শীর্ষক
বন্দ্যোপাধ্যায়
আবর্ত
রাত বুঝি বা শেষ হয়ে
এলো,
পূব আকাশের রুপোলি
আঁচড়
আর একফালি চাঁদের
মরা জ্যোৎস্নার সঙ্গমে
অপার্থিব চরাচরের
ব্রাহ্মমুহুর্ত-
বুকের ভিতর হাজারো
রংমশালের আলোয়
হঠাৎ দীপাবলীর আবহ -
আমি যে প্রত্যক্ষ
করেছি হিমশীতল মৃত্যুকে-
বহুদূর হেঁটেছিলাম
সমুদ্রে... একা--
জল উঠেছিল গভীর
আশ্লেষে..
কোমর ছাপিয়ে গলা
পেরিয়ে আরো ওপরে
সমস্ত ত্বকে তার
নোনতা খুনসুটি....
তারপর এসেছিল সুনামি,
পৃথিবী নাড়িয়ে দেওয়া
প্রতিবাদী দাবানল-
ওরা ফিরে আসে বারবার
রক্তবীজের মত -
ছারখার করে দিতে চায়
সমস্ত অন্যায়ের স্রোত,
কালো পেশীর বিভঙ্গের
উন্মত্ততায় ..
তবু আমি পথ
হেঁটেছিলাম পৃথিবীর পথে সেই মাহেন্দ্রক্ষনে-
দেখেছি যোজনব্যাপি
পোড়া জনপদ,
অ্যাসল্ট রাইফেলের
বুলেট আর লাশকাটা ঘরের
পুতিগন্ধ ছাপিয়ে
বিমূর্ত হয় প্রবহমান জীবনের কলতান।
মহাপ্রলয়ের পরে
পৃথিবী সমাহিত -
রক্তপিচ্ছিল পথে
ফিরে আসে বারবার
পরিযায়ী পাখির দল
সবুজ আকাশের খোঁজে।
ভাঙন
সেদিন রাতে নদী
এসেছিল -
সারারাত অঝোর বৃষ্টি
সেদিন,
আসন্ন সর্বনাশের
আগুন নিয়ে
সে বৃষ্টিতে ঝাপসা
হয়েছিল নদী-
এপার ওপার এক
হয়েছিল দিকচক্রবালে,
ভিজে হাওয়ার শব্দে
পাভ় ভেঙেছিল বুকের ভিতর।
মা বলেছিল নদী মানে
একমুঠো জীবন-
জৈষ্ঠের দহনে ফাটা
মাঠের সুতীব্র টানটান তৃষ্ণায়,
মৃত্যুর গন্ধমাখা
চরে রক্ত,
মাংস, মেদ, মজ্জার ইশারায়
যখন অন্ধকার ডানা
ঝাপটায়-
তখনও নদী আসে
নকসিকাঁথার আঁচল
বিছিয়ে,
জীবনের গন্ধ নিয়ে।
সেদিন রাতে নদী
এসেছিল -
আকাশ ভাঙা কান্নায়
ভিজেছিল চর,
নিকষ অন্ধকারে
প্রমত্তা হয়েছিল নদী-
সে রাতে তোমাকে
স্পর্শ করেছিলাম - নদী
তবু তোমার গভীর
ঘূর্নীর অতল দহের আহ্বানে,
নরখাদকের মত তোমার
রক্তাক্ত আঁচড়ে,
আসঙ্গপিপাসু শীতল
আলিঙ্গনে,
বেপরোয়া ভালোবাসায় বিলীন
হয়েছিল জনপদ -
তুলসীমঞ্চ, নাটমন্দির, মসজিদ,
ছোট ছোট সুখ,ভালোবাসা আর
স্বপ্নের কোলাজ।
তবুও নদী তুমি চোখ
মেলে দেখো
প্রলয়ের উৎস থেকে
জন্ম নিক বিস্তীর্ণ সবুজ -
মহাতমসায় হোক আলোর
বিচ্ছুরন,
সূর্যস্নানে, মঙ্গলশঙ্খে পবিত্র
হোক পৃথিবী-
আবার তোমার কাছে যাব
নদী
ঘর বাঁধব তোমার চরে-
নিঃসঙ্গ বিকেলে
মন খারাপের নৌকা
ভাসাব তোমার জলে -
তোমার উর্বর ব-দ্বীপ,
সোনালী বালিয়াড়ী
ঋদ্ধ হবে
উৎসারিত জীবনের
উষ্ণতায়-
নদী তুমি এসো।
আলোয় ফেরা
ক্রমশ ধূসর দিন মুছে
যায়
অন্ধকারে ঢাকে চরাচর,
আদিগন্ত, অবয়বহিন
চেয়ে থাকি নির্নিমেষ
সেই অন্ধকারে
খুঁজে ফিরি অহর্নিশি
প্রানের স্পন্দন,
পৃথিবীর বুকের ভিতর
--
রাতভোর বৃষ্টির শব্দ
চিরহরিৎ উপত্যকাময়
অকাল শীতের রাতে
নিস্পত্র পর্ণমোচী
বৃক্ষ।
বিস্বাদ জীবনের
পাত্র
কানায় কানায় পূর্ণ
গরলে,
অবিশ্রান্ত উত্তুরে
হাওয়ায়
এলোমেলো জীবনের
ক্যানভাস রঙহীন বিবর্ণ তবু
খুঁজে ফিরি অহর্নিশি
প্রানের স্পন্দন, পৃথিবীর বুকের ভিতর
খুঁজে ফিরি সুপক্ক
নবান্নের ঘ্রাণ,
ঘর্মাক্ত
গুমোট
দ্বিপ্রহরশেষে ডানায় বৃষ্টির গন্ধমাখা গঙ্গাফডিং,
অনাবিল টিয়ার ঝাঁকে
দিগন্তের সবুজ ক্যানভাস --
আমি হারিয়ে যাচ্ছি
মাঝসমুদ্রে ভাসমান
দিকভ্রান্ত
নাবিকের মতো একা
জীবনের বার্তাবাহী
সীগ্যালের মতো
ইউক্যালিপটাসের
অরন্যে
বৈশাখী দুপুরে হলুদ
লাল পাতা ঝরার শব্দে--
খুজে ফিরি অহর্নিশি
প্রানের স্পন্দন
পৃথিবীর বুকের ভিতর
....