কাকলী
মুখার্জী
নদী ভেসে যায়
নীরব মায়া জড়ানো
আবেশী সন্ধ্যা,
মোহময় আবছা আলোতে
আলোকিত চারিধার!
বাতাসের মৃদু মন্দ
শব্দ আর জুঁইয়ের সুঘ্রাণ,
ছলাৎ ছলাৎ নদী ভেসে যায়....
নদীর বুকে সাদা পাল
তুলে ভাসছে তরীটি,
একজন মাল্লা, বৈঠা বেয়ে চলে,
ও মাঝির মুখ দেখা যায়না, শুধু কণ্ঠে ভাটিয়ালী
সুর!
সে সুরে স্বপ্নঘোরে নদী ভেসে যায়....
নদীর হৃদয় জুড়ে
কুলকুল শব্দ,
সব নিস্তব্ধতা ভেদ
করে বৈঠার ছপছপ!
জল কেটে যাওয়া দাঁড়
আর ঢেউ যেন চুম্বনরত!
আহ্লাদে আজ নদী ভেসে যায়.....
নদী বুঝি বলে, "ও মাল্লা
তুমি হদিস রাখো আমার
উৎসের?
কত পাহাড় উপত্যকা
অরণ্য পেরিয়ে এসেছি এ উজানে!"
মাল্লা নিরুত্তর,
আপন খেয়ালে নদী ভেসে যায়.....
সব দেশ কালের গন্ডী পেরিয়ে,
সকল ন্যায় অন্যায়ের
বাধা ডিঙিয়ে,
কাঁটাতারের বেড়া
টপকে! মনের দ্বন্দ্ব মিটিয়ে!
শুধু ভালোবেসে নদী ভেসে যায়.......
গ্রীন সিগন্যাল
সবুজ পতাকাটা নড়ছে,
শেষ ট্রেনটা চলে গেল
দূরে যেতে যেতে
মিলিয়ে গেল
বিন্দুর মতো....
স্টেশনটা এখন নির্জন
নিস্তব্ধ!
শুধু বড়ো অশ্বত্থ
গাছটার
পাতার ভিতরে হওয়া
খেলা করার শব্দ!
বুকের ভিতরের ফাঁপা গহ্বরে রক্তস্রোতের মতো!
সে স্রোত যায়
হৃদপিণ্ডের অলিন্দ নিলয় হয়ে
শিরা উপশিরার মধ্য
দিয়ে মস্তিষ্কের অজানা কোনায়!
সেখানে বাসা বেঁধেছে
সহস্র চিন্তার জীবাণু,
তাজা রক্তে তাদের
উৎসাহ বাড়ে দ্বিগুণ!
ট্রেনের জানলা দিয়ে
হু হু হওয়া
হঠাৎ উড়ে গেল সব
বিষাদ ও বাতাসের সাথে!
আর প্ল্যাটফর্মে
দাঁড়ানো মানুষটার কাছ থেকে
দ্রুতবেগে সরে
যাচ্ছে সম্পর্কগুলো
আবছা হয়ে যাচ্ছে
একাকী বিকেল!
নিস্তব্ধতা কী
পরিপূর্ণতা আনে সবসময়??
ছোঁয়া
বিষাদ আনে ফাগুন
দিনের মেঘ,
ঝড় উঠেছে মনের ভিতর
থেকে!
ক্লান্ত আকাশ ঝরবে
বলে ভাবে
বৃষ্টি ফোঁটা ভোলায়
শূন্যতাকে!!
বসন্তে এই শ্রাবণ
দিনের ছোঁয়া!
অবাক করা রাতের গল্প
বলে!!
ছলাৎ ছলাৎ মাঝির
বৈঠা বাওয়া
নদী হারায় নতুন
স্রোতকালে!!!
অন্ধকারে জ্বলতে
থাকা রাত
চায় শুধু প্রেম মায়া
আবেশ মাখা,
কবিতায় তাই বলছে
ছুঁতে তাকে
সব ভুলিয়ে হৃদয়টুকু
রাখা!!
কবির খেয়াল বারণ
শোনে কারো!!
ভাসতে থাকে আলোর
ভেলায় চড়ে,
শব্দ তুমি সত্যি
খুঁজতে পারো
স্বপ্নমাখা আবেগী
অক্ষরে?
ছন্দ ভুলে তাইতো
ছুটে যাওয়া,
ডাকছে সে প্রেম
শঙ্খচিলের ডানায়,
স্পর্শ সুখের অধিক
কিছু আছে,
বৃষ্টিগন্ধি রাতেই
যাকে মানায়....
তোমার সে হাত আমার গালে
রেখে
আলতো ঠোঁটে বলতে –
ভালবাসি,
সামান্য এই স্বপ্ন
দেখে দেখে
বারে বারে তাই তো
ছুটে আসি।
রাত মুছে যায় দেখি
সকাল হলে
আমার তুমি নেই যে
কোনোখানে!
চলে গেছ কিচ্ছুটি না
বলে
হয়ত এটাই ব্যর্থ
প্রেমের মানে।
অনুভবে
মেয়েটা বসেছিল
রবীন্দ্রসদনের
ফোয়ারাটার ঠিক ধার
ঘেষে,
আর ছেলেটা তার সামনে
দাঁড়িয়ে,
মেয়েটার হাতে
জ্বলন্ত সিগারেট!
ছেলেটা বললো "
মিতিন,এত খাস কেন?
জানিস না ওতে
ক্যানসার হয়!"
মেয়েটা অদ্ভুত
দৃষ্টিতে নির্বাক তাকালো
বড়ো বড়ো চোখ, ঘন আঁখিপল্লবের
আড়ালে,
নির্লিপ্ত ভাবে বলল
"হয় হোক,
তোর
কি! তু
ই তো আমায় আর
ভালোবাসিস না বলেছিস!"
ছেলেটা নিশ্চুপ, কি করে বলে!
ভালোবাসে!!
শুধুমাত্র ওর ভালোর
জন্যই ও কথা বলা, সে নিজেই যে......
তবু শেষ চেষ্টা করলো
ছেলেটা,
" ভালো তো বাসতাম, সেই দাবীতেই না হয়
ওটা ছাড়লি..."
মেয়েটার তীব্র স্বর, " দয়া! দয়া দেখাচ্ছিস
নাকি,
আমি চাইনা অমন
ভালোবাসা,
আমি
একা বাঁচতে জানি.."
ছেলেটার বুকে তখন
করাত কাটার শব্দ!
আর মেয়েটার বাঁদিকে
রক্ত পড়ছে চুঁইয়ে....
শীতের শেষ, বসন্ত আসছে..
মাথার ওপর প্রায়
পাতাশূন্য গাছগুলোতে
নতুন প্রাণের সঞ্চার,
কিন্তু গাছের তলায়
এখনও পড়ে আছে ধূ
সর শুকনো পাতাগুলো,
তারই একটা তুলে নিয়ে
ছেলেটা বলে,
"এটা দ্যাখ, রেখে দে, গাছটা ঝরিয়ে দিয়েছিল,
নতুন কে আনবে বলে,
তুই অন্তঃত তুলে
রাখ"
আশা মাখা চোখ তুললো
মেয়েটা,
হাতে নিল সেই বিবর্ণ
পাতাটি,
চারিদিকে বেলা শেষের
মায়াবী আলো তখন...
পাতাটার ওপর মুক্ত
বিন্দুর মতো কি পড়ল!
চোখ নামিয়ে মেয়ে বলে,
"এটা রাখলাম, তোর মনে রাখবি তো
আমায়???"