বৃহস্পতিবার, ২১ মে, ২০২০

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়


হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

মধ্যরাতের সংলাপ

(ছয়)

আমরা যে এখন চোখের সামনে আমাদের দেখতে পাচ্ছি, এটা ঘন্টা মিনিট সেকেন্ডের ব্যাপার নয়, আমরা সবাই একসঙ্গে দেখেছি তারা আমাদের চোখের সামনে দিয়ে দলবেঁধে হেঁটে যাচ্ছে, এটা একদিন দুদিনের দেখা নয়, একটা মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পৌঁছাতে যত সময় নেয় তার থেকেও অনেক অনেক বেশি সময় আগে, এত সময় নিয়েও ঠিক ঠিক সাজাতে পারে নি, কেউ আগে চলে গেছে, কেউ গেছে অনেক পরে, এটাই তো স্বাভাবিক, কিন্তু লড়াই লেগেছে গতি নিয়ে, সবকিছু প্রতিযোগিতায় স্থানান্তরিত হয়ে গেছে, এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে কতকিছু শেখার ছিল, আরও কত কত এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা তৈরি হয়ে যেত, থামিয়ে দিতে উড়িয়ে দিতে সব শক্তি ছেড়ে চলে গেছে আমাদের







(সাত) 

শুরুর শুরু হয়, সেই শুরুরও একটা শুরু হয়, মানে একটা নদী, আমাদের চারপাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে, একটু একটু করে আমাদের সবটুকু জল তাতে পড়েছে, এই নদীর বাড়ি কোথায়, বাড়িতে কে কে আছে, তাদের কত কত অংশ জল নদীর মধ্যে আছে, যারা দেখেছে তারা তো এখন পাখি হয়ে উড়ে গেছে, সেই পাখিরা যারা নদীকে বছরের পর বছর গান শুনিয়ে বাইরে এনেছে, নদীর কথা জলের কথা পাতায় ধরা আছে, সেইসব পাতা কোথায় সেটাই তো কেউ জানে না, হয় উড়ে গেছে আর না হয় পুড়ে গেছে, অথচ পাতা ছাড়া তো শুরু হবার নয়, তবুও শুরু, আস্তে আস্তে সরু, একসময় ছিঁড়ে যায়








 (আট)

একটা চেয়ারের দুটো হাতল পৃথিবীর দুপ্রান্তে বিশ্রামঘরের মতো অপেক্ষা করছে, চারটে পায়া পৃথিবীর চার জায়গায় বসানো, চার পৃথিবী মানুষ সেখানে চাপা পড়ে আছে, বসার ওই জায়গাটুকু নয় ------ ওটা বিশাল প্রান্তর, ওটা একচেটিয়া অধিকারের সংজ্ঞা, চেয়ারের দিকে তাকিয়ে আছে যতজন তার থেকে কোটি কোটি গুণ বেশি মানুষ চেয়ারের নিচে চাপা পড়ে আছে, চেয়ার বসার নয়, চেয়ারে বসা যায় না, চেয়ার দেখার, দেখা হয়ে গেলে নেমে আসে, কেউ কেউ ছবি তোলে, ছবির গুণমান অনুযায়ী সেগুলো কয়েকদিন থাকে, চেয়ার থেকে যায়, নিজস্ব কক্ষপথে ভারসাম্য বজায় রেখে ছুটে চলার জন্যে