বৃহস্পতিবার, ২১ মে, ২০২০

তন্ময় ধর


তন্ময় ধর

রক্তাক্ত বসন্তের কবিতাগুচ্ছ
 
১।

পৃথিবীর এপাশে রক্ত লেগে আছে
আবার তার কাছেই নরম স্থলপদ্মের মত আলো
আমি ভিতরের আয়না বদলাই
ঘুম-না-আসা এক দ্বীপের মাঝখানে
মানুষের ছায়া নড়াচড়া করে

অনুভূতিহীন একটি ছুরি থেকে চিৎকার বেরিয়ে আসে
সামান্য রক্ত ফেলে দেয় ঈশ্বরের লিঙ্গে
দুধ-ঢালা গহন অন্ধকারে
একটি শব্দ শেষবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে
চতুর্দিকে ঈশ্বরের কঙ্কাল ও শ্বাসকষ্ট






২।

এরই ভেতর কেউ ছবি আঁকছে
মৃত ফুলে প্রাণসঞ্চার করছে নিজের শেষ শক্তিটুকু নিঙড়ে
ঢেউয়ে ভেসে আসা তীব্র শুশুকের লাফ থেকে
শক্তি ভরে নিচ্ছেন ঈশ্বর
আকাশ ঝকঝক করছে আমাদের অন্ধত্বে

ভুল বুঝতে পারা আমাদের আঙুলগুলো
খাবার এগিয়ে দিচ্ছে রক্তাক্ত পরিশ্রান্ত থালায়
আমাদের নৈঃশব্দ্যের ওপর ডাকছে ঘাইমৃগী
আমরা কিছুক্ষণ হাসতে পারছি
তীব্র শ্বাসকষ্টে মৃত্যুর আগে





৩।

ঈশ্বরকে আমাদের সাথে দাবা খেলতে বাধ্য করেছি
বাজিতে হেরে আমাদের ঘরের মজুত শস্য উধাও হয়েছে
আমরা মিথ্যে কথা বলতে বলতে
ঈশ্বরের গলা টিপে ধরেছি
মৃত্যু নিজেই এসে সরিয়ে নিয়েছে ওষুধ

সমুদ্রের অনন্ত ঢেউ আমাদের ফিরে আসার সুযোগ দিচ্ছে
অগণন পাখির ডাক আমাদের ফিরে আসার পথ চেনাচ্ছে
বিশুদ্ধ বাতাস বলছে ‘জীবন, জীবন’
ব্যথা শুরু হওয়ার আগে
আবার আমরা আগের মত হাসতে পারছি






৪।

আমাদের আনাচেকানাচে অনেক রক্ত
অবাধ্য মুখের ভিতর ভুল উচ্চারণ
নিষ্পাপ ফুল ছিঁড়ে ফেলা চঞ্চলতা
একটি মানুষ থেকে অন্য মানুষের বেড়ে যাওয়া দূরত্বে
বড়শি গাঁথা করে রেখেছি জীবন

হৃৎপিণ্ডকে হৃদয় ভেবে ভুল করা একটি মানুষ মাটি কাটছে
তুমি তার আবেগ হও, আমি ক্ষুধা
পৃথিবীর অনন্ত স্বাদের ভিতরে
আমাদের জিভে অমৃতকথা আসুক
দ্যাখো, আমাদের প্রত্যক্ষ ঐশ্বর্য্যে তীব্র জ্বলছে শুকতারা






৫।

আমাদের কল্পনায় রক্তাল্পতা খেলা করেছে
অন্যের অসুখের আঁচ থেকে সরে গিয়েছে আত্মসুখ
ক্ষুধায় দাঁড়িয়ে থাকা আমাদের প্রতিবিম্বটিকে না-দেখে
আমরা কাঁটাচামচের শব্দ করেছি
অনেক তৃষ্ণার জল ঘোলা করে সরে এসেছি 

তবু তোমার ফুলের ডালি ভরে যাচ্ছে রোজ
পাখির গান আরো সুরেলা হচ্ছে
আমার কথা বুঝতে পারছে তোমার কাহিনীকে
আমরা সেরে ঊঠছি
ফিরে আসছে আমাদের বাউলরঙ ঘ্রাণের অনুভূতিমালা