বৃহস্পতিবার, ২১ মে, ২০২০

রমা সিমলাই


রমা সিমলাই

অধরামাধুরী

মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে উঠে
যে পুরুষের গন্ধে, ডানায়
থিরথির করে ওঠে প্লাবন -
নাঃ, সে তুমি নও।

যে মৃত্যুকে সারাজীবন "তুহু মম
শ্যাম" বলে আন্তরিক অক্ষর জড়ো করি-
নাঃ, সে কখনও
আত্মীয় নয়।

যে কবিতাটি লিখতে চেয়ে
তোলপাড় করে ফেললাম
স্বরবর্ণ আর ব্যাঞ্জনবর্ণের
সহজাত চারণভূমি, জানি তাকে
ছুঁতেই পারবো না কখনও।

দূরত্ব আর রোমাঞ্চ
                   মুখোমুখি
                          বসে থাকে
                          ছায়াপথ জুড়ে
কালপুরুষের সাথে তার অমেয় সহবাস।

পরী আর গান্ধর্ব পুরুষ
পৃথিবীর আত্মজন হয় না কখনো
কখনোই নয়।




আর্তনাদের শিলান্যাস

আমার দু'পাশে ঈশ্বরের মতো পাথরমানুষ আর তাদের পাথরের ঘরবাড়ি। পাথরের গুঁড়ো দিয়ে তাদের কবিতা আর ভাস্কর্য। পাথরের বড্ডো অভাব আমার কংক্রিট  অস্তিত্বে।

রোদ বৃষ্টি ঝুলকালি - এসব অনাড়ম্বর অনুষঙ্গ সেপটিপিন দিয়ে আটকে রেখিছি জঙ্ঘায় জানুতে। - যতক্ষণ ঝড় না আসে টিঁকে যাবে। সেপটিপিনে মরচে আসতে সময় লাগবে বেশ খানিকটা।

এখন আর কুলুঙ্গী ভাড়া পাওয়া যায় না। সুরক্ষিত ইঁদারার পাশে মৃত হরিণ আর বর্ণময় ইঁদুরেরা শীতঘুমে আছে। ওদের গলায় লটকানো গত শতাব্দীর শেষতম মৃত্যুভয়।

সুরক্ষিত বাতাস আর বাতিল বাতিঘরে থরে থরে সাজানো আর্তনাদের আন্তর্জাতিক পাণ্ডুলিপি, আধপোড়া চুম্বন, বাসি সহবাস।

বৈধ না অবৈধ - জানা হয় নি।

আমার কংক্রিট ঘিলু, মড়ার খুলিতে রাখা বিজ্ঞাপন চিবিয়ে খায়।

সুবাতাস বইছে।

নবজাত, নলজাত কঙ্কালেরা নাভিশ্বাসের প্রত্যয় ছুঁয়ে পাথরের আকাশের দিকে চোখ তুলে চায়।

চন্দনকাঠের শয্যায় শুয়ে রঙ্গমঞ্চে অবতীর্ণ হচ্ছে আর একটা কামুক সকাল।

কুলোর বাতাস নিয়ে তৈরী বসুন্ধরা
শেষবার শস্য শ্যামলা হবে বলে!






অশ্লীল উপন্যাস

বৃক্ষটির নামকরণ করা হয়েছিল অশ্লীল উপন্যাস।

শিকড় থেকে কান্ড, লতাপাতা এমন কি ফুল ফল পর্যন্ত অশালীনতায় মোড়া।

বোধিবৃক্ষ - কোনো একটি গুঁড়ি কঠিন হতে হতে জাতিভেদ প্রথার মতো দাম্ভিক। পাতায় পাতায় লোভ, কুশিক্ষা, পণপ্রথা আর স্বার্থপরতার গান্ধর্ব - উল্লাস। সরু সরু ডালগুলো পাড়ার উঠতি
মস্তানদের মতো, সূর্যের অবারিত আলোয় সস্তা রাজনীতি করে। তরল তোলাবাজিতেও অসম্ভব পটু।
শুনেছি, শিকড়ে প্রবল ভ্রূণহত্যার ভ্রূকুটি আর গর্ভপাতের কিস্যা, মাটিকে লজ্জিত করেছে মুহুর্মূহু।

গাছটির ফুলে ফুলে ধর্ষণের ইস্তাহার। ফলগুলোও সাবেকী শয়তান। মৌতাত আর মাঙ্গলিকের আশ্চর্য সহাবস্থান।

বৃক্ষটির নামকরণ করা হয়েছিল অশ্লীল উপন্যাস, যদিও তার শরীরে কোথাও কোনো যৌনাঙ্গের নাম লেখা ছিল না।