শম্পা রায় বোস
ইচ্ছে
আমি তখন
কুঁড়ি ফোটা সদ্য যুবতী। বৃষ্টি দেখে আকাশ টাকে বুকে টানতে ইচ্ছে করে। রামধনুর সাত
রঙে ভেজা মনটা,
তখন
হলুদ রোদ্দুর হয়ে তোমার বুকের নদী হতে চায়। ইচ্ছে করে তখন ফাগুনের কমলা রঙে দোল
খেলি। শুধু তোমার কাছেই যাই। তোমার দেওয়া গোলাপি রং এ শরীর দোলে। সিঁথি তে পরিয়ে
দেওয়া তোমার লাল রঙের আগুন হাতছানি,,, সব নিষেধাজ্ঞা ভুলে সর্বনাশের নিষিদ্ধ খেলায় মেতে উঠতে
চায় মন। তখন আমার বুকে ঘাড়ে পিঠে তোমার নিঃশ্বাসে আসমানি রঙ। আমার নীল ঠোঁটে তখন
সেখানে শুধু তুমিই। বুকের ভেতর আলতা রঙে তোমাকে খুঁজে পাই।। আমি তোমার মনে পলাশ
মাখিয়ে দিই । ভালবাসার শরীরে তখন সবুজ কিশলয়ের দোল । সদ্য জাত প্রেমের উত্তাপে
উন্মত্ত হয়ে উঠি। এক টুকরো মায়াবী রোদ তোমায় আদর করে। তোমার মধ্যে তখন মধ্য রাতের
শিউলির গন্ধ। লুকোনো চুম্বন, কিছু অভিমান, আড়মোড়া ভেঙে মিঠে রোদ্দুর হতে চায়। কড়ি মধ্যমের
মূর্ছনায় নেমে আসে এক অনামী আদর সন্ধ্যা। শেষ বিকেলের মরা হলুদ আলোটুকু নিয়ে ইমনের
সুর ধরা পঞ্চমের বুকে তখন ভালোলাগার সারেঙ্গি বাজে। ইচ্ছে হয় তখন আরও কিছুটা সময়
শুধু তোমাকেই ভালবাসি অনিকেত দা। আরও কিছুটা সময় তোমার উত্তাপে সেঁকে নিতে ইচ্ছে
করে আমার ঘর গেরস্থালির শ্যাওলা রঙা স্যাঁতসেঁতে জীবন। শিউলি হয়ে ফুটে থাকতে ইচ্ছে
করে শুধু একটা ঝকঝকে ভোরের অপেক্ষায়। প্রতিশ্রুতির নীল চাদর বিছিয়ে অপেক্ষায় থাকি।
আমার আর সর্বনাশী হয়ে ওঠা হয় না।
আমার তুমি
পরের
জন্মে তুমি আমার একার হবে। আমার তুমি, ঘুম চোখেই খুঁজবে শুধু আমাকেই। ছুঁয়ে থাকবে
ভালোলাগার প্রতিটি বাঁক, আমার মনে জিইয়ে রাখা গোপন অভিমানে হাত রাখবে অকারণেই।
তোমার এলোমেলো খুনসুটি, ছুঁতে থাকবে আমার বিষাদের আঁকিবুকি। আমার অমলতাসের
স্টেশন ছটফট করবে শুধু তোমার ওম এর অপেক্ষায়। ছোঁয়ার তো কোনও কারণ লাগে না অনিকেত
দা! ছোঁয়ার কোনও সময় অসময়ও হয় না।তেমনি করা যায় না কোনও পরিমাপ। যদি কোনও দিন
শূন্যতা এসে চেপে ধরে, আমাকে ছুঁয়ে থেক তখনও। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের যন্ত্রণায় অশান্ত তুমি
শান্ত হতে ছুঁয়ে থেক কিছুক্ষণ। এক আকাশ শূন্যতা নিয়েও আমাকে ছুঁতে পার। আসলে ছুঁতে
গেলেও তো অনেক গভীরে নামতে হয়, কতটা যে খোয়া যায় সেটাই তো বুঝলে না অনিকেত দা!
হ্যাপি
অ্যানিভার্সারি
মেয়েটি হ্যাপি অ্যানিভার্সারি
জানে না।
কিন্তু গো- বাথানে, গোবরের ছড়া দিতে
জানে।
জাবনা কাটতেও জানে।
এমন কি গায়ে মুখে হাত বুলিয়ে,
ঐ অবলা গুলোর চোখের ভাষাও পড়তে
জানে।
কিন্তু মেয়েটি হ্যাপি
অ্যানিভার্সারি জানে না।
মেয়েটি সারাদিন বাগানে পাতা ফুল
তোলে,
সন্ধ্যায় ঘরে এসে বাচ্চাদের
জন্য খাবার বানায়,
হাড়িয়া খেয়ে
মরদের বুকে মাথা রেখে পূর্ণিমার
চাঁদ দেখে,
ঝকঝকে সাদা পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে
চাঁদটা
কেমন টুপ করে উঠে পড়ে।
কিন্তু না। এই মেয়েটি ও হ্যাপি
অ্যানিভার্সারি জানে না।
আষাঢ়ের কোন সন্ধ্যায়,
ভাঙা বাক্সে রাখা বিয়ের ঐ লাল
শাড়িটা,
সকলের আড়ালে, লুকিয়ে বার করে, হাত বোলায়,
চোখ বন্ধ করে গন্ধ শোঁকে।
বিয়ের রাতের সেই গন্ধটা খোঁজে।
বুকে চেপে ধরে মনে করতে চায় সেই
দিনটার কথা।
কিন্তু সেও হ্যাপি
অ্যানিভার্সারি বোঝে না।
নেশায় আচ্ছন্ন,, মাতাল স্বামীর গুম
করে পিঠে কিল খেয়ে,
দাঁত চেপে দম বন্ধ করা বুকের
যন্ত্রণা সহ্য করে,
এক বুক অভিমানে,হাসি মুখে,
মুখের সামনে ভাতের থালা ধরা সেই
মেয়েটি ও জানে না
হ্যাপি অ্যানিভার্সারি র কথা।
হাড় জিরজিরে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে
থাকা অভাবের সংসারে,
এক ঘরভর্তি কিলবিল করা, উপোসী গুলোর জন্য,
ভাত রাঁধতে রাঁধতে, দূরের কোনও বাঁশির
শব্দে ধড়ফড়িয়ে ওঠে।
উঠোনে পড়া থাকা পলাশ ফুল খোঁপায়
গুঁজে,
পারা বের করা আয়নায় মুখ দেখে।
দাঙ্গায় নিখোঁজ স্বামীর মুখটা
মনে করা সেই মেয়েটিও কিন্তু
হ্যাপি অ্যানিভার্সারির কথা
শোনে নি।