শাহরিয়ার রুবাইয়াত
রূপালী পান্ডুলিপি
সেবারই প্রথম, কিন্তু কেউ বিশ্বাস
করবেনা জানি
ইথারের উনুনে আগুন
লাগিয়েছিল যে মায়াবতী চোখ
তাঁরই উত্তাপে
দাবানল হয়ে সমস্ত পুড়েছে হেমাঙ্গ
সেই থেকে শুরু, দৈর্ঘ্য প্রস্থ আর
ওষ্ঠ ডোবানো অনুরাগ
বুকের সবটুকুজুড়ে
কেবলই স্বরবর্ণ আর ব্যঞ্জণবর্নের সমাহার।
এমন করে ভালবাসা
যায়না,
তবু কি
করে যে হয়
একলা রাতের শেকড়ে
ভেজা জ্যোৎস্না ভেসে যায়
অলস দিনলিপি মুছে
দিয়ে অধিকার করে নির্জন তপস্বী
মৌসুম ছুটে চলে
মহকুমায় গঙ্গার কূল ঘেঁষে
কাগজের বুকে লেখা
প্রেম ছুটে যায় বিকেলের ডাকবাক্সে।
আর মাত্রই কয়েকটি
দিন, কয়েকটি নীলাভ রাত
বাকী
এখনতো কেবল শরৎ চলছে
হেমন্তের নক্ষত্র ধরে
জারুলের গ্রীবায়
আশ্রয় করেছে বুলবুলি শাবকেরা
পঞ্চমীর জরায়ুতে
কুসুম ফুটতে এখনো ঢের বাকী
তার পরই তোমার
বাসন্তী গঙ্গোত্রীতে স্থিত হবে আদ্রিজার ভ্রুণ।
আজ ধূসর সন্ধ্যার
বর্ণহীন আকাশে বৃষ্টিরা কলহে মেতেছে
অলস হাওয়ারা জেগে
উঠেছে বিপুল শূণ্যতা থেকে
বিষন্ন ছায়ারা ছুটে
পালিয়েছে অগুন্তি মানুষের ভিড়ে
ভাসিয়ে দিয়েছে
মন্দিরের গায়ে লেগে থাকা মেঘের কাজল
তোমার রক্তিম
সিঁদুরে ভাসানো তীর্যক নিঃশব্দের নদীতে।
তবুও আছে প্রিয়
প্রতীক্ষার শ্যামল স্পন্দন জ্যামিতিক বৃত্তের মত
একেকটি রাত্রির
রূপালী পান্ডুলিপি বিমুগ্ধ চাঁদের কাছে
রোদ-বৃষ্টির
নৈঃশব্দে লুকোচুরি খেলা হিমেল মেঘের মত
ছুটে চলি
অপ্রতিরোধ্য আর তীব্রতম আকাঙ্খার মৌসুমী কুঞ্জে
তোমার বুকের ঘ্রাণ
নিয়ে নির্বিঘ্নে লুকিয়ে থাকা আত্মগোপনে।
সবুজ প্রেমে
তোমাকে রাত-দিন
ভালবেসেছি প্রতিমার মত
চেতনে_অবচেতনে গভীর
নিঃশ্বাসে অনন্তে
এমনকি পকেটে লুকিয়ে
রাখা ভাঁজ করা রুমালের বুননে
কুড়িয়ে আনা সবুজ
পাতায় নরম আলোর মত।
আমাকে বেদনা দিয়েছে
একছত্র প্রেম
যেন রূপালী চাঁদের
মায়া মেলে ধরে রাতের আঁধার
কোন ঘুমহীন রাত জেনে
নেয় প্রভাতের সময়
একমুঠো আকাশের গায়ে
মেলে দেয় রোদের কিরণ।
প্রথম নিঃশ্বাসে
তোমার চোখের বাতায়ন দেখেছি
একসারি রোদ্দুর
লাগানো সে চোখ জুড়ে কেবলই আলো
মাঝরাত্তিরে ডুবে
থাকা তিমির নিবিড় ঘুমে
সিঁথির সিঁদুরে
রক্তিম হয়ে ওঠা প্রভাতের আলোড়ন।
আমাকে সুখ দিয়েছে
পরিণত প্রেম
যেন হৃদয়ের তাপ মেখে
নেয় প্রখর মায়া
কোন সবুজ পাতার গায়ে
গান গায় ভোরের শিশির
একরাশি মেঠোপথ চিনে
নেয় আপন স্মরণ।
আলো আঁধারির কথনিকা
কখনো কখনো চুপ করে
থাকাও অনেক বড় হয়ে উঠতে পারে
যেমন জলের গভীরে
নিঃশব্দে ডুবসাঁতার দেয় পানকৌড়ি
সন্ধ্যা সূর্যের
বিদায়ে নির্বাক ঝরে পড়ে বেদনার্ত হলুদ পাতা
অন্ধের চোখের মত
চারপাশে ছড়িয়ে থাকে কেবলই তিমির
প্রথমা বৃত্তের
মৌতাতে কালবৈশাখী পেতেছিল ইন্দ্রজাল
ঘুমন্ত মায়ার চৌকাঠে
পরাধীনতা দেখেছিল রাজ্যপাট
অমন শান্ত অন্ধকারও
কেঁপে উঠেছিল লুকোনো চুম্বনে
কন্ঠচেরা আগুনে পুড়ে
গিয়েছিল অপরিণত সহচরী আকাশ
প্রথম নিঃশ্বাসে শেষ
রাত্তিরে জ্বলে উঠেছিল আকাশের চাঁদ
সে আলোর হাসিতে
গ্রীবা ছুঁয়ে বিনুনি ঢেকেছিল পয়োধর
ভারী হয়ে ওঠা রক্তিম
ওষ্ঠে আঙুল বাড়িয়েছিল প্রিয়তা
স্পর্শের অমিত
আকাঙ্খায় গাঢ় দিগন্তও ডুবেছিল রমনে
উপাসনার ফুল পথেই
পড়েছিল সতীর্থ বসন্তের আরাধ্যে
চোখ তুলে তাকানো
হয়নি কখনো এমনকি সাময়িক অবকাশে
কত রাত্রি নির্ঘুম
কেটেছে পাঁজরে জমানো দীর্ঘশ্বাসে
অষ্টপ্রহর আঙিনার
বিদীর্ণ প্রেম উবে গেছে প্রতীচ্যের সূর্যাস্তে
কোন এক রাত্রিতে
প্রবৃত্তি ফিরে এলো লেখা হলো অপ্রীতি
আজন্ম শূন্যতা আশ্রয়
করেছিল মোহমুগ্ধ মারিজুয়ানায়
আড়ালে লালিত
প্রতিশোধ রূপ নিল বিকৃত সফলতায়
সেতারের তন্তুতে
বিষণ্ণ করুণ সুর ফিরে গেল ধ্রুব অভিশাপে
পালেদের পাড়ায়
অষ্টাদশী নদী মেতেছে নৈঃশব্দ্যের ডানা মেলে
মননে রাজপুত্র
বুভুক্ষু ভালবাসায় সমর্পিত হয় চৈত্রপল্লবী
সজল সন্ধ্যার
আকাঙ্খিত মিলনে নিষিক্ত হয় সরোজ পদ্ম
ছায়ামূর্তির
স্বপ্নহীনতায় ধূসর হয়ে পরে অনাগত আগমনীর টানাপোড়েন
পূর্ণিমার চাঁদে দিঘীর
কোল ঘেঁষে আগত হয় পুষ্পিত শ্রাবন
খয়েরী শালিকের বুকে
উন্মত্ত প্রেম ডানা ঝাপটায় আলোক ফোটনে
সুতীব্র আলিঙ্গনে
ভিজে যায় প্রবৃত্তিকাতর অধোগামী সুহৃদ ব্যাকুলতা
জ্যোৎস্না ডুবে যায়
দীর্ঘশ্বাসের মত সকরুণ বেজে চলে মেঘমল্লার