমের সময় এখন
আমরা বরং ব্যক্তিগত শোকের পোষাক খুলে ফেলি

বরং আনন্দ সাজিয়ে রাখি
             প্রেমিকের বিশ্বস্ত চোখে
সরল শিশুটির অপাপবিদ্ধ হাসিতে
বৃদ্ধ প্রপিতামহের মিহিন সাদা চুলে
সবুজ লন্ঠন জ্বেলে শুশ্রুষার মায়াময় শব্দ
ঠোঁটে করে বয়ে এনেছে যে দূরচারী নাবিক পাখিটি
গাঢ়স্বরে শিস দিতে দিতে  বলে গেলো ''ভালোবাসা প্রসারিত করো"!
অবশ্যম্ভাবী ঘাতকের বেশে
ঘুম এসে দাঁড়িয়েছে আমাদের প্রত্যেকের নিজস্ব সীমায়।
ভালোবাসা প্রসারিত করা ছাড়া
 আমরা তো আসলে অনন্যোপায়!
আমাদের ঘুমের বিনিময়ে
হয়তো নিলাম হবে এইসব সুদীর্ঘ দিন দীর্ঘতর রাত 






নিজস্ব নিয়মে

ঘুমঘোর কেটে যাবে শ্রান্ত পৃথিবীর
পাখির ভোরাই গানে জেগে উঠবে আমাদের সন্ততিরা
আবার নতুন করে এ পৃথিবী হয়ে উঠবে পবিত্র সুন্দর!
বিকেলের নরম রোদ গায়ে মেখে
শান্ত পায়ে হেঁটে যাবে অমর্ত্যযুগল।
সন্ধের দুয়ার খুলে প্রতিঘরে অপেক্ষা করবেন আমাদের শ্রীময়ী মা।
একে একে মুছে যাবে সমস্ত সীমানা প্রাচীর
ধর্ম আর রাজনীতির স্থবির শিকড় সটান উপড়ে ফেলে
বৃক্ষবন্দনায় ব্রতী হবে উত্তরপুরুষের দ্যুতিময় হাত।

হালকর্ষণের সহজ মুদ্রা ফুটে  থাকবে
আমাদের সন্তানের হাতের রেখায়
এ কোন স্বপ্ন নয়,এ আমার নিগূঢ় প্রত্যয়।
এসো ঘুমোতে যাবার আগে
আমরা বরং
খুলে ফেলি ব্যক্তিগত শোকের পোশাক
এসো 'ভালোবাসা' প্রসারিত করি আরো একবার।