সুকান্ত মজুমদার
এখন লক ডাউন
১.
এখন," লক ডাউন "!
উচু-নীচু, সাদা-কালো সমবেত
একিরূপ জীবন চর্চায়,
আমরা সেই তারা
একাকীত্বের
স্ববিরোধী একক
নিঃসরণ।
বারান্দা,বালকুনিতে পরাজিত
জীবেদের
উৎসুক বিনয়ী চোখেরা
ভাষাহীন
বাইরে অসম্পূর্ণ
জীবে খুঁজছে জীবন।
জিজ্ঞাসার সমীপে,
কে যেন সংবাদ নিয়েই
দাড়িয়ে
কে গেল আর কে এল!
অকৃত্রিম ঘনীভূত
ঘনিষ্ঠে
আপনত্বের সুর সদ্য
জেগেছে
চেতন ওষ্ঠে, আমিত্বের কবর থেকে
উঠে আসছে জীবনময়
আমরা।
২.
এখন লক ডাউন -
আমরা এখন কেউ কারো
নয়
সবাই মূলত জীব
অমরত্বহীন,
আপন জনের মৃত শরীর
হয়েছে
শুধুই বিষাক্ত জড়,আবেগহীন।
বাইরে ভাইরাস, ভেতরে আশ্বাস -
আমরা সবাই সবার পাশে
তোমার সাথে ফারাকহীন
আমি
বলেদিচ্ছে আমাদের
নিরপেক্ষ নিশ্বাস।
যেন রূপকথার পাঁচালি
-
সেতো সেই কব্বেকার সেকেলে
বিশ্বাস,
হিতৈষী, সমব্যথী সদা প্রেম
টলমল
স্বল্প বুদ্ধি, সীমিত শিক্ষাধারী
সরল বিশ্বাসী আবেগঘন
যুক্তিদূর্বল।
৩.
এখন লক ডাউন -
সবাই সবার কথা ভাবছি,
হয়ত বানিজ্যিক
ইচ্ছের যুক্তি পোকা
বিষাক্ত সৃষ্টি সুখে
ভুল করেছি
অশ্বদৌড়ে শ্লথ হয়েছি
-
আকাশচুম্বী স্বপ্ন
মোহের সাতটি রঙই ম্লান
মৃত্যুর কাছাকাছি সব
রঙ সাদা,
অস্পৃশ্যতা, সম্ভ্রম, অহংকার
আর চেতনায় বৈষম্যও
নিরুদ্দেশে।
স্তম্ভিত,বিস্মিত !
চূর্ণ বিচূর্ণ সব
ঔদ্ধত্য,বাড়বাড়ন্ত -
বিধ্বস্ত আমি
কাক্ষিত অবকাশে,
শুধু এক চিমটে জীবন
নিয়েই
আরো কটাদিন বেঁচে
থাকবার অভিলাষে
আপনগৃহে যেন আজ
পরবাসে।
৪.
এখন লক ডাউন -
বিভাজন রেখা টানছি
জলরঙে
আপন-আপনে নানা ঢঙে,
এবং রাজ্যে- রাজ্যে, দেশে -দেশে
এমনকি পৃথিবী ও
আমিতে
অবসন্ন প্রকৃতির
বিপন্ন অস্তিত্বে।
সমগ্র পৃথিবীর গায়ে
বারুদ প্রসাধনী
মানবিক হিংস্রতা ও
মানসিক
লিখছি চির অসহায়
মৃত্যুময় জীবনী,
সঙ্কীর্ণতার জানালায়
আজ প্রায়
শূণ্যচিত্ত, ঝলমলে পর্দায়
নিঃসঙ্গতা
আপনমনে ছবি আঁকছে -
একের মৃত্যু ভাইরাস
স্বগর্বে
অন্যের ও সক্কলের
যোগ্য হয়েছে,
আমার তোমার জরাজীর্ণ
মন-দর্পণ
পরিচ্ছন্ন হয়ে
আমাদের চাইছে।
এভাবে তুমি ও আমি
এবং আপামোর
এখনো হয়তো নাবুঝেও
বুঝছি
আপন হবার মহত্ত্বে
সুর বেঁধেছি।
৫.
এখন লক ডাউন -
পৃথিবীর সবুজ আঁচলের
শান্তি ভুলেছি
সুখ-সমৃদ্ধির সুভাষে
সুভাষিত হয়ে
অপরের দৈনতাকে
দুর্গন্ধ ভেবেছি,
আত্মসুখের দালানে
একাই
যে যার মত করে, স্বঘোষিত
প্রজাহীন রাজা হয়েছি
-
আরো একা হয়েছি, নিজেকে নিয়ে
রোজ নামচায় শুধু
নিজের কথা লিখছি
সেভাবেই আমরা আজ
ঘরবন্দি
একা,সুখি একা,সুখ মুখে মাখছি।
একাকীত্বের অবসাদ
অহমিকা হয়ে
অন্যরূপে ভ্রমের
চোরাবালিতে -
এগিয়ে চলেছে
যুগান্তের মরুতে।
একরোখা আমিতে
অন্ধবিন্দু
বিরাট কালের বুকে
ভাষা হয়ে উঠছে,
স্বাচ্ছন্দ্য আর
বিলাসিতার অর্ঘ্যে
নিরলস সুখ প্রয়াস
নিঃসঙ্গতা হয়ে
নিজের ছায়াকে
অস্বীকার করছে,
একাকীত্বের মায়া
রক্তে দিচ্ছে মাদক -
এভাবে বাতাস হবে
বিবাগি
সেও খুজে নিবে আরেক
"করোনা "-
নিজেই হবো নিজের
অভিশাপ
অনিত্য জীবন এসে
দাঁড়াবে সম্মুখে
বলবে হয়ত,আমি আর পারছিনা।